ঢাকা: টি-টোয়েন্টিতে টুকটাক ব্যাটিং দেখতে গ্যালারিতে ভিড় করে না দর্শকরা। তারা চায় প্রিয় ক্রিকেটারের ব্যাটে বল লেগে যেন তাদের কাছেই ধরা দেয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এলেই যেন ক্রিস গেইলের ব্যাটের দিকে চেয়ে থাকে সবাই। যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তিনি। চারটি আসর শেষে বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিকও ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ওপেনার। তবে সব ছাপিয়ে এবারের আলোচনায় উঠে আসছে প্রায় দেড়যুগ ধরে অক্ষুণ্ন থাকা দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেওয়া কোরি এন্ডারসন।
নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেটারের জন্য এটা প্রথম বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বছরের প্রথম দিন কুইন্সটাউনে যে বিধ্বংসী পারফরমেন্স করেছিলেন, তা টি-টোয়েন্টিতেও দেখাতে মরিয়া এন্ডারসন। যদিও ৮ ম্যাচে তেমন ছয়ের দেখা নেই। দুটি ছক্কা পেয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। অপেক্ষা করতে তো দোষ নেই।
চিরচেনা গেইলের কথায় আসা যাক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টিতে ৩০ ও ৪৩ রানের মোটামুটি ঝড় তোলা ব্যাটিং করেছেন তিনি। বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই উদ্বোধনী ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে দর্শকদের মাতানো গেইল ৪৩টি ছয় নিয়ে সবার উপরে।
বিশ্বমঞ্চে তার ধারেকাছে কেউ নেই, যৌথভাবে ২৭টি ছয় নিয়ে তার পরে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন ও ভারতের যুবরাজ সিং। বোলারদের প্রতি নির্দয় গেইল পেশাদার ক্রিকেটে দ্রুততম শতকের মালিক। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএলে ৩০ বলে শতক পেয়েছিলেন তিনি। অবশ্য ৫৭ বলে সর্বোচ্চ ১১৭ রানে গড়া তার বিশ্বকাপ রেকর্ডটি গতবার ভেঙে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
এবারের বিশাল চমক এই কিউই তারকাও। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে গড়া গেইলের সর্বোচ্চ ১১৭ রানের রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। ৫৮ বল খেলে ১১ চার ও ছয় সাতে ১২৩ রানে সবার উপরে কিউই তারকা। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ছয় হাঁকানোর রেকর্ড তার। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৬৪ ম্যাচ খেলে একবারে বল সীমানা ছাড়া করেছেন ৮০ বার। রানেও শীর্ষে, এক হাজার ৯৫৯ রান তার।
বলা যায় ভারতের মারকুটে ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিংয়ের কথা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাঝেমধ্যে উপেক্ষিত থাকতে হয়েছে তাকে। তবে নিজেকে প্রমাণ ঠিকই করিয়েছেন সুযোগ পেলেই। আর তার ব্যাটের ঝলকানি তো দেখা গিয়েছিল উদ্বোধনী বিশ্বকাপেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় বলে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন এই বাঁহাতি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩৪ ম্যাচে ৫৯ ছক্কার মালিক তিনি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করা অ্যারন ফিঞ্চও কিন্তু নিজেকে ভালোভাবেই চেনাচ্ছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার করা ১৫৬ রানই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন সর্বোচ্চ। তার স্ট্রাইকিং রেটও জ্বলন্ত। অস্ট্রেলিয়ার এই উদীয়মান ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকিং রেট ১৩ ম্যাচে ১৬৯.৫৯, রান ৪৬৩! ছয় আছে ২৩টি।
অস্ট্রেলিয়ার মূল্যবান সম্পদে পরিণত হওয়া ডেভিড ওয়ার্নার তো তার জ্বলন্ত ফর্ম ধরে রেখেছেন। ৪৭ ম্যাচে ৫৯ ছয় তার। একমাত্র অধরা শিরোপাটি দলকে এনে দিতে ঝড়ো ব্যাটিংই তার কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর ওয়ানডে ও টেস্টে শতক হলেও আক্ষেপ থেকে গেছে ক্ষুদ্রতম সংস্করণে। সেটাও পূর্ণ করতে চান তিনি।
ওয়ানডের দুই নম্বর ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স এই ফরম্যাটেও কম নয়। সব ধরনের ফরম্যাটে পারফেক্ট হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই প্রোটিয়া তারকা ৫১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ৮৬৭ রান করেছেন। ২৬টি ছয় আছে তার দখলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক চমক অপেক্ষা করছে- কুইন্টন ডি কক। প্রথম বিশ্বকাপ অভিষেকের আগে নিজের ব্যাট ভালোভাবেই ঝালাই করে নিচ্ছেন তিনি। ১১ ম্যাচে ছয়টি ছয় তার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান করেছেন ২৫৮ রান।
কদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে অভিষেকেই শতক হাঁকানো দ্বিতীয় ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন মাইকেল ল্যাম্ব। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টিতেও দুর্দান্ত খেলার প্রত্যাশা দিয়েছেন এই পারফরমেন্সে। ২১ ম্যাচে ১৬ ছয় তার ব্যাটে এসেছে।
ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শিরোপা এনে দিতে এবারের নজর থাকছে দুই নম্বর ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলসের দিকে। ল্যাম্বের মতোই জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় তার ব্যাট। ২৫ ম্যাচে ১৯ ছয়ের মার আছে তার ব্যাটে।
টি-টোয়েন্টিতে এক হাজারের উপর রান করা ১৩ জনের অন্যতম পাকিস্তানের উমর আকমল। বাংলাদেশের মাটিতে এশিয়া কাপে দ্বিতীয় শতক হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির খরা কাটানো এই ব্যাটসম্যানও ঝলক দেখাতে প্রস্তুত। ৫২ ম্যাচে ৩১টি ছয়ের মালিক সবমিলিয়ে করেছেন ১০৯৩ রান।
ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ৩৩৩টি ছয়ের মালিক শহীদ আফ্রিদি তো এশীয় লড়াইয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন। তার ব্যাটেও বিশাল বিশাল ছয়ের দেখা মিলতে পারে। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর জয় এনে দিয়েছিলেন। সেই ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন কি না তা দেখা যাবে কদিনের মাঝেই।
দেশের বাইরের সব তারকাদের নিয়েই আলোচনা করা হলো। বাংলাদেশও নিশ্চয় হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না। দলে আছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দুজনেই শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি হাঁকিয়েছেন। দেশের পক্ষে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আটটি ছক্কা মেরেছেন ঝরে পড়া মোহাম্মদ আশরাফুল। ছয়টি নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সাকিব ও জুনাইদ সিদ্দিকী। বিশ্বমঞ্চে সর্বোচ্চ ২৫২ রান করা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান সাকিব থাকলেও নেই জুনাইদ। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দেশের সর্বোচ্চ ছয়ের মালিক মুশফিক ও মাশরাফি মুর্তজা। দুজনের দখলে ১৪টি করে ওভার বাউন্ডারি। একটি কম নিয়ে দুইয়ে মাহমুদউল্লাহ। আছেন হার্ডহিটার খ্যাত তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ১৫ মার্চ ২০১৪