ভারতের প্রথম চার ব্যাটার ফিরেছেন তার বলেই, সবমিলিয়ে সংখ্যাটা পাঁচ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার জয়ে রাঙিয়ে রাখতে নিশ্চয়ই চেয়েছিলেন দুনিথ ওয়েল্লালাগে।
মঙ্গলবার কলম্বোতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে লঙ্কানদের ৪১ রানে হারিয়েছে ভারত। এই ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় রোহিত শর্মার দল। জবাব দিতে নেমে ৪১ ওভার ৩ বলে ১৭২ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। এ ম্যাচে ভারতের জয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ করছিলেন ভারতের দুই পেসার। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ভারত করে ৬৫ রান। আগের ম্যাচের সাড়ে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ পাওয়ার পর এ ম্যাচেও বড় রানের আশা জেগেছিল ভারতের। কিন্তু স্পিনাররা বোলিংয়ে আসতেই বদলে যায় প্রেক্ষাপট।
নিজের প্রথম বলেই শুভমন গিলকে ফেরান ওয়েল্লালাগে। ২৫ বলে ৯ রান করে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান শুভমন গিল। নিজের পরের দুই ওভারেও উইকেট তুলে নেন ওয়েল্লালাগে। এই স্পিনার অনেকটা একাই ধ্বসিয়ে দেন ভারতের টপ-অর্ডার। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া বিরাট কোহলি ১২ বলে ৩ রান করে শর্ট মিডউইকেটে দাসুন শানাকার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তার বলেই।
ওয়েলেলগের তৃতীয় শিকার হন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার নিচু হওয়া বল খেলার কোনো উপায়ই ছিল না তার। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ৫৩ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় রোহিতকে। ৮০ রানে কোনো উইকেট না হারানো ভারত ১১ রানের ভেতরে হারিয়ে ফেলে তিন উইকেট। এ অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ইষান কিষান ও লোকেশ রাহুল।
কিন্তু এবারও ভারতের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ান সেই ওয়েল্লালাগে। এবার ৪৪ বলে ৩৯ রান করা রাহুলের ক্যাচ নিজেই নেন তিনি। কিষাণের সঙ্গে তার ৬৩ রানের জুটিও ভেঙে যায়। এরপর আবারও ভারতের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামে।
তবে এবার অনিয়মিত বোলার চারিথ আশালাঙ্কার বলে বিভ্রান্ত হন ভারতীয় ব্যাটাররা। এর আগে ৩৮ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ৬ ইনিংসে বল করেছিলেন তিনি, উইকেট ছিল স্রেফ একটি। কিন্তু সেই আশালাঙ্কাকে যেন খেলতেই পারছিলেন না ভারতের ব্যাটাররা, বলও টার্ন করছিল বেশ।
আশালাঙ্কা শুরুটা করেন কিষানকে দিয়ে। ৬১ বলে ৩৩ রান করে ওয়েল্লালাগের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদ্বীপ যাদব ও জসপ্রিত বুমরাহকে ফেরান আশালাঙ্কা। আরেকদিকে হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে নিজের ফাইফার পূর্ণ করেন ওয়েলেলগে।
১৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগেই অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল ভারত। মাঝে এক দফা বৃষ্টির পর সেটি হতে দেননি অক্ষর প্যাটেল। ৩৬ বলে ২৬ রান করে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি। ১০ ওভারে স্রেফ ৪০ রান খরচায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার পান ২০ বছর বয়সী ওয়েল্লালাগে। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দশ উইকেটের সবগুলোই স্পিনাররা নেওয়ার কীর্তি গড়ে কোনো দল।
অল্প রান তাড়ায় নেমে সাবধানী শুরু করতে চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু তারাও সেটি পারেনি। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে এসে উইকেট নেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তার দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৭ বলে ৬ রান করা পাথুম নিশাঙ্কা। কুশল মেন্ডিস ও দিমুথ করুণারত্নেও ফেরেন দলের রান ২৫ পেরোনোর আগেই।
সাদিরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে জুটি গড়ে পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করেন আশালাঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের নায়ক সামারাবিক্রমা এদিনও শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু ৩১ বলে ১৭ রান করে কুলদ্বীপকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হন তিনি। এরপর ফের দ্রুত আরও কয়েকটি উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
৯৯ রানে ছয় উইকেট ছিল না দলটির। সেখান থেকে বল হাতের নায়ক ওয়েল্লালাগেকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তাদের জুটি পঞ্চাশ ছাড়িয়েও ছুটছিল দলকে জেতানোর পথে। বল হাতে দারুণ করা ওয়েল্লালাগে ভরসা যোগান ব্যাট হাতেও। কিন্তু হুট করেই ধৈর্য হারান ধনঞ্জয়া।
রবীন্দ্র জাদেজার প্রথম দুই বল থেকে পাঁচ রান আসার পরও তৃতীয়টিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে যান তিনি। মিড অনে লাফিয়ে তার ক্যাচ ধরেন শুভমন গিল। ৫ চারে ৬৬ বলে ৪৪ রান করে ফিরতে হয় ধনঞ্জয়াকে। এর সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ম্যাচটাও ফসকে যায় তাদের হাত থেকে।
শেষের ব্যাটাররাও খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি। ১৪ বল খেলে ২ রান করা মাহেশ থিকসেনা আউট হন হার্দিক পান্ডিয়ার করা ৪১তম ওভারের পঞ্চম বলে। এরপর স্ট্রাইকে এসে একটি সিঙ্গেলস নেন কাসুন রাজিথা। কিন্তু কুলদ্বীপের করা পরের ওভারের তিন বলের মধ্যেই আউট হয়ে যান তিনি ও পাথিরানা। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ বলে ৩২ রান করে আরেক প্রান্তে অপরাজিতই থেকে যান ওয়েল্লালগে।
বাংলাদেশ সময় : ২৩৩২ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
এমএইচবি