এই তো সেদিনও কেউ ভাবেনি বাংলাদেশ নিজেদের দুর্বলতম টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সদ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে দাপটের সঙ্গে ধবলধোলাই করবে। একটি ম্যাচ, দুটি ম্যাচ না হয় জয় করা যেতে পারে।
ইংলিশদের বিপক্ষে ভয়ডরহীন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। খেলার কোনো পর্যায়ে বিচলিত হয়নি বা মুষড়ে পড়েনি। পরিবর্তিত দলে যারা সুযোগ পেয়েছেন; তারা দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং, আক্রমণাত্মক বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং করে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। গোটা দলকে একসূত্রে গেঁথেছেন বিচক্ষণ সাকিব। কোনো অবস্থায় মনে হয়নি, শক্তিমত্তার তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ পিছিয়ে।
কী এমন পরিবর্তন হয়েছে বিশ্বকাপে খেলা দল দুটিতে? বলা যায়, ইংল্যান্ড দলে বিশ্বকাপে খেলা ৩-৪ জন ব্যাটসম্যান ছিলেন না। তবে যারা খেলেছে তারাও কিন্তু নিয়মিত খেলোয়াড়। ওদের আক্রমণ এখন বিশ্বসেরা। বিশ্বকাপের অনেক পারফর্মার দলে ছিলেন, অন্যদিকে কয়েকজন বর্ষীয়ান খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ দলে নেই। কিছু দিন আগে শেষ হওয়া বিপিএলের সেরা ব্যাটার-বোলারদের বেশ কয়েকজনকে দলে সুযোগ দেওয়া যে বিচক্ষণতার কাজ হয়েছে সেটি প্রমাণিত।
জফরা আর্চার, মার্ক উড, ক্রিস ওকস, স্যাম কারানের সমন্বয়ে গড়া ইংলিশ পেস আক্রমণ সাদা বলের ক্রিকেটে এখন বিশ্বসেরা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ ইংলিশ পেসারদের থেকে অনেক ভালো বোলিং করেছেন। মঈন আলী, আদিল রশিদের তুলনায় সাকিব ও মিরাজ কার্যকরী ছিলেন। তাসকিনের গতি, লেন্থ ও লাইন, তরুণ হাসান মাহমুদের নিশানাভেদী ইয়র্কার, গতি বৈচিত্র,কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের ফিরে আসা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ফাস্ট বোলার এবং টাইগারদের বর্তমান বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া পেস আক্রমণ বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের অন্যতম কারণ। বহুদিন পর বাংলাদেশ দলে তিনজন বিশ্বমানের পেসার একসঙ্গে পাওয়া অনেক স্বস্তির কারণ। উপযোগী উইকেটে সাকিব, মিরাজ ভেলকি দেখাবেন, এটি অনুমেয় ছিল। সর্বোপরি সাকিব বোলিং সম্পদ ব্যবহার করেছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। অনেক 'আউট অফ দ্য বক্স' সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উঁচু মানের বোলিং আরো কার্যকরী হয়েছে পুরো দলের তুখোড় ফিল্ডিংয়ের কারণে। উইকেটের পেছনে লিটন দাস, মাঠজুড়ে নাজমুল হোসেন শান্ত, মিরাজ, তৌহিদ হৃদয় এবং মাহমুদুল হাসানরা ছিলেন প্রাণবন্ত।
সব ফরম্যাটে ভালো খেলতে থাকা লিটনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ইনিংস ওপেন করার, সঙ্গী দেশের ক্রিকেটে ক্রমাগত ভালো খেলে দলে ফেরা রনি তালুকদার। লিটন প্রথম দুই ম্যাচে নিজেকে হারিয়ে খুঁজলেও শেষ খেলায় ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন। রনির আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি গোটা দলের শরীরের ভাষা পাল্টে দিয়েছে। শান্ত ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে দলের ব্যাটিং স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়কে দেখে মনেই হয়নি সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেখড়ি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের ব্যাটিং দর্শন পাল্টে দিয়েছে।
এমন একটি সিরিজ জয়ে দলের সবাই ভূমিকা রেখেছে। অনেক দিন পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে একটি সুখী পরিবার মনে হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে কিছু জয় কীভাবে সব কিছু পাল্টে দেয়। সিরিজ জয় কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা। আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। সামনে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা অর্জন করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিশ্চয়ই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অনুভব করেছেন কোথায় কোথায় কি কাজ করতে হবে। দলে অন্তত দুইজন ভালো মানের লেগ স্পিনার, দুই জন পাওয়ার হিটার। সাকিব প্রমাণ করেছেন কেন তিনি এই মুহূর্তে দেশের সেরা অধিনায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এমএইচএম