ঢাকা: জাতীয় দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন তরুণ টাইগাররা। বলছি, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কথা।
এরপর শেষ ম্যাচ জিতে ব্যবধান (৫-২) বাড়ায় সফরকারীরা। অসাধারণ একটি সফর শেষ করে ডারবান থেকে বুধবার (২২ জুলাই) সকালে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশের তরুণরা।
এর আগে জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে প্রথম দুটি ওয়ানডে ম্যাচে হারের পরও টানা তিনটি ম্যাচ জিতে ৩-২ এ সিরিজ জেতে টাইগার যুবারা। এরপর ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাত ম্যাচের সিরিজ ৬-১ এ জেতে স্বাগতিকরা।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। যেখানে সিরিজ জয়ের আনন্দ, অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন তিনি। এছাড়া জানান, আগামী বিশ্বকাপে টাইগার জুনিয়রদের লক্ষ্যের কথা। বাংলানিউজের সঙ্গে তার কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
বাংলানিউজ: দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
মিরাজ: ওখানে খেলা খুব কঠিন ছিল। আমরা তো সেরকম কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্থ না। কারণ, ওখানকার উইকেটে বাড়তি বাউন্স থাকে, সুইং থাকে। আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সফরটা। আমাদের প্রস্তুতিটা খুব ভালো ছিল। এটিই আমাদের এগিয়ে দেয়। আমরা দ. আফ্রিকা যাওয়ার আগের একমাস ভেজা উইকেটে প্র্যাকটিস করেছি, সিমেন্টের টোনে বল হিট করে ওখানকার বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। এগুলো আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।
বাংলানিউজ: অনুশীলন ম্যাচটা কতটুকু সাহায্য করেছে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে?
মিরাজ: সবচেয়ে বড় হেল্প করেছে ওখানে গিয়ে আমরা যে অনুশীলন ম্যাচটা খেলেছি। অনুশীলন ম্যাচে আমাদের আসল টার্গেট ছিল বল কিভাবে আসে এটা পরখ করা। প্র্যাকটিস ম্যাচটা খেলার পরই আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমরা বুঝে যাই, ওখানকার কন্ডিশনে কিভাবে খেলতে হবে। আমরা তখনই পরিকল্পনা করি উইকেটে গিয়ে কিভাবে খেলতে হবে। কখন বল ছেড়ে খেলতে হবে। কখন ঝুঁকি কম নিতে হবে, সময় নিয়ে খেলতে হবে। এ ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আস্তে আস্তে আমরা সফল হয়েছি। দলের সবাই ওখানে ভালো করেই মানিয়ে নেয়।
বাংলানিউজ: দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে বলেছিলেন এই অভিজ্ঞতা আমাদের বিশ্বকাপে কাজে দেবে।
মিরাজ: আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে সবসময়ই সবাইকে বলি, আমাদের টিমটা এখন অনেক গুছিয়ে এসেছে। আমাদের যত ফাঁক রয়েছে সেগুলো ধরে ধরে কাজ করতে হবে। বিশ্বকাপের জন্য ৬ মাস হাতে আছে। বিশ্বকাপের আগে যত ল্যাকিংস আছে সব ঠিকঠাক করে পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে প্রস্তুত হয়ে মাঠে নামবো ইনশাল্লাহ।
বাংলানিউজ: আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। এবার বাংলাদেশের লক্ষ্য কি থাকবে?
মিরাজ: আমাদের লক্ষ্যটা অবশ্যই এবার অনেক বড় থাকবে। কারণ, দেশের মাটিতে খেলা। আমাদের প্রথম টার্গেট সেকেন্ড রাউন্ডে কোয়ালিফাই করা। যদি সেকেন্ড রাউন্ডে কোয়ালিফাই করতে পারি তাহলে টার্গেট হবে বিশ্বকাপ জয় করা। এর আগে ছোট ছোট কিছু ভুলের জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারিনি। বিগত দিনে যতগুলো সিরিজ খেলেছি, আমাদের যত ভুল ছিল চেষ্টা করবো সেগুলো শুধরে নিয়ে একেকজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে নামতে।
বাংলানিউজ: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে কয়জনের?
মিরাজ: এই দলে শেষবার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চারজন প্লেয়ার আছে। আমি, শান্ত, ইমন এবং জাকির। আমরা এই চারজন অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবো। জুনিয়রদের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আমরা চারজন যদি অভিজ্ঞতাটি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি, আশা করি ওয়ার্ল্ডকাপে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হতে পারবো। আর আমরা সে রকমই একটা টিম।
বাংলানিউজ: অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে জাতীয় দলে অবদান রাখার মতো কতজন ক্রিকেটার আছে এই দলে। আমরা কেমন স্বপ্ন দেখতে পারি?
মিরাজ: ২০১৪ ও ২০১৬ এই দুই ব্যাচের খেলোয়াড়রা খুব ভালো। এ বছরও (২০১৫) খুব ভালো ভালো ক্রিকেটার আসছে। যেমন: শান্ত, জাকির, আরিফ হাসান, পিনাক ঘোষ, সাউফুদ্দিন। অলরাউন্ডার হিসেবে খুব ভালো করছে সাইফু্দ্দিন। মেহেদি রানা বাঁহাতি পেস বোলার। সে খুব ভালো বোলার। আমাদের দলে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। আশা করি, এখান থেকে বেশির ভাগই জাতীয় দলে কন্ট্রিবিউট করতে পারবে ভবিষ্যতে। আমরা এখন যে ভুলগুলো করছি, এই ভুলগুলো যেন সামনে না হয়। এজন্য এখন আমরা সবকিছু শিখছি। আমরা হারলে হারের কারণ নিয়ে কথা বলি, কেন হারলাম। ভুলগুলো খুঁজে বের করি। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আমাদের টার্গেট অবশ্যই জাতীয় দলে খেলা। আন্ডার নাইনটিনে ভালো খেলা বা খারাপ খেলা-ওটা কোনো বিষয় না। আমাদের ভিতটা মজবুত করতে হবে। কারণ, আমাদের জাতীয় দল ভালো একটা স্টেজে রয়েছে। এরপরে আমাদেরই হাল ধরতে হবে। আমাদের ভিতটা যদি ভালো হয় পরবর্তীতে বড় বড় টিমকে নিয়মিত হারাতে পারবো। এটা আমি সব ক্রিকেটারের সঙ্গে শেয়ার করি, সবসময়ই বলি।
বাংলানিউজ: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে?
মিরাজ: এখনো ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে তেমন কোনো আলাপ হয়নি। তারা বলেছে, এখন খেলা শেষ তোমরা বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নাও, মজা করো, ৫-৭ দিন ক্রিকেটের বাইরে থাকো, পরিবারকে সময় দাও। তারপর তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে কখন, কি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ২৪ জুলাই ২০১৫
এসকে/এমআর