গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের উপরের সারিতে বসে আছেন তারা। ভদ্রলোকের উচ্চতা ছয় ফুট ছাড়ানো, চোখে রোদ চশমা, মাথার চুল উঠি উঠি করছে; তিনি আছেন দাঁড়িয়ে।
এই ভদ্রমহিলা ও ভদ্রলোক এসেছেন আয়ারল্যান্ড থেকে। একজনের নাম অ্যাশলি বালবার্নি, অন্যজন ক্যান্ডি লাপপিন। প্রথম নামটা শোনে আপনি হয়তো অনুমান করেছেন কিছুটা। যদি অ্যান্ড্রু বালবার্নির বাবা-মা হিসেবে ভেবে থাকেন তাদের- তাহলে ঠিকই আছে।
প্রায় চার বছর অপেক্ষার পর টেস্ট খেলতে নেমেছে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশে এসে সাদা পোশাকে খেলার অপেক্ষা শেষ হয়েছে অ্যান্ড্রু বালবার্নিরও। এবার অবশ্য আরও মধুর হয়ে। তিনি সাদা পোশাকে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রথমবার। ছেলের এমন মুহূর্তের সাক্ষী হতে আয়ারল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন অ্যাশলি ও ক্যান্ডি।
তাদের তিন ছেলের সবাই ক্রিকেটার। জীবনের গোধূলীতে পৌঁছে যাওয়া দম্পত্তির বেশির ভাগ সময়ই কাটে তাদের খেলতে দেখে। দেশে বা দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে বেড়ান তারা। বাংলাদেশে এসেছেন, যাবেন আইরিশ ক্রিকেট দলের পরের গন্তব্য শ্রীলঙ্কাতেও।
অ্যাশলি নিজে ক্রিকেট খেলেছেন টুকটাক, তবে তেমন ‘সিরিয়াস’ কিছু নয়। ছেলের ক্রিকেটার হয়ে বেড়ে উঠায় অবশ্য বাধা হননি কখনোই। বালবার্নির ক্রিকেট প্রেমের শুরুর গল্পটা বলছিলেন তিনি, ‘ওর যখন ছয় বছর বয়স, তখন আমরা একটা বাড়ি কিনেছিলাম। ওটার পাশেই ছিল ক্রিকেট পিচ। তখন থেকেই অ্যান্ড্রুর ক্রিকেট আর আয়ারল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্নের শুরু। ’
সেই ছোট্ট ছেলে এখন দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন টেস্টে। দেখতে ছুটে এসেছেন হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে। কেমন লাগছে? প্রশ্নটা শুনে অ্যাশলির জবাব, ‘বুক কিছুটা ধুকপুক করছে। খুব নার্ভাস, খুবই নার্ভাস লাগছে আসলে। ’ তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তখন বালবার্নি ব্যাটিংও করছেন। একটা বল মিস করতেই বললেন নিজে থেকে, ‘ওকে ব্যাটিং করতে দেখে বুকের ধুকপুকানিটা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ’
স্বামীর সঙ্গে ক্যান্ডিরও এটাই প্রথম ঢাকা দেখা। এর মধ্যেই তীব্র জ্যাম দেখেছেন আগেরদিন। কিন্তু তবুও তার ঢাকায় এসে ‘অসাধারণ অনুভূতি। ’ ছেলেকে টেস্ট খেলতে দেখে ‘আরও বেশি ভালো লাগছে’ তার। তিন ছেলেকেই কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন। দেখেছেন বেড়ে উঠতেও।
উচ্ছ্বাস নিয়েই বালবার্নিদের ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলেন ক্যান্ডি, ‘ছোটবেলায় খেলা দেখতে গেলে ভয়ে থাকতাম। আউট হয়ে এসে কান্নাকাটি শুরু করতো। এখন অবশ্য আর ওই সমস্যা নেই। ওরা বড় হয়ে গেছে!’ এখন কি আউট হলে ফোন করে অন্তত খারাপ লাগার কথা বলেন বালবার্নিরা? ক্যান্ডি বলছেন, ‘একদমই না, ওরা বড় হয়ে গেছে তো!’
আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলে খেলা প্রায় সব ক্রিকেটারই ক্যান্ডির পরিচিত। তাদের ছোটবেলা থেকেই চেনেন, জানেন তিনি, ‘এখানে যাদের খেলতে দেখছেন, ওদের বেশির ভাগকেই আমি চিনি। আসলে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট কমিউনিটি তো এত বড় নয়। ওরা ছোটবেলায় আমাদের বাসায় অনেক আড্ডা দিয়েছে। আমি ওদের রান্না করে খাইয়েছি। ’
তারা এখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন দূর দেশে। স্বপ্নের সীমানা কি পাড়ি দিয়েছেন? অ্যাশলি বলছেন, ‘এত বড় স্বপ্ন অবশ্য দেখিনি। ভালো লাগছে ওদের এখানে খেলতে দেখে। ’ আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট খুব বেশি জনপ্রিয় নয়। আর্থিক কিংবা ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করলেও নিশ্চয়ই খুব বেশি সুখকর কিছু নয়।
এসব নিয়ে অ্যাশলি বা ক্যান্ডি কখনোই মাথা ঘামাননি তেমন। বালবার্নির বাবার কণ্ঠে বরং ছেলের হাত ধরে ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়ার উচ্ছ্বাস, ‘ক্রিকেট এখন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে আয়ারল্যান্ডে। অনেক দেশ থেকে লোকজন আসছে, বিশেষ করে এশিয়া থেকে। এখন অনেক বেশি মানুষ ক্রিকেট খেলছে। আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে আরও বেড়েছে সেটা। সংখ্যাটা এখনও কম, একই ক্রিকেটাররা সব ফরম্যাটে খেলছে। তবে ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। ’
ক্যারিয়ার বা এসব নিয়ে কখনোই চিন্তা ছিল না ক্যান্ডির। ছেলেদের ক্রিকেটে দেখে তার বরং বেশ আনন্দই হচ্ছে। ক্যারিয়ারের দুশ্চিন্তা ছেড়ে তার আনন্দ সম্ভাব্য নাতি-নাতনিকে নিয়ে, ‘অ্যান্ড্রু কিন্তু আগস্টের দিকে বাবা হচ্ছে। ওর স্ত্রী সন্তান সম্ভবা, এখন আয়ারল্যান্ডে আছে। জানি না ছেলেটা তখন কী করবে!’ মায়ের মন বোধ হয় একেই বলে।
বাংলাদেশ সময় : ১২১৬ ঘণ্টা, ৪ এপ্রিল, ২০২৩
এমএইচবি