ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

ক্রিকেট

‘বড় হৃদয়ের’ অ্যামব্রোস ও মাশরাফি-তাসকিন

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস)  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
‘বড় হৃদয়ের’ অ্যামব্রোস ও মাশরাফি-তাসকিন

চট্টগ্রাম থেকে : একটা ম্যাচ তখন শেষ হয়েছে কেবল। প্রেস কনফারেন্সে যাওয়ার তাড়াহুড়োয় লিফটে কল চেপে অপেক্ষায়।

উদ্দেশ্য জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিচতলার সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। কিন্তু দরজা খুলতে চমক সামনে এলো খানিকটা। বিশাল উচ্চতা, শরীর গড়নও বেশ ভালো; পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়েও তখন ‘খাটো’ বোধ হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকলো না।

হাতে সময় খুব একটা নেই। কার্টলি অ্যামব্রোসের সঙ্গে এক-দুটো কথা বলার এই সুযোগ। কিংবদন্তি এই পেসারের জীবনে কত কত গল্প, বহুবার গতিতে, বাউন্সে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন ব্যাটারদের, এসব জানার আগ্রহও আছে। কিন্তু সুযোগ যেহেতু নেই, তিনি এমন এক চরিত্র; তার কাছ থেকে ‘বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?’ এতটুকু জানতে চাওয়াও কম কী! প্রশ্নটা শুনে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললেন, ‘গুড (ভালো)...এখানকার আবহাওয়া খুব অদ্ভুতভাবে বদলে গেল। ’

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মাঠগুলোতে অ্যামব্রোসের গল্প তো কম নেই। ৯৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২২ বার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট, ৪০৫ বার ব্যাটারদের পথ দেখিয়েছেন সাজঘরের। স্বীকৃত ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ১৩৪২। এসব নিয়ে আলাপ করার বাসনা যতই থাকুক, সেটার জন্য সময় দরকার। তিনি তা দেবেন বলে তেমন লক্ষণ নেই।  

অ্যামব্রোস তো আর এমনি এমনি বলবেন না ক্যারিয়ারের কিছু। এবারের বিপিএলে এসেছেন ধারাভাষ্য দিতে। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে দুয়েকটা কথা জানাই বরং আপাতত সুবিধার। ‘এই যে এডিআরএস নিয়ে এত বিতর্ক চারপাশে, আপনার এ নিয়ে ভাবনা কী?’ অ্যামব্রোস কেবল বললেন এটুকু, ‘ইটস গুড, গুড ফর দ্য গেম (খেলাটির জন্য ভালো)। ’

এডিআরএস নিয়ে এত সমালোচনা চারদিকে, কী ভেবে তিনি এমন কথা বললেন সেটা জানার কৌতূহল জন্মালো। তবে মানুষজনকে প্রায়ই আফসোস করতে দেখা যায়, ‘ভালো সময় খুব দ্রুত চলে যায়...’; কথাটা মনে পড়লো লিফটের দরজার খোলার পর। বিস্ময় নিয়ে পিছু পিছু হেঁটে অবশ্য বেশিদূর যাওয়া গেল না। কারণ তখন ‘ভালো সময়’ অপেক্ষায় অন্য কারো জন্য। কারা তারা? মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তাসকিন আহমেদ।  

এ দুজনকে আপনি নিশ্চয়ই চেনেন। দেশের ক্রিকেটে তারা অনেক বড় তারকা। লম্বাও তো কম নন, কিন্তু ছয় ফুট সাত ইঞ্চির অ্যামব্রোসের কাছে সব নস্যি। তারা তিনজন পাশাপাশি দাঁড়াতেই তাই বেশ রোমাঞ্চকর এক দৃশ্য তৈরি হলো। মাশরাফি-তাসকিন একটু আগেও ছিলেন প্রতিপক্ষ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর তারা তেমন থাকবেন না, এটাই স্বাভাবিক।  

তবে সোমবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ঘাস সাক্ষী হলো অন্য কিছুরও। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখার সৌভাগ্যও হলো। অ্যামব্রোস কথা বলছেন, হাত নাড়াচ্ছেন, এটা-ওটা বলছেন দুজনকে। মাশরাফি আবার নিজেও বলছেন মাঝেমধ্যে। এ দুজনের একজন ক্যারিয়ার শেষ করেছেন বহু আগে, মাশরাফিও দাঁড়িয়ে গোধূলিতে। দুজনের কথা শুনে তাসকিন হাসছেন প্রায়ই। মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেসও করছেন মনে লুকিয়ে থাকা প্রশ্ন।

গত ক’দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরাফির একটা সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল বেশ। তিনি একবার বলেছিলেন, বড় হয়ে কী হতে চাই? বড় আড্ডাবাজ হয়তো। জহুর আহমেদে তাসকিনকে অন্য পাশে রেখে অ্যামব্রোসের সঙ্গে কথোপকথন দেখে মনে হলো, কথাটা মাশরাফি এখনও ভুলেননি এতটুকু।

দূর থেকে তাদের হাসি-আড্ডা-প্রাণ চঞ্চলতা আর শ্রদ্ধা দেখে ইংলিশ পেসার ফ্রেড ট্রুম্যানের একটা কথাও মনে পড়লো। পরবর্তী জীবনে সাংবাদিক বনে যাওয়া ট্রুম্যান বলেছিলেন কোথাও, ‘পেস বোলার হওয়ার জন্য অনেক বড় হৃদয় লাগে...। ’ তাসকিন-মাশরাফি-অ্যামব্রোস কেন পেসার, গতির ঝড় তুলেন; বলার অপেক্ষা কি ট্রুম্যানের কথা শোনার পরও থাকে?

বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
এমএইচবি/এএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।