সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন অনেকেই। বাদ যাননি ক্রিকেটাররাও।
এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে আজ আশরাফুল তুলে এনেছেন চলমান আন্দোলনের কয়েকটি অধ্যায়। এমনকি ক্রিকেট তারকাদের মধ্যে যারা এখনও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ তাদের খোঁচাও দিয়েছেন তিনি, 'যা দেখি তা সবই সত্যি নয়। আবার, যা দেখিনা তা সবই মিথাও নয়! জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ আপনি যতবড় ক্রিকেটার বা স্টারই হোন না কেন; আপনার দেশ, আপনার দেশের শিক্ষার্থী তথা তরুণ সমাজ সর্বোপরি দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আপনার অহংকার আর তাদের সাপোর্ট ও ভালোবাসাই আজ আপনি তারকা, মহাতারকা। '
ক্রিকেটাঙ্গনের যারা এই আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছেন তাদের প্রশংসাও করেছেন আশরাফুল। আর যারা চুপ আছেন তাদের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন প্রশ্নও, 'অনেককেই দেখলাম শিক্ষার্থীদের হতাহতে, গ্রেপ্তারে ও মৃত্যুতে সহানুভূতি, সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার ডিরেক্ট/ইনডিরেক্ট পোস্ট দিয়েছেন আমাদের ক্রিকেটাঙ্গন থেকে। তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। তবে, শিক্ষার্থীদের আমাদের প্রতি আশাটা আরো বেশি; তাই, অনেকেই বলছেন, আমরা কেন ক্রিকেটাররা একটা সমবেদনা মূলক নিরপেক্ষ একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেও সংকোচবোধ করছি? সেই ক্ষোভ থেকেই নাকি বড় বড় তারকাদের নাকি মানহানি করা হচ্ছে!'
'তাদের ভাষ্য- দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অর্থাৎ পৃথিবীর ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ ছাত্র-হত্যাযজ্ঞ (চায়নার পরেই) নিয়ে নিউট্রাল একটি সত্য বিবৃতিও কি আমাদের কাছ থেকে এই ক্রিকেটপাগল জাতি আশা করতে পারেন না? যারা কিনা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জেগে আমাদের খেলা দেখতেন, বিজয়ধ্বনিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসগুলো মাতিয়ে রাখতেন। '
তবে আশরাফুলের আশা, তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে যারা চুপ আছেন, তারাও কথা বলবেন শিগগিরই, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বড় বড় তারকারা যারা এখনো আপনাদের সাথে যুক্ত হন নাই। তারা হয়তো বিশেষ অসুবিধার মধ্যেই আছেন, হয়তোবা যোগ দেবেন অতি দ্রুতই আপনাদের সাথে, আপনাদের নৈতিক আন্দোলনের সাথে। '
আন্দোলন নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে আশরাফুল লিখেছেন, 'আমি চাই, শুধু কোটার বৈষম্য নয় বরং দেশে বিরাজমান সকল সংকট ও বৈষম্য মুক্তি পাক। (খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনসহ সকল বে-আইনি জিনিস বন্ধ হোক, সম্ভব হলে এখনই (এই আন্দোলনের মাধ্যমেই হোক)। '
চলমান আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পর দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে আশরাফুল লিখেছেন, 'দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ; বলার কোনো ভাষা আমার নাই। বুকচেতিয়ে দেওয়া দু:সাহসী সাঈদ বা পানি লাগবে কারো পানি বলা টগবগে যুবক মুগ্ধ এদের মৃত্য সবসময়ই চোখের সামনে ভেষে উঠে... তবুও সমবেদনা জানাই আন্দোলনে নিহত শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি। চাইনা আর একটা মৃত্যুর ঘটনাও ঘটুক। চাই ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত ক্লাসে ফিরে যাক। সবকিছু স্বাভাবিক হোক। '
তবে চলমান বাস্তবতায় কোনো ক্রিকেটাররা সত্য অস্বীকার করবেন বলে মনে করেন না আশরাফুল, 'প্রিয়ভক্তদের উদ্যেশ্যে বলছি; আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি,
আমাদের ক্রিকেটাররা সত্যের পক্ষে কেউ বেশি কিছু লিখুক বা নাই লিখুক, মনে মনে কিন্তু সত্যটা অস্বীকার করে না, কেউ করবেও না। তারা পরিস্থিতির স্বীকার হয়তোবা! তবে এটিও বলবো; যা দেখি তা সবই সত্যি নয়। আবার, যা দেখিনা তা সবই মিথাও নয়!'
আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের ডিবি অফিসের বিবৃতি দেওয়ার একটি ছবি পোস্টে শেয়ার করে আশরাফুল লিখেছেন, 'এখান থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে...!'
আন্দোলন নিয়ে দেরিতে মুখ খোলার জন্য আশরাফুল দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, 'বি.দ্র. আমি কয়েকমাস ধরে মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে আছি, নেট-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো; তাই আপনাদের মহতি এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হতে দেরি হয়ে গেল। তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। '
শেষে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ভাইদের প্রতি অনুরোধ, নিরীহ কারো ওপর অধিক বলপ্রয়োগ করবেন না; কারণ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আপনারই ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বা আপনার মতোই অন্য কারো স্বজন। নিরপেক্ষ তদন্তের অধীন- যে বা যারাই খুন, হত্যাযজ্ঞ ও স্থাপনা ধ্বংসে নিয়োজিত ছিল তাদের সঠিক ও দ্রুতসময়েই দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত হোক। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাক। সবকিছু দ্রুতসময়েই স্বাভাবিক হোক। '
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২৪
এমএইচএম