ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বোলিংয়ের সময় আমি কোনো চাপ নিই না: মারুফা 

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
বোলিংয়ের সময় আমি কোনো চাপ নিই না: মারুফা  ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের একজন উদীয়মান গতি তারকা মারুফা আক্তার। জাতীয় দলে খেলেন পেসার হিসেবে।

শুধু বোলিংয়ে নয়, ফিল্ডিংয়েও দারুণ দক্ষতা রয়েছে তার। অভিষেকের পর থেকেই দলের হয়ে একের পর এক চমক দেখিয়ে চলছেন তিনি।

সম্প্রতি ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডে ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মারুফা। ম্যাচটিতে মাত্র ২৯ রান খরচে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। নীলফামারীর বাঘিনী হিসেবে পরিচিত মারুফা এখন পর্যন্ত ৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৭ টি উইকেট নিয়েছেন।  

টি-টোয়েন্টিতেও দক্ষতা দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দেশের জার্সিতে ৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। নীলফামারী জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল গ্রামের মাস্টার পাড়ায় জন্ম নেওয়া মারুফা ভারত সিরিজ শেষে বাড়িতে এসে কথা বলেছেন আমাদের ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট আমিরুজ্জামামানের সাথে।  

বাংলানিউজ: কেমন আছেন?
মারুফা: জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।  

বাংলানিউজ: এসএসসির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আপনি মানবিক বিভাগ থেকে একটা ভালো ফলাফল করেছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাটা সামলাচ্ছেন কিভাবে?
মারুফা: আসলে যারা খেলাধুলা করে তাদের জন্য পড়াশোনা করাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। তারপরও আমার মধ্যে জেদ ছিলো যে খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাটা ঠিকঠাক করতে হবে। কেননা খেলাধুলা তো সবসময় থাকবে না, কিন্তু পড়াশোনা সবসময় কাজে লাগবে। খেলার এই ব্যস্ততার মধ্যে যতোটুকু সময় পেয়েছি পড়াশোনা করেছি।

বাংলানিউজ: প্রথমবারের মতো ভারতকে হারানোর নায়ক আপনি এটা ভাবতে কেমন লাগে?
মারুফা: আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো লাগে নিজের কাছে যে আমিও বড় দলকে ধরাশায়ী করতে অবদান রাখতে পারি।

বাংলানিউজ: শেষ ম্যাচের শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য দরকার মাত্র ৩ রান। প্রথম দুই বলে দুই রান দিলেন। তৃতীয় বলে উইকেট পেলেন। সেই সাথে ম্যাচটাও ড্র করলেন। শেষ বলটি করার আগে আপনার ভাবনা কি ছিলো?
মারুফা: আলহামদুলিল্লাহ, যদি উইকেট না পড়তো হয়তো ম্যাচটা হেরে যেতাম। আমরা যখন ম্যাচটা ড্র করি তখন সবার মুখে হাসি ফুটেছে। আমার বিশ্বাস ছিলো আমি পারবো। জ্যোতি আপু আমার হাতে বল তুলে দিয়েছে। আমার আত্ববিশ্বাস ছিলো। দুই বলে দুই রান হয়েছে। এটা কোনো ব্যাপার না। এই বলে কিছু করে দেখাবো এমন ভাবনা ছিলো।

বাংলানিউজ: প্রথমবার যখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেলেন। তখনকার অনুভূতি কেমন ছিলো? আপনার মধ্যে কি ভয় কাজ করছিলো?
মারুফা: হ্যা, অবশ্যই। যখন নতুন নতুন কোন জায়গায় যাবেন একটু তো ভয় কাজ করবে। তবে আপুরা আমাকে অনেক আদর করেছে। সবকিছুতে সহযোগিতা করেছে। তাই ভয়টা আর দীর্ঘস্থায়ী  হয়নি।

বাংলানিউজ: আপনি তো বেশ কয়েকমাস ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচে তো অনেক প্রেসার সিচুয়েশন তৈরি হয়। এই সিচুয়েশন গুলোতেও আপনাকে দেখে বেশ চাঙ্গা মনে হয়। এর কারণটা কি?
মারুফা: আসলে খেলায় অনেকেই চাপ নেয়। নিজের মধ্যে অতিরিক্ত প্রেশার নেয়। জ্যোতি আপু বলে, তুই কোনো প্রেশার নিবি না। সব আমি দেখবো। শুধু তুই লাইন টু লাইন তোর মতো করে বল করে যাবি। ফিল্ডিং সেটআপও জ্যোতি আপু করে দেন। তাই আমি প্রেশার ছাড়াই বোলিং করতে পারি

বাংলানিউজ: মারুফা কি শুধু বোলার নাকি বোলিং অলরাউন্ডার? 
মারুফা: আসলে আমি বোলিং অলরাউন্ডার। ব্যাটিংটা ওভাবে দেখাতে পারছিনা। বোলিং নিয়েই বেশি কাজ করছি। তবে চেষ্টা করছি সুযোগ পেলে ব্যাটিংয়েও ভালো কিছু করে দেখাবো, ইনশাআল্লাহ।

বাংলানিউজ: মারুফার প্রিয় খেলোয়াড় কে? 
মারুফা: আমার প্রিয় খেলোয়াড় হচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া। আমি উনাকে আইডল মানি। উনার মতো অলরাউন্ডার হওয়ার ইচ্ছে আমার। দেশের মধ্যে মোস্তাফিজ ভাইয়ের বোলিং আমার খুব ভালো লাগে।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
মারুফা: জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। আপু আমাকে অনেক সাপোর্ট করেন। আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপে আপুর সাপোর্ট ছিলো। কোনো কিছু না বুঝলে আপু খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন।

বাংলানিউজ: ভারতের সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মান্দানা আপনার অনেক প্রশংসা করেছেন। এতো বড় একজন তারকা খেলোয়াড়ের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে আপনার কেমন লেগেছে?
মারুফা: খুবই ভালো লেগেছে। ভারতের মতো এতো বড় দলের একজন তারকা খেলোয়াড়ের প্রশংসা পেয়ে কার না ভালো লাগবে। উনি আমাকে সেরা বোলার ও ফিল্ডার বলেছিলেন। এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।

বাংলানিউজ: আপনার একটা অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং সবার চোখে লেগে আছে। বাউন্ডারি হতে যাওয়া বলটি আপনি আটকাতে সক্ষম হয়েছিলেন। বলটি ধরার আগে কি ভেবেছিলেন যে আপনি এটা ধরতে পারবেন?
মারুফা: জ্বি, অবশ্যই। আমি অনেক জোরে দৌড়াতে পারি। এটা আমার প্লাস পয়েন্ট। নিজের উপরে বিশ্বাস রেখে দৌড়াইছি। তাই আটকাতে পেরেছিলাম।

বাংলানিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে উঠা নিয়ে যদি কিছু বলেন?
মারুফা: আমার জন্মস্থান নীলফামারী জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল গ্রামের মাস্টার পাড়ায়। বেড়ে উঠেছি সৈয়দপুরে। সৈয়দপুর রেলমাঠে প্র্যাকটিস করেছি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। আমার বড় ভাইয়ের প্রেরণায় আমি ক্রিকেটার হয়েছি। তার সাইকেলে চড়ে আমি মাঠে যেতাম। ছেলেদের সাথে পাড়ার ক্রিকেটে নিয়মিত খেলতাম।  

বাংলানিউজ: দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
মারুফা: সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেনো নিয়মিত ভালো খেলতে পারি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও যেনো দেশের সুনাম বয়ে আনতে পারি।

বাংলানিউজ: এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! 
মারুফা: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।