ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

সাক্ষাৎকারে স্টুয়ার্ট ল

‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধৈর্য কম, সবাই এখনই সাফল্য চায়’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২৪
‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধৈর্য কম, সবাই এখনই সাফল্য চায়’

আফগানিস্তান জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ার পর হয়েছেন বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ। দু বছরের যাত্রায় ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে শক্ত করেছেন, পেয়েছেন সাফল্যও।

তার অধীনেই প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ জিতেছে বাংলাদেশ।

আজ মঙ্গলবার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আসন্ন যুব বিশ্বকাপ, ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে আসার প্রক্রিয়া, তরুণ ক্রিকেটারদের তারকাখ্যাতি, বাংলাদেশের মিডিয়া হাইপসহ নানা বিষয়ে স্টুয়ার্ট ল কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের উইকেট, প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে রাখার। জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পার্থক্যও।  

বাংলানিউজ: এর আগে আপনি জাতীয় দলে কাজ করতেন। এরপর এই যুবাদের দায়িত্ব নিতে কোন ব্যাপারটা অনুপ্রেরণা যোগালো?

স্টুয়ার্ট: কোচ হিসেবে যাত্রাটা আরও লম্বা করাই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ভালো খেলোয়াড় ও ভালো তরুণ মানুষ তৈরি করা; যারা পরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

বাংলানিউজ: ২০১৬ যুব বিশ্বকাপের সময়েও আপনি বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। এখন আবার এলেন। কী বদল দেখলেন?

স্টুয়ার্ট: এটা দেখে খুব ভালো লাগছে মিরাজ (মেহেদী হাসান), শান্ত (নাজমুল হোসেন), জাকির (হাসান) জাতীয় দলের হয়ে খেলছে এখন। ওরা ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ছিল, তাদের এগিয়ে যেতে দেখা দারুণ ব্যাপার। শান্ত এখন জাতীয় দলের অধিনায়ক, এটা আমাকে গর্বিত করছে।

কারণ আমি ওদের খুব কাছাকাছি ছিলাম, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আমি ওদের অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। ওদের জাতীয় দলে খেলতে দেখে ভালো লাগছে। বাংলাদেশে কখনো প্রতিভার কমতি ছিল না। ব্যাপারটা হচ্ছে কীভাবে আপনি তাদের উন্নতি করবেন। এখন ওখানেই নজর দিচ্ছে- কীভাবে সব ধরনের প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

বাংলানিউজ: জাতীয় দলে শান্তর অধিনায়কত্ব কি দেখেছেন?

স্টুয়ার্ট: আমি ম্যাচের প্রতিটি বল দেখিনি, তবে হাইলাইটস দেখেছি। বাইরে বসে আসলে বলাও কঠিন কী হচ্ছে। লোকজন হয়তো বলে ফেলে - এই ছেলে ওর চেয়ে ভালো অধিনায়কত্ব করে। কিন্তু ফ্যাক্ট হচ্ছে বাংলাদেশের কোনো জয় ছিল না নিউজিল্যান্ডে।

এখন ওদের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জয় আছে। পুরো কোচিং স্টাফ ও ক্রিকেটাররা ওই মানসিক জায়গায় গেছে। অধিনায়কত্ব একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ম্যাচে। কিন্তু আপনি তখনই ভালো অধিনায়ক হবেন, যখন আপনার পাশে ভালো খেলোয়াড়রা থাকবে। আমার ভাবনা এটাই।  

বাংলানিউজ: শান্ত কিন্তু সমালোচনার একটা লম্বা পথও পাড়ি দিয়েছে। এখন সে দীর্ঘ সময়ের অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে...

স্টুয়ার্ট: আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম; তখন মিরাজ ছিল অধিনায়ক, শান্ত সহ-অধিনায়ক। আমি ওর মাঠের অধিনায়কত্ব দেখিনি। কিন্তু দলের ভেতরে তার নেতৃত্ব দেখেছি। ওই দলে অনেক বড় ব্যাটার ছিল সে, কয়েকটা সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছে আমি যদি ভুল না করি। মিরাজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টও হয়েছিল।

দুটো ছেলের মধ্যেই নেতৃত্বের গুণ ছিল। ভালো নেতা হচ্ছে যে নিজে উদাহরণ তৈরি করে; শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করলেই হবে না। তাদের সামনে এসে উদাহরণ হতে হবে সবার জন্য; বাকিদের হয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি ২০১৬ সালে যেটা দেখেছি, ওরা খুব সম্ভাবনাময়ী ছিল।

সবারই ব্যাটিংয়ে খারাপ সময় আসে। কিন্তু যখন আপনি বড় হবেন, তখন প্রত্যাশা বাড়বে। প্রত্যাশা আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে কখনো কখনো। কেউ বুঝবে না ওরা অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে খুব দ্রুতই জাতীয় দলে চলে আসে। এটা কিন্তু দুনিয়ার খুব বেশি জায়গায় হয় না।

ভালো টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোতে আপনাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পারফর্ম করতে হবে। তারা যুব ক্রিকেট থেকে বড়দের ক্রিকেটে যায়; প্রথম শ্রেণির অনেকগুলো ম্যাচ খেলে, তারপর জাতীয় দলে যায়। আপনি যদি পথের দিকে তাকান যেকোনো কিছু হতে সময় লাগে।

আমি জানি পৃথিবীর এই প্রান্তে কিছুটা অধৈর্য আছে- সবাই এই মুহূর্তে সাফল্য চায়। কিন্তু আপনাকে সময় দিতে হবে, তারপর তারা ভালো কিছু দেবে। শান্ত এখন সেটিই করছে। গত ১২ মাসে বাইরে থেকে তার ব্যাটিং দেখে দুর্দান্ত লেগেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে দুটি শতক হাঁকিয়েছি, অসাধারণ অর্জন সেটি।

বাংলানিউজ: আবার আপনার কাজে ফিরে আসি, অনূর্ধ্ব-১৯ নাকি জাতীয় দল কোন জায়গায় কাজ করা বেশি কঠিন?

স্টুয়ার্ট: দেখুন, দুটিতে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- অনেক ছেলের মধ্যে থেকে আপনাকে সেরা দল বেছে নিতে হবে। তারা হয়তো প্রায় সবাই প্রতিভার দিক থেকে কাছাকাছি মানের। এখান থেকে আপনাকে বের করতে হবে কে খারাপ সময়ে শক্ত থাকতে পারে। আর যখন ভালো দিন আসে তখন কে খুব দূরে তাকায় না।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের মূল চ্যালেঞ্জ এটাই। প্রতিভা খোঁজা কোনো সমস্যা না, কারণ বাংলাদেশে প্রতিভাবান ক্রিকেটারের অভাব নেই । আর জয়ের চাপ তো সবসময়ই থাকে। আপনি যখন কোনো টুর্নামেন্টে যাবেন, জিততে চাইবেন। আমাদের এমনিতে চেষ্টা আছে খেলোয়াড়দের উন্নতি করার, তারা যেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হয়ে জাতীয় দলে খেলতে পারে।

আর জাতীয় দলে আপনাকে জিততে হবেই- এটাই শেষ কথা। প্রতিটি আন্তর্জাতিক সূচিতেই জয় চাইবে সবাই। মিডিয়া, বোর্ড, দর্শক, এমনকি ড্রেসিংরুমের ভেতর থেকেও জয়ের চাপ থাকে। বোর্ডও ভাবে সবকিছু নির্ভর করছে জয়ের ওপর। এটাই চাপের পার্থক্য দুই জায়গায়।

বাংলানিউজ: গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশ তো অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বেশ ভালো করছে। একটা বিশ্বকাপও আছে। কিন্তু বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই আর পরের ধাপে নিতে পারে না নিজেকে...

স্টুয়ার্ট: আমি জানি না আপনি অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে কতজন ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে দেখতে চান। আমি প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ যেটি হয়, ওখানে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছি। সেবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে। ওই দল থেকে শুধু আমিই জাতীয় দলে খেলেছি।

এমন না যে অন্য ছেলেরা যথেষ্ট ভালো ছিল না। তারা ভীষণ প্রতিভাবাবন ছিল, ওই বিশ্বকাপে পারফর্মও করেছিল। কিন্তু আমিই একমাত্র সৌভাগ্যবান ছিলাম। আপনি আসলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ১৫ জনের ১২ জনকেই জাতীয় দলে প্রত্যাশা করতে পারেন না। কারণ এটা অবাস্তব ব্যাপার।

এজন্য সবার কাছে আমার বার্তা হচ্ছে- প্রত্যাশাটা বাস্তবতার কাছাকাছি রাখেন। সবাই আশা করে ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে চার বছরের মধ্যে সবাই জাতীয় দলে খেলবে। এটা আসলে হবে না। আপনার এখনও ভালো মানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার আছে, যাদের বয়স ২৫-২৬ বছর।

আপনি হয়তো জাতীয় দলে দুয়েকজন, বড়জোর ৩-৪ জন পাবেন সৌভাগ্যবান হলে। আমার মনে হয় এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে কয়েকজনের সম্ভাবনা আছে জাতীয় দলে খেলার। সবাই পারবে না, সেটি পারলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু বাস্তবে এমন সম্ভব না।

বাংলানিউজ: আপনি কি এই দলের কয়েকজনের নাম বলতে পারেন, যারা জাতীয় দলে খেলতে পারে?

স্টুয়ার্ট: নাহ, আমি কারো নাম বলবো না! আপনি যদি আমার মাথায় বুলেট ভরা বন্দুকও ধরেন- তাও বলতে পারবো না।

বাংলানিউজ: আপনার কী মনে হয় অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে জাতীয় দলে যেতে ব্যাটারদের একটু বেশি সময় লাগে বোলারদের তুলনায়?

স্টুয়ার্ট: তা তো একটু বেশি লাগেই। বাংলাদেশে সমস্যা হচ্ছে- যে ধরনের পিচে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে, সেটা দেশের বাইরে গিয়ে খেলতে ব্যাটারদের সাহায্য করে না। সবাই বলে তোমার ঘরের মাঠে জিততে হবে, অবশ্যই হবে। কিন্তু দেশের বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

আমি এখানে যে ধরনের উইকেট দেখি, ব্যাটারদের বিশ্বমানে যাওয়ার জন্য একদমই সাহায্য করবে না। আরেকটা হচ্ছে, এক পিচে অনেক খেলা হয়, বিশ্রাম পায় না। মাঠকর্মীদের জন্য ঘাসের উইকেট বানানোর সময় থাকে না; যেটা ক্রিকেটের জন্য দরকার।

যখন আমরা এই অনূর্ধ্ব-১৯দলটা নিয়ে ক্যাম্প করেছি, ঘরের মাঠে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছি; নিশ্চিত করেছি যেন পাঁচ মিলিমিটার ঘাস থাকে। আপনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যান, দেখবেন এক বিন্দু ঘাসও নাই। বল এত টার্ন করে, কিন্তু হাঁটুর সমান বাউন্সও থাকে না।

এরপর যখন বাংলাদেশ জাতীয় দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে যায়; এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় না যে তারা স্ট্রাগল করে। ২০১২-তে যখন আমি জাতীয় দলের কোচ ছিলাম, তখন মিরপুরের উইকেট ছিল পার্থের মতো। উইকেটে ঘাস ছিল।

এখন বাংলাদেশ যে পেসার পেয়েছে, তারা বিশ্বমানের। কিন্তু তারা হাঁটুর নিচে বাউন্স করে এমন উইকেটে খেলে, তাহলে তাদের উন্নতি থমকে যাবে এতে; তরুণদেরও। আমার মনে হয় সময় হয়েছে, বসে পিচের উন্নতি নিয়ে কথা বলতে হবে। এটা একদিনে হবে না, সময় লাগবে। কিন্তু যদি তারা বাউন্সি ও দ্রুতগতির উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হয়; তাহলে তাদের এটা লম্বা দৌড়ে সাহায্য করবে।

বাংলানিউজ: আপনার কি মনে হয়, এই ছেলেরা একটু দ্রুতই তারকাখ্যাতি পেয়ে যায়। মানে আপনারা এশিয়া কাপ খেলে আসার পর যেমন হলো, অথবা কালও আপনি যখন দল ঘোষণায় ছিলেন...

স্টুয়ার্ট: আমি আসলে মনে করি না গণমাধ্যমে কথা বলা কোনো সমস্যা। আর যদি হাইপের কথা বলেন- সেটা পারফরম্যান্স থেকেই আসে। এশিয়া কাপ জেতা অনেক বড় ব্যাপার। আপনি খেলোয়াড়দের দোষ দিতে পারবেন না এসব মাথায় ঢুকানোর জন্য। কারণ মিডিয়া তাদের এই সম্মানটা দিচ্ছে।

আর আসলেই এশিয়া কাপ জিতে তারা অনেক বড় কিছু অর্জন করছে- দুনিয়ায় এমন অনেক দেশ আছে যারা এখনও কিছু জেতেনি। এজন্য প্রত্যাশা এসেছে। ওরা অসাধারণ একটা দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে আমাদের ওদের বোঝাতে হবে পা আবার মাটিতে আনতে। বলতে হবে কঠোর পরিশ্রম করো।  

আর বুঝাতে হবে যে এশিয়া কাপ দুর্দান্ত অর্জন ছিল। কিন্তু সেটি আমরা পেছনে ফেলে এসেছি, এখন আর এ নিয়ে কথা না বলি। আমাদের সামনে যেটা আছে- সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার বুঝ হচ্ছে- ওরা যেটা করেছে দারুণ; কিন্তু যথেষ্ট ভালো না। আমরা প্রতিদিন আরও ভালো হচ্ছি। সামনে ফ্রাই করার জন্য আরও বড় মাছ আসবে।

বাংলানিউজ: আমি যে হাইপের কথা বললাম, ওখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও তো একটা বড় ফ্যাক্টর...

স্টুয়ার্ট: আমি যে প্রতিনিয়ত ভালো হওয়ার কথা বলেছি, সেটা শুধু খেলাই নয়; সামাজিক জীবন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও আছে ওখানে। আপনি যত সামাজিক মাধ্যমে সময় দেবেন, তত আপনি চিন্তিত হবেন। এখানেই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় আসে। এখনও ছেলেদের অনেক কিছু শিখতে হবে তাদের বেছে নেওয়া ক্রিকেটে সফল হতে হলে।  

ওরা খুব ছোট, ওরা বুঝতে পারে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক খারাপ ব্যাপার আছে। ওরা ভাবে এটা দারুণ; আমি কিছু দিলে পুরো দুনিয়া দেখছে, লাইক আসছে, মন্তব্য করছে। কিন্তু যখন সে উপরের পর্যায়ে যাবে, এই অভ্যাস ধরে রাখবে; তখন এসব নিয়ে মানুষ ট্রল আর হাসাহাসি করবে। ওই সময়ে হয়তো তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে ভিন্নভাবে দেখবে।

বাংলানিউজ: অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের পর ওদের কেমন নার্সারিং দরকার। আপনি তো জাতীয় দলেও কাজ করেছেন। ওখানে কেমন ক্রিকেটার দরকার হয় ভালো বুঝবেন...

স্টুয়ার্ট: আস্তেধীরে এগোতে হবে ওদের। এটার পর তো এইচপি আছে। এরপর আমি চাইবো ওরা ডিপিএল (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ), প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলুক। এই দলের কয়েকজন বিসিএলে (ওয়ানডে) খেলেছে, যথেষ্ট ভালোও খেলেছে। তবে সবার আগে দরকার বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম্যান্স করা।

কয়েকটা ছেলে আছে খুব দুর্ভাগা যে বিশ্বকাপে যেতে পারছে না। সবাইকে তো নিতে পারিনি। কিন্তু তাদের এগিয়ে যাওয়ার শুরুটা এইচপিতে হওয়া উচিত। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট; যদি আপনি এইচপি বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে না খেলান; আপনার এগোনো থমকে যাবে। আমার সঙ্গে এইচপি, টাইগার্স ও জাতীয় দলের কোচদের কথা হয়েছে কীভাবে ওদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলানিউজ: দুই বছর আগে এই ছেলেরা যখন আপনার কাছে এলো। তখন নিশ্চয়ই ‘র’ প্রতিভা ছিল। এরপর আপনি তাদের কী বদলালেন?

স্টুয়ার্ট: আমি ওদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি- সাফল্য নিয়ে খুব বেশি কথা যেন না বলে। সাফল্য উপভোগ করবে অবশ্যই কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ওদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে হবে। আমরা ওদের যে মেসেজ দিয়েছি- আজকে কী করেছি সেটা কোনো ব্যাপার না, আগামীকাল আমরা আরও ভালো করবো।  
আমাদের প্রতিটা দিন আরও ভালো হওয়ার পথ খুঁজে বের করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা আপনার জন্য খুব জরুরি। আপনি কোনো দলের বিপক্ষে খেললেন, সফল হলেন; পরেরবার যখন খেলবেন তারা আপনার শক্তি, দুর্বলতা সবকিছু জেনেই মাঠে নামবে।

আপনাকে এজন্য দিন দিন ভালো থেকে আরও ভালো হতে হবে। যদি আপনি নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেগুলো শক্তির জায়গা বানাতে না পারেন; তাহলে ভালো সময় লম্বা হবে না। আপনাকে বুঝতে হবে- কঠোর পরিশ্রম করা কী। আমরা ওদের এটাই বুঝিয়েছি।

বাংলানিউজ: ক্রিকেটারদের বয়স নিয়ে বাংলাদেশে সবসময় একটা অভিযোগ থাকে। এটা কি ক্ষতির কারণ হতে পারে?

স্টুয়ার্ট: এটা আসলে কে বলেছে? আমার আসলে এই ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই।

বাংলানিউজ: আচ্ছা, ঠিক আছে। বিশ্বকাপের ব্যাপারে বলুন- অনেক প্রত্যাশা। একবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে বাংলাদেশ। এবার কী আশা?

বাংলানিউজ: এটা একটা সমস্যা- আমরা এশিয়া কাপ জিতেছি, সবাই ভাবছে যে বিশ্বকাপও জিতে যাবো সহজে। ওখানে আরও ১৬টা দল আছে। যদি আমরা এটা ভাবতে থাকি বিশ্বকাপ জিতবো- তাহলে প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ে যাবো। আমরা যদি ভুল জায়গায় নজর দেই- তাহলে মনে রাখতে পারবো না আমাদের কী কাজ করতে হবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

আমি অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলে কোচিং করিয়েছি- ওখানে বোর্ডের একমাত্র প্রত্যাশা ছিল ভালো ক্রিকেটারদের প্রমোট করো, ইতিবাচক খেলার ধরন প্রমোট করো; যদি দুয়েকজন জাতীয় দলে খেলে, তাহলে এটাই সাফল্য। যুব পর্যায়ে এটাই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার চাওয়া। যখন আপনি কোনো চাপে থাকবেন না, তাহলে বুঝবেন কত সফল হতে পারে দলগুলো।
 
খেলোয়াড়রা সবাই জিততে চায়, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যদি আমরা এমন মানসিকতাই নিয়ে যাই- এই ম্যাচ জিতলে পরের ধাপ, এরপর আস্তে আস্তে ফাইনাল। তাহলে ব্যাগ গুছিয়ে আমাদের আগে আগে বাড়ি ফিরতে হবে। কোচ হিসেবে এটাই আমাদের দায়িত্ব- ওরা যেন দূরে না তাকায়।

বাইরের দুনিয়া থেকে আড়ালে থাকতে হবে। আমরা কী করেছি, তাতেই স্থির থাকতে হবে। এশিয়া কাপে আমরা যেটা করেছি, প্রতিপক্ষের ব্যাপারে ভাবিনি। আমাদের খেলার কী পরিকল্পনা, কীভাবে খেলবো ওটাতেই স্থির থেকেছি; সাফল্যও পেয়েছি। তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটা শেখার জায়গা, প্রতিপক্ষ কী করবে সেটা না ভেবে তোমার দলের জন্য ভূমিকাটা পালন করতে হবে।

বাংলানিউজ: আপনি ক্রিকেটাররা জিততে চায় বললেন, বোর্ড আপনার কাছে কী চেয়েছে?

স্টুয়ার্ট: তারা উন্নতি চায়। এর মধ্যে যদি আমরা জিতি, তাহলে তো খুব ভালো। আমি বোকা নই যে বলবো এশিয়া কাপের পরও স্কোয়াড খোঁজার চেষ্টা করছি- দলের রিজার্ভ ও ব্যাক আপ স্কোয়াড আছে; আমাকে ওদের সুযোগ দিতে হয়েছে এতদিন। সবাই আমাকে এশিয়া কাপের আগে অবধি বলতো দল ভালো করছে না।

বাংলানিউজ: এটা তো আসলে সত্যিই, দলটা তো ভালো করছিল না...

স্টুয়ার্ট: আপনিও বলছেন আমরা ভালো করিনি? ঠিক আছে তাহলে শুনুন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা ছয়টা টুর্নামেন্ট খেলেছি; চারটা জিতেছি, এটা কি খারাপ? মানুষজন এসব বলে কারণ তারা একটা ম্যাচ দেখে। আমি জানি খেলোয়াড় ও আমরা কী করেছি। মানুষের কথা আমাকে আসলে হতাশও করেছে; কারণ আমি মনে করি চারটা সিরিজ জেতা ভালো অর্জন।

অনেক খেলোয়াড় ডেভেলপম্যান্ট প্রসেসের মধ্যে ছিল। আমরা খেলোয়াড় বাছাই করছিলাম তখন। ওগুলো জিততেই হবে এমন ছিল না, আমরা ওখানে ক্রিকেটারদের পরখ করে দেখেছি। এশিয়া কাপ ‘মাস্ট উইন’ ছিল, সবগুলো ম্যাচ জিতেছি। আমরা যেখানে শুরু করেছিলাম, এখন যেখানে আছি; অনেক উন্নতি করেছি। তবে আবারও বলছি, ছেলেদের পা মাটিতে রাখতে হবে।

বাংলানিউজ: আপনার এই দলের কোচিং স্টাফে ওয়াসিম জাফর আছেন। তার প্রায় ২০ হাজার প্রথম শ্রেণির রান আছে, ভারতের হয়ে খেলেছেন। এটা খেলোয়াড়দের কীভাবে অনুপ্রাণিত করেছে?

স্টুয়ার্ট: যখন আপনি এমন কোচ পাবেন, যারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেছে, তখন ক্রিকেটাররা তার কথা শুনে। পরে সেটি নিজের খেলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। ছেলেদের জন্য দারুণ ব্যাপার ওয়াসিম জাফরের মানের ওপেনারের সঙ্গে কাজ করা। অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা তাদের মানে পারফর্ম করতে পারছে না।

এটা এই কারণে নয় যে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা অথবা গাইডেন্স কম হচ্ছে। আমরা জানি, ওরা কী করতে পারে। যদি ওরা এটা বুঝতে পারে, ভারতের অন্যতম সেরা ওপেনার ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারের সঙ্গে আছে; তাহলে হয়তো আরেকটু বেশিই কথা বলতো।

বাংলানিউজ: সমর্থকদের জন্য আপনার কোনো বার্তা আছে বিশ্বকাপ নিয়ে?

স্টুয়ার্ট: ধৈর্য ধরুন। ছেলেরা যা করছে সেটা উপভোগ করুন। ওরা ওদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। যদি তারা সফল না হয়, এর মানে এই না যে এটা নিয়ে কেয়ার করছে না। বেশ ভালোভাবেই করছে। ওরা যখন ম্যাচ হারে, প্রায় কান্না করে দেয়। ধৈর্য ধরুন। ভালো কিছুই হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২৪
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।