ফতুল্লা থেকে: বৃষ্টি ধোয়া হয়ে থাকলো ফতুল্লা টেস্টের চতুর্থ দিনটাও! পঞ্চম আর শেষ দিনটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তেমন কোনো পূর্বাভাস নেই। বরং আবহাওয়া দপ্তর বলছে, টেস্টের শেষ দিনেও বৃষ্টি হতে পারে।
আব্রাহম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্সকে যিনি স্বস্তিতে রাখলেন তার নাম হরভজন সিং। দুই বছর পর টেস্ট দলে ফিরে তুলে নিলেন মুমিনুল হকের (৩০) উইকেটটা। যে মুমিনুল হুমকিতেই ফেলে দিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ডটাকে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান টানা এগারটা পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলে থেমে গেলেন। এবিডির টানা বারো ইনিংসের রেকর্ডটা মুমিনুলের আর ছোঁয়া হলো না।
এবিডি যদি স্বস্তিতে থাকেন, তাহলে মুমিনুলের অস্বস্তি হতে পারে এই ভেবে; অপ্রয়োজনীয় উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন তিনি। হরভজন সিংহের বলে উড়িয়ে শট খেলতে গিয়ে মিডঅফে উমেশ যাদবের হাতে ক্যাচ দিলেন বাংলাদেশ দলের এই ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান। এরপর মুশফিক আউট হলে দলের অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। কিন্তু সেটা আর বাড়তে দিলো না স্বস্তির বৃষ্টি! গোটা দিনে প্রথম সেশনের সেই ৩০ দশমিক এক ওভারের বেশি আর খেলাই যে হলো না! আগের দিনের ৬ উইকেটে ৪৬২ রানেই ভারত তাদের প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। রৌদ্র উজ্জ্বল সকাল হারিয়ে গেলো দুপুর আসার আগেই। এগারোটা পঞ্চাশেই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। কাভার ঢাকা উইকেট মাঝখানে এক ঝলক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আবার ঢাকা পড়তেও খুব বেশি সময় লাগেনি। সৌজন্যে সেই বৃষ্টি!
বৃষ্টি ভেজা স্বল্প আয়ুর চতুর্থ দিনে অবশ্য একজনের রেকর্ডের আট বছরের আয়ু শেষ হলো! নিজের রেকর্ড অন্যের মালিকানায় চলে যেতে দেখলেন তিনি মাঠে বসেই। ভালো লাগলো রের্ডকটা অন্যের মালিকানায় চলে যেতে দেখলাম মাঠে বসে। আবার খারাপ লাগলো আমার রেকর্ডটা ভাঙতে আট বছর সময় লাগলো! এটা আরও আগেই ভেঙে যাওয়া উচিত ছিলো। - বক্তার নাম হাবিবুল বাশার।
টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশের পক্ষে ১৩ জুন ২০১৫-র সকাল দশটার আগ পর্যন্ত যিনি সবচেয়ে বেশি রানের মালিক ছিলেন। ৫০ টেস্টে হাবিবুলের সেই ৩,০২৬ রানের রেকর্ডটা ভেঙে দিলেন তামিম তার চেয়ে দশ টেস্ট কম খেলে। ৪০ টেস্টে তামিমের রান এখনো পর্যন্ত ৩,০৩৯। ভারতের বিপক্ষে এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৯ রান করে অশি^নের অফস্পিনে স্টাম্পড হয়ে যান এই বাঁহাতি ওপেনার। আর এই ইনিংসটা খেলার পথেই ইশান্ত শর্মার বল লং লেগে ঠেলে দিয়ে ডাবলস নিয়ে ব্যক্তিগত ৭ রানে পৌঁছাতেই তামিম বনে গেছেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক। ওয়ানডেতেও ওই রেকর্ডটা তার দখলে।
তামিমকে অবশ্য ডেসিংরুমে গিয়েই অভিনন্দন জানিয়েছেন হাবিবুল। আর দিন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তামিম পরিষ্কার বললেন, একটা লম্বা ইনিংস খেলে এখানে আসতে পারলে আরও ভালো লাগতো। তারপরও ভালো লাগছে টেস্ট আর ওয়ানডে দু’ফরম্যাটেই বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান আমার। ’ সঙ্গে একটা আক্ষেপের কথাও জানালেন ‘প্রিন্স অফ চিটাগং’। বাশার ভাইয়ের রানটা আমি টপকে গেলাম তার চেয়ে দশ টেস্ট কম খেলে। কিন্তু আমার সময় লাগলো আট বছর! কারণ; বছরে আমরা টেস্ট খেলি তিন থেকে চারটা। এটা যদি সাত-আটটা হতো তাহলে হয়তো আরও আগে রানটা করতে পারতাম। ’
তবে তামিম নিশ্চিত খুব তাড়াতাড়ি তার রানটা টপকে যাবেন কেউ না কেউ। এবং এই কেউ না কেউ-র তালিকায় যে নামটাকে সবার আগে রাখলেন তামিম, তিনি অবশ্য তাকে হতাশ করলেন এই দিনে। এবং সেই তিনি মুমিনুল। ‘ জানি, ও রেকর্ড-টেকর্ড নিয়ে খুব বেশি ভাবে না। তারপরও এবি ডি ভিলিয়ার্সের নামের পাশে আজ নামটা ওর হতে পারতো। কিন্তু মুমিনুল আউট হয়ে গেলো! জানি না ও কতোটা হতাশ। তবে আমি প্রচণ্ড রকম হতাশ ওর রেকর্ডটা না হওয়ায়। আর আমি মনে করি বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের মালিক হতে ও খুব বেশি সময় নেবে না। ’ হতাশার পাশাপাশি মুমিনুলকে নিয়ে আশার কথাটাও শোনালেন তামিম।
তবে বৃষ্টি-ই যে টেস্টের শিরোণাম হয়ে দাঁড়িয়েছে,সেই টেস্টে আর কি আশা করতে পারে বাংলাদেশ কিংবা ভারত? এই ম্যাচে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইনিংস এসেছে যার ব্যাট থেকে সেই শিখর ধাওয়ান অবশ্য হাসতে হাসতে একটা কথাই বললেন, ‘আমরা এখন আশা করতে পারি আর যেন বৃষ্টি না হয়। ’
কিন্তু আবাহওয়ার যা পূর্বাভাস তাতে ধাওয়ানের মুখের হাসির মতো উজ্জ্বল পঞ্চম দিনের আকাশ থাকবে না। কেঁদে উঠতে তার খুব বেশি সময় লাগবে না। আবাহওয়ার পূর্বাভাসকে মাথায় রেখেও তামিম ম্যাচ নিয়ে একটা কথাই বলে গেলেন ‘ খেলাটার নাম ক্রিকেট। ’ আর সেই ক্রিকেট বৃষ্টির চেয়ে নির্মম রসিকতা করতে পারে যে কোন সময়। টিমমেটদের কাছে তাই তামিমের একটাই সর্তকবার্তা; ‘শেষ দিন সকালে দ্রুত দুই তিনটা উইকেট তুলে নিতে পারলে ভারতীয়রা কিন্তু বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাজ হবে বড় ইনিংস খেলা। ’
কিন্তু ফতুল্লা টেস্টে বৃষ্টির চেয়ে লম্বা ইনিংস কেউ খেলতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না।
সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন এখনো পর্যন্ত শিখর ধাওয়ান। আর ১৭৩ রানের ইনিংস খেলতে তিনি সময় নিয়েছেন ২৮১ মিনিট। আর সবচেয়ে বেশি সময় উইকেটে ছিলেন মুরালি বিজয় ৪০১ মিনিট। তবে বৃষ্টি চতুর্থ দিন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৪১ দশমিক ৩ ওভার খেলে দিলো বৃষ্টি! পঞ্চম দিনে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার যার হাতেই উঠুক না কেন এই টেস্টে সবচেয়ে লম্বা সময় ব্যাট করা খেলোয়াড়ের নাম-‘বৃষ্টি’!
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
এএ