ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

আয়ারল্যান্ড-ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড, জোয়েস এখন ‘উপভোগ’ খোঁজেন মেয়েদের ক্রিকেটে

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
আয়ারল্যান্ড-ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড, জোয়েস এখন ‘উপভোগ’ খোঁজেন মেয়েদের ক্রিকেটে

এক পরিবারের পাঁচ ভাই-বোন জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। এড জোয়েস তাদের একজন।

তবে বাকি দুই ভাই ও দুই বোনের চেয়ে তার পথচলা আলাদা। টানা দুই বিশ্বকাপ তিনি খেলেছেন ভিন্ন দুই দেশের হয়ে। ইংল্যান্ডের হয়ে যে ম্যাচে অভিষেক, তখন আয়ারল্যান্ডের দলে খেলছেন তার ভাই ডমিনিক।  

এখন জোয়েসের ভূমিকা ভিন্ন— বাংলাদেশে এসেছেন আয়ারল্যান্ড নারী দলের হেড কোচ হয়ে। রোববার মিরপুরে বাংলানিউজের এই প্রতিবেদককে তিনি শুনিয়েছেন জন্মভূমি ছেড়ে ইংল্যান্ড যাওয়া আবার ফিরে আসার গল্প। কথা বলেছেন আয়ারল্যান্ডে মেয়েদের ক্রিকেট নিয়েও...

বাংলানিউজ : বাংলাদেশে ফিরে কেমন লাগছে? এখানে তো আপনার একটি বিশ্বকাপ খেলার স্মৃতিও আছে...

এড জোয়েস : হ্যাঁ, আমি এখানে বিশ্বকাপ খেলেছি ছেলেদের হয়ে। বাংলাদেশ সেই ম্যাচটা জিতেছিল। ক্রিকেট খেলার জন্য দারুণ জায়গা এটা। আমাদের মেয়েরাও খুব রোমাঞ্চিত। অনেক তরুণ ক্রিকেটার আছে। কিছুটা অনভিজ্ঞতা আছে, তারা কন্ডিশন সম্পর্কে খুব একটা জানে না। তাদের জন্য শেখার ভালো একটা জায়গা হবে এটা।  

বাংলানিউজ : আপনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই দলের সঙ্গে আছেন। যাত্রাটা কেমন ছিল?

জোয়েস : বেথ (পাশে থাকা ম্যানেজারকে দেখিয়ে) আমার সঙ্গে পুরো যাত্রায় ছিল। আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, এই দলটা এর চেয়ে এখন অনেকটা আলাদা। অনেক তরুণ ক্রিকেটার দলে এসেছে, তারা ভালোও করছে। অনেক পালাবদল হয়েছে এই সাড়ে পাঁচ বছরে। আমরা কখনো এখানে (বাংলাদেশে) খেলিনি এই সময়ে। দলের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। আমি এখনো কাজটা (মেয়েদের কোচিং) উপভোগ করছি। আমাদের কয়েকজন খুব ভালো কিছু ক্রিকেটার আছে। দেখা যাক তারা কী করতে পারে।  

বাংলানিউজ : আপনি তো বোধ হয় আয়ারল্যান্ডের ছেলেদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন?

জোয়েস : সেটা আসলে একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। বোর্ড থেকে আমাকে দায়িত্ব নিতে বলেনি। আমি মেয়েদের দায়িত্বেই তখন অনেক খুশি ছিলাম। একটা গুঞ্জন ছিল আমি হয়তো দায়িত্ব নেব। কিন্তু সেটা কখনো অপশনও ছিল না। আর দুটোই তো আন্তর্জাতিক দল! 

বাংলানিউজ : আয়ারল্যান্ডে তো ছেলেদের ক্রিকেটও খুব বেশি জনপ্রিয় নয়, এমন জায়গায় মেয়েদের ক্রিকেট খেলা বা তাদের সঙ্গে কাজ করা কতটা কঠিন?

জোয়েস : ক্রিকেট অবশ্যই তেমন বড় খেলা নয়। রাগবি, সকার আরও বড় খেলা। তবে ক্রিকেট দিন দিন আরও বড় হচ্ছে। এখন টাকা আসছে। কোচিং স্টাফও বেশ ভালো। মেয়েদের ক্রিকেটে আমরা ভিত্তিটা আরও শক্ত করার চেষ্টা করছি।  

যেন আরও বেশি ক্রিকেটার থাকে এবং দলে জায়গা পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। শেষ দুটো সিরিজে এসে আমাদের একটু বেগ পেতে হচ্ছে কাকে নিয়ে কাকে বাদ দেব, প্রথমবার বোধ হয় এমন হলো। আমার মনে হয় কোচিং স্টাফ হিসেবে এটা আমাদের জন্য বড় কৃতিত্ব।  

বাংলানিউজ : বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তো আপনি ছেলেদের কোচই ছিলেন, পরে মেয়েদের ক্রিকেটে কেন এলেন?

জোয়েস : মেয়েদের ক্রিকেটের হেড কোচ হওয়ার প্রস্তাব পাওয়াটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আমি আসলে এই কাজটা করতে চেয়েছিলাম। আমি আয়ারল্যান্ড ছেলেদের উলভস ও ‘এ’ টিমের হয়ে কাজ করেছি। ২০১৮ সালে কক্সবাজারেও এসেছিলাম। আমি সেটা উপভোগ করেছি। কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে কাজ করাও খুব উপভোগ করি। খুব তরুণ দল। এটা আমার কোচিংয়ের দর্শনের সঙ্গে খুব ভালো যায়; ক্রিকেটারদের স্কিলের উন্নতি করতে পছন্দ করি আমি।  

বাংলানিউজ : আপনার খেলোয়াড়ি জীবনে আসি। মডার্ন ক্রিকেটে আপনি প্রথম আইরিশ ক্রিকেটার যে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। সেই সিদ্ধান্তের কারণ কী ছিল?

জোয়েস : আয়ারল্যান্ড ওই সময় পেশাদার দল ছিল না। আমি ইংল্যান্ডে খেলতাম, সেখানে থাকতামও। ক্যারিয়ারের দিক থেকেও এটাই ভালো ছিল। আমি লায়ন্সের হয়ে কিছু ম্যাচ খেলেছি, কাউন্টিতেও সময়টা উপভোগ করেছি। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করলে সিদ্ধান্তটা দরকার ছিল।  

এই কথাটা প্রথম আসলে মাথায় আসে ২০০১ সালে। মাইক গ্যাটিং মিডলসেক্সে আমাকে বলে, তুমি তো ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার চেষ্টা করতে পারো। এর আগে অবধি এটা আমার মাথায় ছিল না। আমি জানতামও না এমন যে হতে পারে।

বাংলানিউজ : আপনার ইংল্যান্ড অভিষেকটা তো খুব মজার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই, সেই দলে আপনার ভাই খেলছিল...

জোয়েস : অদ্ভুত একটা ব্যাপার ছিল। আমার বাবা-মা খেলা দেখতে এসেছিলেন। তারা চেয়েছিলেন আমি ভালো করি, কিন্তু আয়ারল্যান্ড যেন জেতে। তারা আয়ারল্যান্ডকেই সমর্থন দিচ্ছিলেন। এরপর আমি ভালোও করিনি, আইরিশরাও জেতেনি।  

বাংলানিউজ : পরে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এলেন কেন?

এড জোয়েস : বিশ্বকাপটা খুব একটা ভালো যায়নি। কোন সন্দেহ ছিল না যে কিছু মানুষকে মূল্য চোকাতে হবে। তখন খেলার সুযোগও খুব বেশি পাচ্ছিলাম না। যেটা ছিল খুব হতাশার। পরে ২০০৯ সালের শীতে ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড জানতে চায়, আমি ফিরতে আগ্রহী কি না। আমি তখন বললাম অবশ্যই।

আসলে আমি খুশি ছিলাম ফিরতে পেরে। কেভিন ও’ব্রায়ান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই শতকটা করেছিল, আমরা কয়েকটা বড় ম্যাচও জিতেছিলাম। উপমহাদেশে ক্রিকেটটা অনেক জনপ্রিয়, আমরা অনেক উপভোগ করেছি সেবার (২০১১ সালে)।  

বাংলানিউজ : আপনি যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে হেঁটে এউইন মরগান তো ইতিহাসেই জায়গা করে নিয়েছেন...

জোয়েস : এউইন আমার খুব ভালো বন্ধু। কয়েক বছর আগে ওর বিয়ে হলো। কালকে তো দেখলাম আইপিএলের অকশনেও আছে।  

বাংলানিউজ : শেষ প্রশ্ন, আপনি তো টেস্ট খেলতেই ইংল্যান্ডে গিয়েছেন, পরে আয়ারল্যান্ডের হয়েই টেস্ট খেলেছেন অনুভূতিটা কেমন?

জোয়েস : সেটা ছিল আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য। আমি খুবই খুশি যে, পেশাদার ক্রিকেটে আমি শেষ করেছি একটা টেস্ট ম্যাচ খেলে!

বাংলাদেশ সময় : ১৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
এমএইচবি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।