কুমিল্লার আদালতে ছুরিকাঘাতে আসামি নিহত হওয়ার পর বিচারকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত চেয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এ আদেশ দেন।
১৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌসের আদালতে মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট সংঘটিত আবদুল করিম হত্যা মামলায় (মামলা নং-১৩) আসামি আবুল হাসান (২৫) ও ফারুক হোসেন (২৭) হাজিরা দিতে আসেন।
আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলার সময় ওই হত্যা মামলার আসামি আবুল হাসান হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তার সহযোগী আসামি ফারুক হোসেনকে ছুরিকাঘাত করেন। ফারুক দৌড়ে বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে আশ্রয় নিলেও হাসান ওই কামরায় গিয়ে ফারুককে আবারও উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করেন। এতে ফারুক মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় আদালতের পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা হাসানকে ধরে ফেলেন।
গুরুতর আহত ফারুককে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কুমেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফারুক মনোহরগঞ্জের অহিদ উল্লাহর ছেলে এবং হাসান লাকসাম উপজেলার ভোজপুর গ্রামের শহীদুল্লাহর ছেলে। দু’জন সম্পর্কে আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই।
এ ঘটনায় সারাদেশের বিচারকদের নিরাপত্তা চেয়ে রিট করেন এক বিচারকের স্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদালত বলেন, কুমিল্লার পর গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বারেও ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় কোর্টে আইনজীবী, জাজ ও কর্মকর্তাদের সিকিউরিটির জন্য কী পদক্ষেপ নিলেন।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, কুমিল্লা এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের ২টি ঘটনাই ব্যক্তিগত।
এ সময় আদালত বলেন, ব্যক্তিগত হোক, যাই হোক। কোর্টের ভেতরে ছুরি নিয়ে কিভাবে যায়? পুলিশ কী করে? ডেফিনেটলি এটা পুলিশের নেগলিজেন্স।
তখন আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, নিরাপত্তাতো সবার জন্য। উনিও (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তাই আইনজীবী, বিচারকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এরপর আদালত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সারা দেশের আদালতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা এবং কুমিল্লার ঘটনায় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলো তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন। সে পর্যন্ত রিট আবেদনটি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখেন।
রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাব মহা পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট দায়েরের পর ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বিচার বিভাগ, বিচারাঙ্গন ও বিচারকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং বিচার বিভাগ ও বিচারাঙ্গনের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
আবেদনে বিচারাঙ্গনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রত্যেক বিচারকের জন্য গানম্যান দেওয়া এবং তাদের বাসভবন ও চেম্বার সুরক্ষিত করার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, আদালত প্রাঙ্গণে মেটাল ডিটেকটর ও দুই স্তরের পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও প্রত্যেক আদালত কক্ষের সামেন ভারী অস্ত্রসহ দক্ষ-শারীরিকভাবে সামর্থবান তিনজন পুলিশ নিয়োগেরও নির্দেশনা চেয়েছেন বলে জানান ইশরাত হাসান।
রিট আবেদনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একযোগে সারা দেশের আদালতে বোমা হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে বিচারক ও বিচার অঙ্গনে হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে হত্যা মামলার এক আসামি জামিন নেওয়ার পর তার ওপর বাদীপক্ষের লোকজন হামলা করে। এসময় আসামির উকিলও আক্রান্ত হন। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
ইএস/এসএইচ