ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

রমজানের চাঁদ দেখে নাইজেরিয়ানরা আনন্দ মিছিল করে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২২ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৯
রমজানের চাঁদ দেখে নাইজেরিয়ানরা আনন্দ মিছিল করে রমজানের চাঁদ দেখে নাইজেরিয়ানরা আনন্দ মিছিল করে। ছবি: সংগৃহীত

নাইজেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। রাজধানী আবুজা। তেলসমৃদ্ধ নাইজেরিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এর পশ্চিমে বেনিন, পূর্বে চাদ ও ক্যামেরুন, উত্তরে নাইজার এবং দক্ষিণে গিনি উপসাগর অবস্থিত।

ইসলামের বিভিন্ন রীতি-নীতি পালনের ব্যাপারে নাইজেরিয়ানদের স্বকীয়তা রয়েছে। ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি তাদের মধ্যে নেই।

বেশিরভাগ বিপুল সংখ্যক নাইজেরিয়ান মুসলমান নীরবে-নিভৃতে নিয়মিত নামাজ পড়েন। অন্যসব ধর্মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে যে যার ধর্ম পালন করেন।

রমজান উপলক্ষে নাইজেরিয়ানদের আনন্দ মিছিল।  ছবি: সংগৃহীত

বরাবরের মতো নাইজেরিয়ানরা উষ্ণ আন্তরিকতায় রমজান বরণ করে। রমজানের চাঁদ ওঠার পর তারা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পুণ্য ও বরকতের মাস রমজানকে স্বাগত জানিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বের হয় এসব আনন্দ মিছিল। আনন্দ মিছিলে বিশেষ ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এমন আনন্দ-মিছিল তারা ঈদুল ফিতরের দিনও বের করে। এটা নাইজেরিয়ানদের একটি স্বতন্ত্র ঐতিহ্য।

রমজানে নাইজেরিয়ানরা দল বেধে মসজিদে যায়।  ছবি: সংগৃহীত

রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মূলত তারা রমজানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্য কিনে রাখে। সেই সঙ্গে প্রস্তুত হয় রমজানের বিশেষ আমল ও ইবাদত-বন্দেগির জন্যও। রমজানের আগেই তারা দিনে রোজা ও রাতে তাহাজ্জুদের আমল শুরু করে। রমজান মাসে নাইজেরিয়াজুড়ে এক অপার্থিব প্রশান্তি বিরাজ করে।

রমজানে নাইজেরিয়ার মসজিদে মসজিদে তাফসির আয়োজন।  ছবি: সংগৃহীত

নাইজেরিয়ার মুসলমানরা রমজানকে পুণ্য ও আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার উপলক্ষ মনে করে। রমজানে প্রত্যেকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করে। রমজানের পবিত্রতা, গাম্ভীর্য ও শিক্ষা মেনে চলতে পরস্পর উৎসাহিত করে। নাইজেরিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করা হয়। অধিকাংশ মসজিদে আসরের নামাজের পর  বিশেষ নসিহত, কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআনের তাফসির করা হয়। আবার কিছু কিছু মসজিদে এশার নামাজের পর করা হয়।

ইফতারে সামান্য পূর্বে নাইজেরিয়ান পরিবারগুলো পরস্পরে মধ্যে ইফতার বিনিময় করে। ইফতার আয়োজনে ‘হুম’ ও ‘কোকো’ নামীয় বিশেষ পানীয় তাদের পছন্দের শীর্ষে। যা গম ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। সামান্য পরিমাণে ইফতার করে নাইজেরিয়ানরা মাগরিবের নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে তারা রাতের খাবার গ্রহণ করে। এ সময়ের আয়োজনে থাকে গোশত, ভাত ও আলু। খাবার শেষে তারা চা পান করে।

নাইজেরিয়ায় একটি পারিবারিক ইফতার-আয়োজন।  ছবি: সংগৃহীত

নাইজেরিয়ার মুসলিমদের আরেকটি ইফতার সংস্কৃতি হলো, প্রতিবেশী কয়েক ঘরের লোক কোনো বাড়ির আঙ্গিনায় একত্র হয়ে ইফতার করা। এছাড়াও নাইজেরিয়ানদের কাছে রমজানে প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে, ‘আসিদা’, দাউয়্যাহ’, ‘উনজুঝি’ ও ‘লুবিয়া। ’ যা গম, আলু ও গোশতের সমন্বয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও বিশেষ জাতের সেমাই তারা খুব পছন্দ করে।

নাইজেরিয়ার মসজিদে মসজিদে ইফতার-বিতরণ কর্মসূচী।  ছবি: সংগৃহীত

ধনী পরিবারগুলো রমজানের প্রতিদিন একটি দারিদ্র পরিবারকে অতিথি করে। সারাবেলার সব প্রয়োজন পূরণ করা হয় ওই পরিবারের। প্রতিদিন এভাবে নতুন নতুন পরিবারকে অতিথি করা হয় সেখানে।  

তাবারির নামাজ আদায় করতে পুরুষরা মসজিদে যায়। শিশুরা ঘরে আলাদা জামাত করে। তারাবির নামাজ শেষে তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে যায়। এটি নাইজেরিয়ান সামাজিক সৌন্দর্য।

ছোট-বড় সবাই শরিক হয় তারাবির জামাতে।  ছবি: সংগৃহীত

মহিলারা রমজানে হরেক পদের খাবার তৈরি করে। আর যারা ধর্মীয় জ্ঞান রাখে, তারা তাদের সন্তানদের ধর্মীয় আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। আবার কোনো কোনো পুরুষ তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে করে মসজিদে নিয়ে যায়। রমজানের শেষাংশে জাকাত ও ফেতরা আদায় করে। সব মিলিয়ে বলা যায়, নাইজেরিয়ায় আক্ষরিক অর্থেই রমজান এক ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে। তাদের জীবনযাত্রায় যার প্রতিফলন দেখা যায়।

রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

লেখক: আলেম-গবেষক ও অনুবাদক

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।