ঢাকা: ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট না হওয়ায় বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বিচারকদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা করা সংক্রান্ত শুনানিতে সোমবার (০৭ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে নয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের নির্দেশনার আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো।
এরপর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত খসড়া বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
সুপ্রিম কোর্ট ওই বিধি সংশোধন করে দেন এবং ০৬ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সরকার গেজেট জারি না করে সোমবার আট সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন জানায়।
এ আবেদন দেখে আদালত বলেন, ‘আবেদনে দেখা যাচ্ছে, বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন। কবে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন সেই দিনক্ষণও উল্লেখ নেই। এটা কি ধরনের আবেদন? এর আগে আপনি (আইন মন্ত্রণালয়) একটি খসড়া পাঠিয়েছিলেন। আমরা তা সংশোধন করে দিয়েছি’।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের আট সপ্তাহের সময় প্রয়োজন’।
আদালত বলেন, ‘আপিল বিভাগের সর্বশেষ নির্দেশনার পর আড়াই মাস চলে গেছে। এখনো গেজেট করতে পারেননি। হলফনামায় রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন। কবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করলেন, কি হলো কিছুইতো নেই। বিধিমালার খসড়া রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। দুই মাস আগে দিয়েছিলাম। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হলো!’
‘আমরা বলেছিলাম, গেজেটের কথা। আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে বিচারকরা শৃঙ্খলার বাইরে চলে যাচ্ছেন। কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না’।
‘একজনতো রাষ্ট্রপতির কাছে অভিসংশন চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। একজন অতিরিক্ত জেলা জজ রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেন, সাহস কতো?’
আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘আপনি না পারলে সারেন্ডার করুন, আমরা দেখছি। আপনাদের আবেদন ফলস স্টেটমেন্ট। কবে এবং কখন রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিধিমালা পাঠিয়েছেন আজ সাড়ে ১১টার মধ্যে আদালতকে অবহিত করুন’।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি (আইনমন্ত্রী) তো দেশের বাইরে। তিনি না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যাবে না। আমাদের ৮ সপ্তাহের সময় প্রয়োজন’।
আদালত বলেন, ‘আট দিনও দেবো না। একটা শব্দ বাদ দিতে বললাম, ৫ বছরে পারলেন না। ১৪ বছর পার হয়ে যাচ্ছে আসল জিনিস বাস্তবায়ন হচ্ছে না’।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হবে, এটা হবে’।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) যদি ধরে নেন, রাষ্ট্র আবেদন করলেই আদালত তা মঞ্জুর করবেন, সেটি খুবই দু:খজনক। এর মধ্যে দু’বার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে’।
আদালত আরও বলেন, ‘একটা বিভাগ জিম্মি হয়ে থাকবে, এটা কি ধরনের কথা। একজন বিচারককে হাতে-নাতে ধরে ফেললে তখন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের কথা বলে, তা সেখানে পাঠাবে। এভাবে বিচার বিভাগ চলবে?। কতদিন অপেক্ষা করবো?’।
আদালত বলেন, ‘নিম্ন আদালতের ১৭০ জন বিচারকের এজলাস নেই। তারা এজলাস ভাগাভাগি করে বিচার কাজ পরিচালনা করছেন’।
এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেন, ‘আমরা দুই সপ্তাহের সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে গেজেট প্রকাশ করুন’।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়’।
এরপর আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে সরকারকে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল আরো চারদিনের সময় চান।
আদালত এ আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘এটাই শেষ সময়। আর কোনো সময় দেওয়া হবে না’।
** ২৪ নভেম্বরের মধ্যে বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির গেজেট চান আদালত
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
ইএস/এএসআর