বিধিমালার গেজেটে এমন উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট গ্রহণ করে আপিল বিভাগের আদেশে পর বুধবার (০৩ জানুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির ব্যাপারে ইতিপূর্বে আমরা সময় নিয়েছিলাম।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত স্পষ্টভাবে দেখেছেন যে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের ব্যাপারে অনুসন্ধান, তদন্ত, শাস্তি প্রদান, আপিল এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সু্প্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিধান রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা যদি রাষ্ট্রপতি বা আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে মতে কোনো অমিল হয়, চাকরি বা অপসারণের ক্ষেত্রে তাহলে সুপ্রিম কোর্টের মতামতই প্রাধান্য পাবে বলেই উল্লেখ করা আছে।
মাহবুবে আলম বলেন, এটা নিয়ে অনেকে নানা রকম কলাম লিখছেন বা একটা টকশোতে বলছেন সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এই রুলসটা পড়লেই বোঝা যাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের বিধান রাখা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাজদার হোসেন মামলায় এটি কন্টিনিউয়াস ম্যান্ডামাস। যদি মাজদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো রকম মত দ্বৈততা দেখা দেয় বা কোনো রকম ডেট লক ক্রিয়েট হয়, সেক্ষেত্রে আবার এই মামলায় তারা নির্দেশ দেবেন। যেটাকে বলা হয় কন্টিনিউয়াস ম্যান্ডামাস। অর্থাৎ নতুনভাবে কোনো কিছু আর দায়ের করতে হবে না। এই মামলাতেই বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনে তারা আদেশ দিতে পারবেন। এজন্যই বলেছেন ফর দ্যা টাইমবিং। কিন্তু আমাদের রুলস গ্রহণের বিষয়ে টাইমবিং অ্যাপলিকেবল না। এটা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে যে বিরোধ বা বিতর্ক সেটার কি অবসান ঘটলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। যেহেতু এই রুলসটা সন্তুষ্ট হয়ে আদালত গ্রহণ করেছে।
২০১৬ সালের ২৬ আগস্টের রাষ্ট্রপতি নিয়ে এক মন্তব্য আদালত এক্সপাঞ্জ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট একটা আদেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছিল ১১৬ অনুচ্ছেদের বিষয়ে। সেটাই আমরা বলেছিলাম, এটা অপ্রয়োজনীয়। তার কারণ রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে। সে অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলেই রাষ্ট্রপতি এদের অপসারণ এবং এদের বিষয়ে নানা রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং আদেশ দিয়ে থাকেন। সেই আদেশ রাষ্ট্রপতিই দেবেন কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন হবে।
এ মামলায় আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, নিয়ন্ত্রণ বিধি যেটা আজ অ্যাটর্নি জেনারেল আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেছেন সেটা সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। যেটা কর্ম বিভাগের জন্য প্রযোজ্য এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে যে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে, সেটি রিট করবার চিন্তা আমাদের ছিল।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যদি আপিল বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগের অধীনে মন্ত্রণালয় থাকতো তাহলে সেটা সঠিক হতো। আমাদের আদি সংবিধানে সেটাই ছিল। এখন উনারা (আপিল বিভাগ) যে আইনগুলোকে অনুমোদন করে দিলেন, সে সব বিষয় চ্যালেঞ্জ করে রিট করার ইচ্ছা ছিল, সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন করার কারণে সেটা আর সম্ভব হবে না।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
ইএস/এসএইচ