মিরপুরের গ্যালারির বেশির ভাগটাই ফাঁকা। তবুও স্বাগতিক সমর্থকদের চিৎকারই শোনা গেল বেশির ভাগ সময়।
মঞ্চটুকু ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে দেন স্পিনাররা। একে একে সাজঘরেও ফেরত যান ইংলিশ ব্যাটাররা। একটু একটু করে জ্বলে উঠে বাংলাদেশের আশা। তবে সবকিছু ম্লান করে দেন ডেভিড মালান। তার হিসাবী ব্যাটিং জয়ের পথ দেখায় ইংল্যান্ডকে। কাছে গিয়েও হারাতে না পারার আরও এক দুঃখ সঙ্গী হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
বুধবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২০৯ রানে অলআউট হয়ে যান স্বাগতিকরা। জবাব দিতে নেমে ৮ বল আগেই জয় নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের উইকেট হারানোর শুরু হয় লিটন দাসকে দিয়ে। ক্রিস ওকসের গুড লেন্থের বল তার প্যাডে লাগলে আম্পায়ার আউট দেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে রিভিউ নেন লিটন, সিদ্ধান্ত বদলায়নি আম্পায়ারের। ছক্কা মারার পরই ১৫ বলে ৭ রান করে ফিরতে হয় লিটনকে।
পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসে ইংল্যান্ডকে সাফল্য এনে দেন উড। এই পেসারের ১৪৭ কিলোমিটার গতির তৃতীয় বলটি হুট করে লাফিয়ে ভেতরে ঢোকে। তামিম বুঝতেই পারেননি কিছু। তার কনুইয়ে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। চারটি চারে ৩২ বলে ২৩ রান করে ফেরেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ওপেনার।
পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারালেও ভালোই রান করে স্বাগতিকরা। প্রথম ১০ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ৫৪ রান। এরপর দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। আদিল রশিদের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে মুশফিক ক্যাচ দেন উডের হাতে। ৩৪ বলে ১৭ রান করেন তিনি।
এরপর সাকিব আল হাসানকেও হারায় বাংলাদেশ। মঈন আলির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। ১২ বলে তার ব্যাটে আসে ৮ রান। এরপর থেকে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের জুটিতে আসে ৫৩ রান। এই জুটি ভাঙে নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরলে।
৬ চারে ৮২ বলে ৫৮ রান করে শান্তকে ফেরান আদিল রশিদ। তার গুগলিকে তুলে মারতে গিয়ে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া বাংলাদেশি ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও পারেননি নিজের ইনিংসকে লম্বা করতে।
মার্ক উডের বলে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো জস বাটলারের হাতে তুলে দেন তিনি। এর আগে ৩ চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করেন রিয়াদ। এরপর আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজও পারেননি দলের হাল ধরতে। ১২ বলে ৯ রান করে রশিদের বলে আফিফ ও ১৯ বলে ৭ রান করে আর্চারের বলে আউট হন মিরাজ।
শেষদিকে ১৮ বলে ১৪ রান করে তাসকিন ও ১৩ বলে ১০ রান করে তাইজুল বাংলাদেশের রানকে নিয়ে যান দুইশ ছাড়িয়ে। ইংল্যান্ডের পক্ষে দুই উইকেট করে নেন জফরা আর্চার, মঈন আলি, আদিল রশিদ ও মার্ক উড। ক্রিস উকস ও উইল জ্যাকস পান একটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় তার সঙ্গে তামিম ইকবালের সম্পর্ক। সাকিবের বলে জেসন রয়ের ক্যাচটি ধরেন তিনিই। এরপর দুজন মেলান হাত। ৬ বলে কেবল ৪ রান করে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রয়।
এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। ৩৫ রান করে ফিল সল্ট আউট হন। পেছনের পায়ে তাইজুলকে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ১৯ বলে ১২ রান করা এই ব্যাটার। জেমস ভিন্স ও জস বাটলার দুজনই ফেরেন ব্যক্তিগত সংগ্রহ দুই অঙ্কের ঘরে নেওয়ার আগে।
তাইজুলে বলে স্টাম্পিং হয়ে ৯ বলে ৬ রান করে ভিন্স আউট হন। বাটলারের উইকেটের পেছনে ভূমিকা ছিল তামিম ইকবালের অধিনায়কত্বেরও। তিনি শান্তকে নিয়ে আসেন স্লিপে। তাসকিনের অতিরিক্ত বাউন্সের বলে জায়গা করে খেলতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ দেন বাটলার। ১০ বলে করেন ৯ রান।
বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার ভিড়ে আটকে থাকেন ডেভিড মালান। উইল জ্যাকসের সঙ্গে তার ৪৮ রানের জুটিও হয়। মিরাজের বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়ানো আফিফ হোসেনের কাছে ক্যাচ দিয়ে জ্যাকস ফেরেন। ৩১ বলে ২৬ রান করে তার বিদায়ের সময় পুরো মিরপুর চিৎকার করে উঠে।
তবে আরেকপ্রান্তে থিতু হয়ে পড়েন ডেভিড মালান, তিনিই শেষ পর্যন্ত হন বাংলাদেশের হারের কারণ। শুরু থেকে দেখেশুনে খেলা এই ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরির জন্য খেলেন ৯২ বল। কিন্তু পরের পঞ্চাশ রানের জন্য তার দরকার হয় কেবল ৪৮ বল। সব ব্যাটারকে হারিয়ে একাকী হয়ে পড়া মালানের শেষে এসে সঙ্গী হন আদিল রশিদ।
দুজনের অবিচ্ছেদ্য জুটিতেই জয়ের দেখা পায় ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে শেষ অবধি থাকা মালান ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১৪৫ বলে করেন ১১৪ রান। ২৯ বল খেলে ১৭ রান করা আদিল রশিদ টিকে থাকেন দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়ানো অবধি।
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫২ ঘণ্টা, ১ মার্চ, ২০২৩
এমএইচবি