মসজিদে বসে জামাতের সঙ্গে ইফতার মুসলিম বিশ্বে আজকের নয়। সেই আদিকাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবে ইফতার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় ইফতার আয়োজন করা হয় এ মসজিদে। প্রতিদিন ৩৫ হাজারেরও বেশি রোজাদার বিনামূল্যে ইফতার করেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে করা আধুনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটিতে। উপসাগরীয় অঞ্চলের সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ১৯৯৬ সালে ৩০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল বিশাল শেখ জায়েদ মসজিদ। এমনিতে ওই মসজিদে জুমার নামাজ বা ঈদের জামাতে প্রায় ৪২ হাজার মুসল্লির জায়গা হয়। সে হিসাবে প্রতিবছর রমজান এলে এতো সংখ্যক রোজাদারেরই ইফতার আয়োজন করা হয় মসজিদটিতে।
খ্যাতিমান শেখ জায়েদ মসজিদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় ইফতার জামাত। মসজিদটিতে সূর্যাস্তের আগমুহূর্ত থেকেই শুরু হয় রোজাদারদের আগমন। একে একে ভরে ওঠে মসজিদের সর্বপ্রান্ত। ধনী-গরিব ভেদা-ভেদহীনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। এমনকী বিনামূল্যের খাবার হিসেবেও সংকুচিত হন না রোজাদাররা। পরে ইফতারের সময় হলে সবার মধ্যে সুষম বণ্টন করা হয় খাবার বাক্সসহ নানা পানীয়।
জানা যায়, এ মসজিদের ইফতার আয়োজনে প্রতিদিন ব্যবহার করা ১২ টন মুরগির মাংস, ছয় টন ভেড়ার মাংস এবং অন্য দ্রব্যাদি যেমন চাল, সবজি, টমেটো ও পেঁয়াজ মিলিয়ে ৩৫ টন। আর এতো বড় আয়োজনে শেফ ও রান্নার সহকর্মীদের তালিকাও অনেক দীর্ঘ। তাদের পরিশ্রমও সীমাহীন। ইফতার আয়োজনটি সফল করার জন্য প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা ক্লাব এবং হোটেলের প্রায় এক হাজার কর্মী। এ ইফতার প্রস্তুতকারী দলের মধ্যে রয়েছেন ৩৫০ জন শেফ, ১৬০ জন স্টুয়ার্ড এবং ৪৫০ জন সেবাদানকারী কর্মী। তারা দেশের স্বাস্থ্যবিধি মেনে একত্রিত হয়ে প্রতিদিন ইফতার তৈরি করে আসছেন মসজিদটির জন্য।
আবুধাবির সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা ক্লাব ও হোটেলের নির্বাহী শেফ কারস্টেন গটসচাল্ক বলেন, ইফতারের এক ঘণ্টা আগে থেকে রোজাদারদের সামনে আমরা খাবারের বাক্স বিতরণ করি প্রতিদিনই। আমরা খাবারের মান উন্নত করেছি। পাশাপাশি বাক্সসহ রান্নাঘরের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার পরিবেশন করছি।
তিনি এও বলেন, ইফতারের প্রতিটি খাবার বাক্সের সঙ্গে রাখা হয়- আপেল, পানি, খেজুর, লেবুজাতীয় পানীয় ও ফলের রস। এসব বিতরণ করার জন্য দেশের রেড ক্রিসেন্টের এক হাজার ৫শ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন।
উগান্ডার ট্যাক্সি চালক থিম কাশিওজি (৩২) বলেন, ২০১৫ সালে আবুধাবিতে যাওয়ার পর শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে প্রথমবার ইফতার করেছিলাম। আসলে আমি ভাগ্যবান যে, এতো বড় একটি মাহফিলে আমার ইফতার করার সুযোগ হয়েছে। এছাড়া পুরো মসজিদটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও খুবই আরামদায়ক। জীবনে হয়তো এতো বড় সুযোগ আর নাও পেতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আবুধাবিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশের ওমর আবদুল করিম বলেন, আমার কর্মস্থল শেখ জায়েদ মসজিদের কাছে। তাই রোজা এলে প্রায় প্রতিদিনই দেশের সবচেয়ে বড় এ ইফতার আয়োজনটিতে অংশ নিই। খোলা আকাশে এখানের খাবার অনেক ভালো লাগে। তাছাড়া খাবার দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেক সুন্দর।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
টিএ/এএ