উচ্চ আদালতে রিটকারী আইনজীবী মনে করছেন, ভারতের আদালতের রায় রিভিউ ছাড়া বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ছাড়া মুক্ত হতে বাদল ফরাজির আর কোনো গতি নেই। কাছাকাছি মত, সুপ্রিম কোর্টের অপর এক আইনজীবীরও।
তার ভাষ্য মতে, যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে রিভিউ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে মুক্ত হওয়া ছাড়া বাদল ফরাজির আর কোনো গতি নেই। এছাড়া রিভিউয়ের একটি সুযোগও রয়েছে। অন্যথায় সাজার মেয়াদ পূরণ করেই কারামুক্ত হতে হবে বাদলকে।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, বাগেরহাটের মোংলা বন্দর এলাকার আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে বাদল। টিএ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পাস বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখবে।
এমন ইচ্ছায় ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরই সেখানকার একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে বিএসএফ।
হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।
২০০৮ সালে ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু দুইজনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ।
পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির সাকেট আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে।
বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলেই কাটাতে হয়েছে বাদলকে।
পরে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় বাদলকে চলতি বছরের ৬ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এর দুইদিন পর তার মুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। যেটি ১১ জুলাই উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়।
এখন তাহলে বাদলের মুক্তির পথ কি এমন প্রশ্নে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, আমরা গণমাধ্যমের তথ্য থেকে রিট করেছিলাম। কিন্তু পরে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের দেওয়া নথিতে দেখা গেলো রায়ে তার বাগেরহাটের ঠিকানা রয়েছে। ভারতের আদালত বিষয়গুলো কনসিডার করেছেন। এখন তার জন্য তিনটি পথ খোলা আছে।
‘এক. ভারতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা। দুই. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিন. বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে ভারতে ক্ষমা চাওয়া। এছাড়া আর কোনো পথ নেই। ’
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, যদি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বাদল ফরাজির বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়, তাহলে সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। আর তা না হলে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এছাড়া বাদল ফরাজির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। অন্যথায় তার যাবজ্জীবন সাজার মধ্যে ১০ বছর খেটেছেন এবং এই সাজার বাকি অংশ তিনি বাংলাদেশের জেলে খাটবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
ইএস/এমএ