ঢাকা: ‘দারুণভাবে আলিম দার আর ইয়ান গোল্ড শূন্যতায় ভুগছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। ’ মিরপুরে মাশরাফি বাহিনীর কাছে ধোনি বাহিনী নাকানি-চুবানি খাওয়ার পর এ মন্তব্য করলেন ফজলে রাব্বি নামে এক ক্রিকেটভক্ত।
পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার ও ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ড আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে ভারতের টেস্ট ও ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণার পর থেকেই। অবশ্য, তারা সমালোচনার শূলে আছেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেই বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে বেশ ক’টি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর থেকেই।
ওই কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে আলিম দার-ইয়ান গোল্ড যেমন দুয়োধ্বনি শুনে আসছিলেন টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের, তেমনি বিশ্বকাপ ম্যাচ জালিয়াতি করে জেতার অভিযোগে কথা শুনে আসছিল ভারতীয় ক্রিকেট টিমও। বাংলাদেশ সফরে এলে ভারতকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছিল ক্রিকেটভক্তদের পক্ষ থেকে।
তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিসিসিআই) বাংলাদেশ সফরের জন্য দল ঘোষণা করে। দল ঘোষণার পর ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় ক্রিকেটপ্রেমীদের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য। তাদের কেউ প্রশ্ন তোলেন, ‘ভারতের প্রধান দুই পারফরমার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড কেন ঠাঁই পেলেন না স্কোয়াডে?’
‘সেই দু’জনকে’ ছাড়াই ভারত বাংলাদেশ সফরে এলে আবারও ফেসবুক-টুইটারে এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের আড্ডায় কথা চলতে থাকে, ‘তাহলে আলিম দার-ইয়ান গোল্ড ছাড়াই ভারত এলো?’
ফতুল্লায় বৃষ্টিবিঘ্নিত অমীমাংসিত টেস্টের পর বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম খেলাটি গড়ায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে চার-ছয়-আউটের প্রতীক সম্বলিত প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি দেখা যায় বিশ্বকাপে আলিম দার-ইয়ান গোল্ড যুগলের বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কিছু মুহূর্তের ছবিও। খেলা শুরু হলে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান ও মাশরাফি বিন মর্তুজারা যখন চার-ছক্কায় ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে চলছিলেন, তখন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও শিখর ধাওয়ানের ছবি সম্বলিত কিছু ফটোফিচার ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেসব ফিচারে লেখা হয়, ‘ইশ! যদি আলিম দার-ইয়ান গোল্ড থাকতেন, ছক্কাটা ক্যাচ আউট দিতেন!’
ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে যখন তরুণ তুর্কি মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও রুবেল হোসেনরা আগুন ঝরাচ্ছিলেন, তখন আবারও ব্যঙ্গাত্মক ফটোফিচারে দেখা যায় আলিম-গোল্ডের ছবি। ওসব ফটোফিচারে লেখা দেখা যায়, ‘এই বলটা এতো শট পিচ কেনো, নো বল!’ ‘এই বলটা এতো স্লোয়ার কেনো, নো বল!’
আর ম্যাচ শেষে! ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের জয় আর মুস্তাফিজকে ভারতীয় অধিনায়ক ধোনির ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা যতটা না আলোচনায় ছিল তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘অনুভূত’ হয়েছেন সেই দুই ‘খলনায়ক’।
টাইগারদের কাছে ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ভারতের পরাজয়ের পর এম ইয়াসিন আরাফাত নামে এক ক্রিকেটপ্রেমী ফেসবুকে লেখেন, ‘ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি তাদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে দলের প্রধান দুই প্লেয়ার আলিম দার এবং ইয়ান গোল্ডের অনুপস্থিতিকেই দায়ী করেছেন। ’
অরুপ দেবনাথ নামে বাংলানিউজের এক পাঠক লেখেন, ‘দালাল আলিম ও ইন্ডিয়ান গোল্ড ছাড়া ধোনিরা জিততে পারেনি’।
আর আলিম দার-ইয়ান গোল্ডের পাশাপাশি থার্ড আম্পায়ারও না থাকায় ভারত হেরেছে বলে উল্লেখ করেছেন আহনাফ শহিদুজ্জামান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি লেখেন, ‘হি হি ১৪ জন নাই বলেই ইন্ডিয়া হারছে!’
কাওসার আলম নামে আরেকজন লেখেন, ‘কাঁদো ভারত, কাঁদো ভারতীয় সমর্থক, আজ তোমাদের কাঁদার দিন। ঠিক ১৯ তারিখ (১৯ মার্চ, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল) যেমনি কেঁদেছিলো ১৬ কোটি বাঙালি। তোমরা ১৪ জন খেলে এবং চুরি করে কাঁদিয়েছিলে ১৬ কোটি বাঙালিকে। আর আজ কাঁদবে তোমরা ১২০ কোটি লোক। কিন্তু আজ আমরা খেলে জিতেছি। ’
‘তিন আম্পায়ার ছাড়া ভারত জিততে পারে না। ’ বলেও সাফ জানিয়ে দেন শহিদুল ইসলাম নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
বাংলানিউজের আরেক পাঠক ইকবাল তারেক লেখেন, ‘ওয়ার্ল্ড কাপে আম্পায়ার ম্যানেজ করে জিতেছিল, এবার ম্যানেজ করতে পারেনি, তাই ধোনি পাগল হয়ে গেছেন। ’
শাহাদৎ শেখ পাভেল বলেন, ‘সেদিন নীরবে চোখের জল মুছেছিলাম, আইসিসি তোমাদের ছিল বলে। সেদিন নীরবে অশ্রু ঝরিয়েছিলাম আলিম দার, ইয়ান গোল্ড তোমাদের কাছে বিক্রি হয়েছিল বলে। ... আজ কোনো অপশক্তি নেই, নেই নোংরা কূটনীতি। ..হ্যাঁ আমরা জিতেছি, বাংলাদেশ জিতেছে। আজ ক্রিকেট জিতেছে। ‘
ধোনির হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে এমন একটি ফটোফিচারে ‘ইশ আজকে যদি আলিম দার থাকতো!’ ক্যাপশন লিখেও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন টাইগার ক্রিকেটভক্তরা।
তবে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও দু’টো ম্যাচ বাকি। তাই বাংলাওয়াশ শেষেই আলিম দার ও ইয়ান গোল্ডের খবর নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন ক্রিকেটপ্রেমী আরিফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
এইচএ/