ঢাকা, রবিবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুন ২০২৫, ১৮ জিলহজ ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘চোকার’ থেকে চ্যাম্পিয়ন—দক্ষিণ আফ্রিকার ২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৮, জুন ১৪, ২০২৫
‘চোকার’ থেকে চ্যাম্পিয়ন—দক্ষিণ আফ্রিকার ২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান জয়সূচক রানের পর লর্ডসের গ্ল্যালারিতে সতীর্থদের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বাভুমার উল্লাস/সংগৃহীত ছবি

২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল তাদের বহু কাঙ্ক্ষিত আইসিসি পুরুষদের শিরোপা। লর্ডসের পবিত্র মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট উঠল টেম্বা বাভুমার দলের মাথায়।

১৯৯৮ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম আইসিসি ট্রফি। যদিও সেটি পূর্ণাঙ্গ ‘ওয়ার্ল্ড কাপ’ ছিল না। এরপর কেটে গেছে প্রায় তিন দশক। এই সময়ে গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, জ্যাক ক্যালিস, অ্যালান ডোনাল্ড, গ্যারি কারস্টেন—সবাই এসেছেন, গেছেন; কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রফি খরা কাটেনি।

আজকের এই জয়ে তারা শুধু ট্রফিই জিতল না, ‘চোকার’ তকমাও ঝেড়ে ফেলল।

বাভুমা ও এইডেন মারক্রাম গড়েছেন এক যুগান্তকারী জুটি—যে জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দিয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল জয়। ভাবুন, ১৯৯২-র ‘ডিএলএস দুঃখ’, ১৯৯৯ এর এজবাস্টন ট্র্যাজেডি, ২০০৩ এর প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ, ২০১৫-এর অকল্যান্ডে হৃদয়ভাঙা কিংবা ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিস করা সুযোগ—সব আজ অতীত।

১৪ জুন, ২০২৫—এই দিনটিকে তারা মনে রাখবে চিরকাল।

কিভাবে বদলে গেল দৃশ্যপট?

১. রাবাদা—আত্মপ্রত্যয়ের এক নাম

কাগিসো রাবাদা সবসময়ই থেকে গেছেন আড়ালে। বিশ্ব ক্রিকেটে ফাস্ট বোলার বলতে সবাই বলে বুমরাহ, স্টার্কের কথা। কিন্তু এবার নিজের ম্যাচ ফিগার ৯/১১০ করে রাবাদা বুঝিয়ে দিয়েছেন—তাকেও সেই উচ্চতায় স্থান দেওয়া উচিত। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে এসে প্রথম তিন ওভারে এক রানও দেননি, এরপর ধস নামান অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ে।

২. ডেভিড বেডিংহামের নীরব অবদান

৩১ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়ালেন বেডিংহাম। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল প্রত্যাশার নিচে, কিন্তু তার ১১১ বলে ৪৫ রানের ইনিংস ছিল কঠিন কন্ডিশনে সত্যিকারের দৃঢ়তা। তাকে নিয়ে গর্ব করতেই পারে সাউথ আফ্রিকান ডমেস্টিক ক্রিকেট।

৩. জয়ের নায়ক এইডেন মারক্রাম

প্রথম ইনিংসে ‘ডাক’, দ্বিতীয় ইনিংসে ইতিহাস। জানুয়ারিতে মাত্র ১০৭ ওভারে শেষ হওয়া টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১০৬ রান করেছিলেন তিনি। আর এবার লর্ডসে ১৩৬ রানের ম্যারাথন ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের গুঁড়িয়ে দিলেন। লর্ডস অনার্স বোর্ডে লেখালেন নিজের নাম।

৪. লর্ড বাভুমা

এই ম্যাচের ‘লর্ড’ বাভুমা। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলেছেন, তবু দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাননি। প্যাট কামিন্স-হ্যাজলউড-স্টার্কদের বোলিং সামলে ১৪৭ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি গড়েছেন মারক্রামের সঙ্গে। তার এই আত্মত্যাগের লড়াই নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবল, রাগবি, ক্রিকেট—সব ক্রীড়ার মধ্যে অন্যতম প্রেরণামূলক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।