ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

৮ হাজার মসজিদে তারাবি হয় রাশিয়ায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
৮ হাজার মসজিদে তারাবি হয় রাশিয়ায় রাশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়। ছবি: সংগৃহীত

শীতের দেশ রাশিয়ায় প্রায় দুই কোটি মুসলিমের বসবাস। রাশিয়ার রোজাদারদের বেশ কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয় রমজান মাস। কারণ ভৌগলিক কারণে রাশিয়ার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়সূচি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের চেনা-জানা নিয়মের চেয়ে বেশ ভিন্নভাবে ঘটে। হিজরি ১৪৩৯ রমজানে (২০১৮ সাল) রোজা রাখতে রাশিয়ানদের না খেয়ে থাকতে হচ্ছে গড়ে প্রায় ১৯ ঘণ্টারও বেশি। 

বছরের এই (মে-জুন) সময়টাতে মস্কোতে ফজর শুরু হয় স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে। অর্থাৎ, এই সময়ের মধ্যেই সেহরি খেয়ে নিতে হবে।

আর সূর্য উঠতে উঠতে বেজে যায় প্রায় বিকেল পৌনে ৯টা।  

প্রায় ১৮-১৯ ঘণ্টা একফোঁটাও পানি না খেয়ে থাকার মাধ্যমে গরিব-দুঃখীর অনাহারে থাকার কষ্টটা অনুভব করতে পিছপা হন না রাশিয়ার ধর্মপ্রাণ মুললিমরা। সবার মনের মধ্যে থাকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের সংকল্প।

রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশই মুসলিম ধর্মালম্বী। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে পোভোলঝি ও উত্তর কাকাসাস উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া রাজধানী মস্কোতেও মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কম না। রাশিয়াজুড়ে মসজিদের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। আর রমজান মাসে দেশটির প্রতিটি মসজিদেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তারাবি, ইফতার, মিলাদ ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।  

১৮-১৯ ঘণ্টা না খেয়ে থাকা খুবই কঠিন একটি কাজ। এজন্য গর্ভবতী নারী, শিশু ও অসুস্থদের রোজা রাখাতে বারণ করা হয়। যারা রোজা রাখতে পারেননি, তাদের দেখা যায় গরিব-দুঃখীদের মধ্যে খাবার বিতরণ ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে।
রাশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়।  ছবি: সংগৃহীত
রমজান মাসে খাওয়ার মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো বরাদ্দ থাকে রাশিয়ানদের জন্য। তাই এসময় খাদ্যতালিকায় চেচনিয়ান খাবারকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। রাশিয়াজুড়ে চেচনিয়ানদের রান্নার রয়েছে বিশেষ সুখ্যাতি। এটা একইসঙ্গে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিসমৃদ্ধ, সহজলভ্য ও ঐতিহ্যবাহী। চেচনিয়ার একটি জনপ্রিয় প্রবাদ হলো, আপনি যদি তিনজনের জন্য রান্না করেন, তবে চতুর্থজনেরও উদরপূর্তি হয়ে যাবে।

চেচনিয়ার খাবারগুলোতে মসলার ব্যবহার কম। এসব রান্নায় আটা, ময়দা, পনির, দুধ, সবজি ইত্যাদির ব্যবহার বেশি। ভেড়া, গরু বা ছাগলের মাংস দিয়েও তৈরি হয় নানা পদের মজাদার খাবার।

রমজান মাসে সব বয়সের রাশিয়ান মুসলিমরা কোরআন খতমের চেষ্টা করেন। যারা কোরআন পড়তে জানেন না তারা অন্যের তেলওয়াত শোনেন। কোরআন তেলওয়াত করে শোনানোর জন্য মসজিদের ইমামকে বিশেষ সম্মানি দেওয়া হয়।

ইসলামের এসব ঐতিহ্যগত প্রথা ছাড়াও রাশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে রমজান উপলক্ষে কিছু নিত্যনতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত তাতারস্তানের কিছু এলাকায় এ মাসে অ্যালকোহল খাওয়া ও বেচাবিক্রি নিষিদ্ধ। সমাজের অসহায়দের জন্য সংগ্রহ করা হয় তহবিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কাজানে রয়েছে ধনী-গরিব সবাই একত্রে ইফতার করার রেওয়াজ।

রাশিয়াতে মে-জুন মাসের দিনগুলো অনেক দীর্ঘ হলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঘটে ঠিক তার উল্টো। তখন সেহরি ও ইফতারের মধ্যে ব্যবধান নেমে আসে ৭-৮ ঘণ্টায়, কোনো কোনো অঞ্চলে আরও কম। তবে এসময় গোটা রাশিয়া ঢেকে যায় তুষারে, নেমে আসে কন কনে ঠাণ্ডা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
এনএইচটি/এএ
...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।