রোজায় দিনে দু’বেলা ইফতার-সেহরি খাবারে সীমাবদ্ধ মুসলমান গোষ্ঠী। সারাদিনের উপবাস শেষে সময় আসে ইফতারের।
যদিও, অন্যান্যের মতো এ রাজ্যেও মসজিদের মাইকে মাইকে উচ্চস্বরে ঘোষাণা দেওয়া হয় সেহরির সময় হয়েছে বলে। পাশাপাশি বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইল বা ডিজিটাল ঘড়ির অ্যালার্মতো আছেই। তারপরও রাজ্যটিতে রাস্তায় রাস্তায় ঢোল পিটিয়ে রোজাদারদের সেহরির সময়ের জানান দেওয়া কাশ্মীরের প্রথা বললেই চলে।
শতাধিক বছর ধরে রোজার সময় শেষ রাতে কাশ্মীরে গলায় ঢোল ঝুলিয়ে রাস্তায় নামেন অনেক ‘সেহেরিখানা শব্দকর’। এসময় তারা লাঠি দিয়ে ঢোলে আঘাত করে উচ্চশব্দ সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি মুখেও বলেন, ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, সেহরি খাওয়ার সময় হয়েছে বলে।
প্রায় নয় বছর ধরে রাজ্যটিতে ঢোল পিটিয়ে সেহেরি খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন মোহাম্মদ রফিক ওয়ানি নামে ৪১ বছর বয়সী এক ‘সেহরিখানা শব্দকর’। তিনি স্ত্রী-সন্তান, মা ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরের পাম্পোর শহরের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন। ওই শহরটিতে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঢোল পিটিয়ে রোজাদারদের ঘুম ভাঙানোর চাকরিটি করতে চান।
প্রতি রমজানে রফিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এ কাজটি করেন। এ কাজে যোগ করেছেন রফিক তার এক পড়শি ভাইকেও। রাতে ঘুম ভাঙানোর উদ্দেশ্যে ঢোল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়াটা তাদের কাছে একটি সেবামূলক কাজ।
রফিক বলেন, গভীর রাতে পাম্পোর শহরের পরিবেশ ভঙ্গুর ও নীরব-নিস্তব্ধ থাকে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল থাকে রাতে। মাঝে মধ্যে রাতে শহরে ঘুরে বেড়াতে অনকে ভয় হয়। তারপরও আমি এ চাকরিটি করি। কেননা আমার সন্তানরা এ উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি এও বলেন, শেষ রাতের নীরব পরিবেশে ঢোলের শব্দেই সবার ঘুম ভাঙে। এতে রোজাদাররা উপকার পান। তাতে আমাদেরও অনেক উপার্জন হয়। আমার মতো শত শত ‘সেহরিখানা শব্দকর’ রয়েছেন, যারা ভালো উপার্জনের আশায় রমজানে তাদের প্রত্যেকের স্থানীয় এলাকায় এ কাজটি করেন।
প্রায় ২২ বছর ধরে কাশ্মীরের শ্রীনগর শহরতলীতে রমজানে রোজাদারদের ঘুম ভাঙানোর এ কাজটি করছেন আব্দুল সামাদ লোন নামে ৪৭ বছর বয়সী এক ‘সেহরিখানা শব্দকর’। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকা লোলাবে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
আব্দুল সামাদ বলেন, আমি এ কাজটি খুব ছোটবেলা থেকেই নিয়েছিলাম। এ শহরেই আমি বড় হয়েছি। ওই এলাকার মানুষ আমাকে খুব বিশ্বাস করে। এখানে আমি এ কাজটি করে পারিশ্রমিক হিসেবে চাল-চিনি পাই।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ এর দশকে এখানে রাতে কাজ করতে খুব ভয় হতো। তাই ‘সেহরিখানা শব্দকর’ কমে গিয়েছিল। এখন সে বিপদ অনেকটা কেটে গেছে।
সামাদ হাসিমুখে বলেন, আমি মজুর হিসেবে রমজানে এ কাজটি করি। পাশাপাশি বছরের বাকি সময়টুকুতে একটি মসজিদের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করি। এতে আমাকে অনেকেই নগদ টাকা, চাল ও চিনি দেন। তবে রমজানে আমি অনেক আশা নিয়ে থাকি। কেননা গত রমজানেও আমি প্রায় ৬০০ কেজি চাল উপার্জন করেছিলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
টিএ/এএ