ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আদালত

আদালত অবমাননা

ট্যানারি বন্ধ করে অব্যাহতি পেলেন তিন মালিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
ট্যানারি বন্ধ করে অব্যাহতি পেলেন তিন মালিক

ঢাকা: ট্যানারি বন্ধ করে দিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন তিন মালিক। এ বিষয়ে হলফনামা ও আগামীতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১১ এপ্রিল) এ আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।    

ওই তিন ট্যানারি মালিক হচ্ছেন- পূবালী ট্যানারিজের মাহবুবুর রহমান, রুমি লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের গিয়াস উদ্দিন আহমেদ পাঠান ও মেসার্স প্যারামাউন্ট ট্যানারিজের মো. আকবর হোসেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিন মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল। শিল্প সচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রইস উদ্দিন।

এর আগে রোববার (১০ এপ্রিল) একই বেঞ্চ তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করলেও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ও সোমবার ট্যানারি স্থানান্তরের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমাদানের শর্তে মুক্তি পান ওই তিন ট্যানারি মালিক। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন তারা। সোমবার তাদেরকে ফের হাজির হতেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সে মোতাবেক হাজির হয়ে তাদের আইনজীবী ফিদা এম কামালের মাধ্যমে হলফনামা জমা দেন তিন ট্যানারি মালিক। হলফনামায় তারা তাদের হাজারীবাগের কারখানা বন্ধ রাখাসহ আগামীতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের আশ্বাস দেন।  

রোববার সকালে আদালতের তলবে হাজিরা দিতে আসার পর ব্যাখ্যা না দেওয়ায় তিন মালিককে কোর্ট তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করার আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক তাদেরকে কোর্ট পুলিশের কাছে রাখেন।

বিকালে তাদের আইনজীবী ফিদা এম কামাল সময়ের আবেদন ও তাদের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সোমবার দুপুর একটার মধ্যে ট্যানারি সরানোর বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবেন- এ শর্তে আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
 
মনজিল মোরসেদ জানান, ট্যানারি স্থানান্তরে আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ না করায় ১০ মালিককে গত ২৩ মার্চ তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। রোববার তিন মালিক স্বশরীরে হাজির হন। তারা আদালতে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। এ কারণে তাদেরকে কোর্ট তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

বাকিদের মধ্যে মেসার্স করিম লেদারের রেজাউল করিম আনসারী, জুলেট এন্টারপ্রাইজের মো. সায়েদুল হক মাস্টার ও সালাম ট্যানারির মো. আব্দুস সালাম মারা গেছেন।

মেসার্স মাহিন ট্যানারির আবদুল ওয়াদুদ মিয়া, মেসার্স নবীপুর ট্যানারির আব্দুল ওয়াহাব ও মেসার্স এশিয়া ট্যানারির মো. মফিজ মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন হাইকোর্ট।

বাকি একজন রানা লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের আরেফিন সামছুল আলামিন বিদেশে রয়েছেন। এ কারণে তাকে আগামী ০৩ মে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

দীর্ঘদিন ধরে ওই আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় অন্য এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দেন।

সরকারপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।

কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও স্থানান্তর না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করেন পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মনজিল মোরসেদ।

এ মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

পরে গত বছরের ২১ এপ্রিল আদালতের তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন  শিল্প সচিব।

এরপরও ওই দশ প্রতিষ্ঠান হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগে আরও একটি আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ।

এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১১ আগস্ট হাইকোর্ট দশ কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এ রুলের পর দশ মালিককে তলব করে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২১ মার্চ আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ। ২৩ মার্চ এ আবেদনের শুনানি শেষে ব্যাখ্যা দিতে আদালত ১০ মালিককে ১০ এপ্রিল তলব করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।