মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে: খেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই উৎসুক জনতা স্টেডিয়ামের চারপাশ ঘিরে মুখরিত। তাদের একটাই স্বপ্ন বাংলাদেশের পতাকা আকাশে উড়বে বীরের মত।
মাঠে আসতে পারবেন না জেনেও মাঠের চারপাশ ঘিরে তাদের বিচরণ দেখে বলাই যায় টিকিটের হাহাকার। মনে মনে হয়তো টিকিট খুঁজেছে কি না কে জানে? স্টেডিয়ামের মূল ফটকের জটলা দেখে এগিয়ে দেখি ক্রিকেট পাগল এক মুক্তিযোদ্ধার বিশাল সাজসজ্জা। ৭০ অর্ধবয়সী এই মানুষের গায়ে পোশাকে লেখা তার পরিচয়। ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন নূও বখত। হাতে দোতারার সুর তুলে ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। কিছু জানতে চাওয়ার আগেই উত্তর সোজা কথাই বললেন আজ আমার কথা শুনলে ঠিকই জিতব ওরা। মাথা ঠান্ডা করে খেলতে হবে। আর বল পায়ের কাছে দেওয়া যাবে না। টিকিট কই পেয়েছেন এই কথা জানতে চাইলে বলেন, টিকিট লাগে না অনেক বছর মাঠে আসছি, সবাই আমাকে চেনে। আজ বাংলাদেশ জিতবে মুক্তিযোদ্ধার আত্মা শান্তি পাবে। আমরা বীরের জাতি হারতে শিখিনি।
নাম না জানা ৩৫ বয়সার্ধ এক মহিলার কথা আড়ি পেতে শোনা গেল, তিনি এক আত্মীয়ের কাছে দশটা টিকিট চেয়েছেন সপরিবারে মাঠে আসবেন বাংলাদেশের জয় দেখার জন্য। তার আত্মীয় তাকে জানিয়েছেন দশ কেজি সোনার চেয়ে দশটা টিকিট বাঙ্গালীদের কাছে বেশী মূল্যবান।
সোনার গাঁ বাসী আলাউদ্দিন খাঁ মাঠে আসা সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। বংশীবাদক এই দর্শক নিয়মিত গ্যালারীতে সূর তুলে বাংলার গ্রাম্য ঐতিয্য তুলে ধরেন। তাকে ঘিরে সবসময় ২৫-৩০ জন কিশোরের জটলা। তিনি আপন মনে সূর তুলেছেলে আপন মনে। মাহবুবব নামের এক বালক পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন তার কথাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সে মাঠে আসে দুটো পয়সা কামাতে। গত এশিয়া কাপের খেলা শেষে বেশ কিছু প্লাকার্ড, ফেস্টুন সংগ্রহ করেছেন। চার-ছক্কা লেখা এই প্লাকার্ড সে দশ টাকা দামে বিক্রি করছে। খেলা দেখা হবে না জানে, তবে এটাও জানা বাংলাদেশ দল জিতলে বেচা বিক্রি ভাল হয়।
সবচেয়ে বড় কথা আমাদের ক্রিকেট আজ এমন একটা জায়গায় পৌছে গেছে যেখানে আমাদের মাঠে আর মাঠের বাইরের সব ভালো লাগা এক সূতোই গেঁথে গেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জয় যেমন ইতিহাস, তেমনি মাঠের বাইরের আবেগও ইতিহাসের বিরল স্বাক্ষী।
চার ছক্ক হই হই, বল উড়াইয়া গেল কই...??
আসলেই চার ছয়ের সাথে আমাদের গোটা দেশের আবেগও আকাশের সীমানা ছেড়ে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁ স্থানে নাম লিখিয়েছে তা সারা দুনিয়ার ক্রিকেট ভক্তদেরও জানতে বাদ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ১৬ মার্চ ২০১৪