বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে নীপার দাফন সম্পন্ন করতে হবে।
আদালতে লাইজু ওরফে নীপা রানীর বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার। আর নীপার স্বামী অর্থাৎ লাইজুর বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা।
নীপার বাবার আইনজীবী সমীর মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, নীপার আত্মহত্যার পর ছেলের বাবা আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় পুত্রবধূ নীপার মরদেহ মুসলিম রীতিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত ছেলের বাবার পক্ষে রায় দেন।
‘এরপর মেয়ের বাবা নীলফামারীর আদালতে আপিল করেন। আপিলের পর নীলফামারীর আপিল আদালত রায় দেন মেয়ের বাবার পক্ষে। পরবর্তীতে ছেলের বাবা ওই রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ’
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ছেলের বাবার পক্ষে রায় দিয়ে বলেছেন-আদালতের আদেশ পাওয়ার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মুসলিম রীতিতে নিপার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে হবে। এ সময় মেয়ের বাবা চাইলে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন এবং মেয়েকে দেখতে পারবেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আইনি দ্বন্দ্বে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে নীপা রানীর মরদেহ।
ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে মরদেহ নিয়ে এমন আইনি লড়ায়ে জড়িয়ে পড়েন ছেলে ও মেয়ের পরিবার। মামলাটি বিচারিক আদালত ঘুরে দীর্ঘদিন পরে হাইকোর্টে আসে।
রমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নীপা রানী রায়ের সঙ্গে একই উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমাউন ফরিদ লাইজু ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
এরপর ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে বিয়ে করেন তারা। নীপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হোসনে আরা ইসলাম নাম ধারণ করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে লাইজুকে বিয়ে করেন। এরপর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন তারা।
কিন্তু মেয়ের পরিবার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর লাইজুর বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন মেয়ের বাবা অক্ষয় কুমার রায়।
এ মামলায় লাইজুকে কারাগারে যেতে হয়। আর নীপাকে রাজশাহীতে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার পরিবার।
পরে লাইজুও জেল থেকে বের হন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হুমাউন ফরিদ ওরফে লাইজু ইসলাম বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। স্বামীর শোকে নীপাও একই বছরের ১০ মার্চ বাবার বাড়িতে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন।
পরে ওই বছরের ১১মার্চ নীলফামারী জেলা হাসপাতালের মর্গে নীপার মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ওইদিন নীপাকে পুত্রবধূ দাবি করে মুসলিম রীতিতে দাফনের জন্য আদালতে মামলা করেন লাইজুর বাবা জহুরুল ইসলাম।
একই দিন আবার নীপার বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্রে সৎকারের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটুট থাকায় ডোমার থানা পুলিশ আদালতে ১২ মার্চ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
কিন্তু ছেলে ও মেয়ের বাবার মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান না পর্যন্ত নীপার মরদেহ রমেক হাসপাতালের হিমঘরে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর মামলাটি নিম্ন আদালত ঘুরে উচ্চ আদালতে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৮
ইএস/এমএ