মিরপুর থেকে: দলীয় ৬৫ রানের মাথায় টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা সফরকারীদের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন ১৯২ ওয়ানডে খেলা চিগুম্বুরা এবং ৪৮ ওয়ানডে খেলা সিকান্দার রাজা।
তবে, ইনিংসের ২৬তম ওভারে মাশরাফির দারুণ সুইংয়ে সিকান্দার রাজা উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে ২৫.২ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৭৯ রান। জয়ের জন্য আরও ১৯৫ রান দরকার সফরকারীদের।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে টাইগারদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৭৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারীরা। টাইগারদের বোলিং সূচনা করেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভার থেকে মাত্র দুই রান তুলতে সমর্থ হয় জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার চামু চিবাবা এবং লুক জঙ্গো। দ্বিতীয় ওভারে আরাফাত সানি আক্রমণে এসে মেইডেন ওভার তুলে নেন।
ভালো শুরু করা জিম্বাবুয়ের ওপেনার চামু চিবাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে টাইগারদের প্রথম উইকেটের দেখা পাইয়ে দেন সাকিব আল হাসান। দশম ওভারের প্রথম বলে লংঅফে দাঁড়ানো লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন ৯ রান করা চিবাবা। দলীয় ৪০ রানের মাথায় প্রথম ইউকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
ওপেনার চামু চিবাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে দলীয় ১৪তম ওভারে আরেকবার জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানেন সাকিব। ব্যক্তিগত ২ রান করে নাসির হোসেনের হাতে ধরা পড়েন ক্রেইগ আরভিন। সাকিবের পর উইকেট শিকারে যোগ দেন আল আমিন হোসেন। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে জিম্বাবুয়ের আরেক ওপেনার জঙ্গোকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন। ৩৯ রান করে বিদায় নেন জঙ্গো।
১৮তম ওভারের শেষ বলে সফরকারীদের ইনফর্ম ব্যাটসম্যান শেন উইলিয়ামসকেও ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের তৃতীয় শিকারে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরার আগে উইলিয়ামসের ব্যাট থেকে আসে ৮ রান।
এর আগে দুপুর একটায় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং সফরকারী জিম্বাবুয়ে। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা।
টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা খুব একটা ভালো না করলেও মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য সেঞ্চুরি, তামিম ইকবাল আর সাব্বির রহমানের দারুণ ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তোলে ২৭৩ রান। ক্যারিয়ার সেরা রান করেন সাব্বির।
ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়ায় টাইগারদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস।
সৌম্য সরকার ইনজুরির কারণে ছিটকে গেলে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিং করতে নামেন লিটন দাস। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি লিটন দাস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে লুক জঙ্গোর করা বলের লাইন মিস করলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে গ্রায়েম ক্রেমারের তালুবন্দি হন লিটন। আউট হওয়ার আগে ৬ বল মোকাবেলা করলেও কোনো রান আসেনি তার ব্যাট থেকে। লিটনের বিদায়ে ব্যাটিংয়ে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
শুরুতে লিটন দাসের উইকেট হারালেও বেশ ভালোই এগিয়ে চলছিল স্বাগতিকরা। তবে, ইনিংসের নবম ওভারের তৃতীয় বলে পানিয়াঙ্গারার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১২৩ ওয়ানডে খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিদায় নেওয়ার আগে ২০ বল খেলে একটি চারে মাত্র ৯ রান করেন তিনি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে তামিমের সঙ্গে ২৮ রানের জুটি গড়েন রিয়াদ।
দলীয় একশ রানের মাথায় আউট হন তামিম ইকবাল (৪০)। ২৪তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে জঙ্গোর তালুবন্দি হওয়ার আগে বাঁহাতি এ ওপেনার ৬৮ বলে তিনটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকান। আউট হওয়ার আগে মুশফিকের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন তামিম। আরও ২৩ রান যোগ হতেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সাকিব আল হাসান (১৬)। সিকান্দার রাজার বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
দলীয় ১২৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ দলকে উদ্ধার করেন দেশসেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। এ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকের দেখা পান ১৫৬ ওয়ানডে খেলা মুশফিক। ৮টি বাউন্ডারি আর একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে মাত্র ১০৪ বলে মুশফিক তার শতক তুলে নেন। এর আগে ৪৫তম ওভারে ছক্কার পর চার হাঁকিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক তুলে নেন সাব্বির। তবে, বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৫৭ রান করে রান আউট হয়ে ফেরেন সাব্বির। আউট হওয়ার আগে ৫৮ বল মোকাবেলা করে তিনি চারটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকান। মুশফিকের সঙ্গে ইনিংস সর্বোচ্চ ১১৯ রানের জুটি গড়েন সাব্বির।
সাব্বিরের বিদায়ে ব্যাট হাতে নামেন নাসির হোসেন। চিবাবার তালুবন্দি হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। একই ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন মুশফিক (১০৭ রান)। টাইগারদের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে তিনি ১০৯ বলে ৯টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান।
ছয় বলের মধ্যে সাব্বির-নাসির-মুশফিকের বিদায়ের শেষের দিকে হঠাৎ করেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে, শেষ ওভারের প্রথম বলে ডেঙ্গুজ্বর থেকে ফেরা অধিনায়ক মাশরাফি চার হাঁকিয়ে পরের বলেই বিশাল ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলে আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দেন তিনি। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ১৪ রান। আরাফাত সানি তিনটি চারে ৮ বল মোকাবেলা করে ১৫ রান করেন। অতিরিক্ত খাত থেকে আরও ১৫ রান যোগ হয় টাইগারদের স্কোরবোর্ডে।
জিম্বাবুয়ের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মুজারাবানি এবং সিকান্দার রাজা। একটি করে উইকেট পান পানিয়াঙ্গারা এবং লুক জঙ্গো। বোলিং করেননি জিম্বাবুয়ের দলপতি এলটন চিগুম্বুরা। শেন উইলিয়ামস এবং গ্রায়েম ক্রেমার উইকেটশূন্য থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, ০৭ নভেম্বর ২০১৫
এমআর
** সাকিবের তৃতীয় শিকারের পর জিম্বাবুয়ে ৭২/৪
** আল-আমিনের কামব্যাক উইকেট
** সাকিবের পর উইকেট শিকারে আল আমিন
** চিবাবাকে ফেরালেন সাকিব
** মূল্য তালিকা না মেনেই খাবার বিক্রি
** সফরকারীদের চেপে ধরেছে টাইগার বোলাররা
** জয়ের লক্ষ্যে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
** মুশফিকের দাপুটে শতক
** টাইগারদের সংগ্রহ ২৭৩
** সাব্বির-নাসির-মুশফিকের বিদায়, বাংলাদেশ ২৪৩/৭
** সাব্বিরকে নিয়ে মুশফিকের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি
** মুশফিক-সাব্বিরের ব্যাটে বাংলাদেশ ২১১/৪
** হাতি পেটানোর মতো ছক্কা মারলেন তামিম!
** মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে টাইগারদের ১৭৫/৪
** ছন্দে মুশফিক, টাইগারদের সংগ্রহ ১৩৬/৪
** তামিমের পর ফিরলেন সাকিব, বাংলাদেশ ১২৩/৪
** দলীয় শতকের পর তামিমের বিদায়
** মুশফিক-তামিমের জুটিতে ৮৪/২
** ক্রিজে তামিম-মুশফিক, বাংলাদেশ ৬২/২
** রিয়াদের বিদায়, স্বাগতিকরা ৩০/২
** ৫ ওভার শেষে টাইগাররা ১৯/১
** শুরুতেই ফিরলেন লিটন
** ব্যাটিংয়ে তামিম-লিটন
** ব্যাটিংয়ে নামবে টাইগাররা