জলবায়ু আয়তনের দিক থেকে কেনিয়া বিশ্বের ৪৭তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। এর আয়তন ৫৮০,৩৬৭ বর্গ কিলোমিটার।
বিশ্বে কেনিয়ার পরিচিতির অন্যতম একটি মাধ্যমই হচ্ছে তাদের এই সংস্কৃতি। আফ্রিকা মানেই যেখানে ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, সেখানে কেনিয়াও এর বাইরে নয়। দেশটির পুরো অংশ জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এদের অবস্থান।
ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে কেনিয়ার অধিকাংশ নাগরিকই খ্রিস্টান। এছাড়াও অন্যান্য ধর্মের লোকও রয়েছে। পরিসংখ্যান আকারে এর হিসাবটি হলো- প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ৪৭%, রোমান ক্যাথেলিক ২৩%, মুসলমান ১১%, প্রাচীন আফ্রিকান ধর্মাবলম্বী ও অন্যান্য ১২%। দেশটিতে হিন্দু নাগরিকের সংখ্যাও আছে অনেক। তাদের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি।
কেনিয়ায় মুসলমানদের বাস কয়েক শ’ বছর ধরে। মোমবাসার মতো উপকূলীয় শহরে তাদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ওই নগরীর প্রায় অর্ধেকই মুসলমান। কিসুমু ও নাইরোবিতেও অনেক মুসলমানের বসবাস রয়েছে। দেশিটিতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে স্বকীয়তা বজায় রেখে বাস করছে মুসলমানরা।
রমজানের প্রভাব মুসলমানদের বাড়িতে, কর্মস্থলে বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। মোমবাসার এক বাসিন্দা আসিফ আকরাম। বয়স ২৮ বছর। হালাল গোশতের ব্যবসা করেন তিনি। নগরীতে ‘রমজানের মর্মবাণী’ সম্পর্কে আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে রমজান হলো আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার একটা সুযোগ। ’ তিনি জানান, এই মাসে মুসলমানরা পরস্পরের কাছে নিজেদের মেলে ধরে।
তিনি বলেন, মোমবাসার লোকজন খুবই বন্ধুবৎসল। আপনি কেবল সেখানে যাবেন। সবাই আপনাকে আপন করে নেবে। আপনাকে চেনে না তো কী হয়েছে। সবাই আপনাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। একসাথে ইফতার করবে, একসাথে নামাজ পড়বে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী কিসুমুতে কলা বেচে দিন গুজরান করেন ফৌজা আয়শা। স্বামী নেই। তার আয়েই চলে পাঁচ সন্তান নিয়ে তার সংসার। দিন তার খুব সহজে কাটে না। কিন্তু তবুও তিনি সংযমী, পরোপকারী। তিনি জানান, ‘ইফতারের পর যা বাকি থাকে, প্রতিবেশীদের দিয়ে দেই। খাবার নষ্ট কর ঠিক নয়। খাবার অপচয় করা কুফুরি। ’
আরাফাত বিন তালেব, একটা এতিমখানায় ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। তার ইসলামি জ্ঞান এবং রমজান তার জন্য কী কল্যাণ নিয়ে আসে, সেটাই সে জানিয়েছে আল-জাজিরাকে। আরাফাতের ভাষায়, ‘আমার কাছে রমজাম নামটা একটা দিক নির্দেশনার। আমরা যদি রমজানে ভুল-ত্রুটিতে মেতে থাকি, তবে রমজানের আগেই সেসব শুধরে নেই। ’ আরাফাতের এতিমখানায় হেফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তানজানিয়া, উগান্ডা থেকেও প্রতিযোগিরা অংশ নিতে আসে। প্রতি রমজান মাসেই হয় এই আসর।
রমজান মাস কেনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে নিয়ে আসে আধ্যাত্মিকতার এক অপূর্ব আবহ। এই মাসে সব মুসলমান একাত্ম হয়। ভালো কাজের উৎসাহ জাগে সবার মনে।
লেখক: গবেষক, মুহাদ্দিস ও সাংবাদিক
রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এমএমইউ