ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আরেক মনুষ্য বাঘের সন্ধান

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
আরেক মনুষ্য বাঘের সন্ধান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে: বছর ২০ এর ছেলেটার ডোরাকাটা রংয়ের শরীরটা যেন বাঘের গা। তবে এতটুকুতেই তার বাঘ পরিচয় শেষ হচ্ছে না।

হিংস্র দাঁত কিংবা ভয়ংকর চাহনি না থাকলে কিসের আবার বাঘের সঙ্গে তুলনা? তাই মুখে লাগিয়েছে বাঘের মত হিংস্র নকল দাঁত। চোখের চারপাশে সাদাকালো রংয়ে নিয়েছে বাঘের ভয়ংকরতা। এরপর চেহারাটা একটু বাঁকালেই যেন ‘পুরোপুরি’ বাঘ!

নাম তার খাইরুল ইসলাম মারুফ। বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই তার বাঘ রূপে মাঠে হাজির। আর হাতে থাকবে লাল সবুজের পতাকা।   ওই চট্টগ্রামের একমাত্র মনুষ্য ‘বাঘ’।

ছোটকাল থেকেই ক্রিকেটের পাড় সমথর্ক। বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই টিভির সামনে বুঁদ হয়ে থাকা। তবে গত দু’বছর ধরে আর ঘরে নয়। সরাসরি মাঠে। এভাবে, বাঘ হয়ে।

সময়ের ব্যবধানে পরিচয়টা বড্ড পাল্টে গেছে এ তরুণের। মূল নাম খাইরুল ইসলামটা এখন একপ্রকার হাওয়া। সবার কাছে তার পরিচয় মারুফ বাঘ নামেই।

এ নামেই বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করেন মারুফ নিজেও।

২৭ জানুয়ারি (বুধবার) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে টাইগার যুবাদের সমর্থন দিতে এসেছেন মারুফ। গ্যালারির যেখানেই যাচ্ছেন তাকে ঘিরে ছোটখাটো জটলা লেগেই আছে। ফটোসেশন-সেলফি চলছে দেদারসে। মারুফও হাসিমুখে দাঁড়াচ্ছেন, পোজ দিচ্ছেন।

মিডিয়া বক্সের বাইরে কথা হয় মারুফের সঙ্গে। কখন থেকে বাঘ হলেন-এমন প্রশ্নে মারুফ বলেন, ‘২০১৪ সালের শুরু থেকেই। ওই সময় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চলছিল। আমি ভাবলাম এবার থেকে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে সাধারণভাবে যাব না। বাঘ সেজে সমর্থন দিতে যাব। যেই কথা সেই কাজ। বাঘরূপে গেলাম, সবাই সমর্থন জানাল। তখন থেকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই এভাবে আসা। ’

তবে চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য ভেন্যুতেও বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে মারুফের। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও চট্টগ্রামের বাইরে নিয়মিত যাওয়া হয় না। দেশের বাইরে, সে তো দূর স্বপ্নই। বাবার দেওয়া হাত খরচার টাকা বাঁচিয়ে চট্টগ্রামের বাইরে আর কীভাবেই বা যাওয়া যাবে?

তাই মারুফের কণ্ঠে আক্ষেপ ঝরে। বলেন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে দেশ ও দেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু এখনও কারও সহযোগিতা পাইনি।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যাচে প্রায়শই দেখা মেলে সোয়েব টাইগার কিংবা মিলন টাইগারের। গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে অনেকবার আলোচনাও হয়েছে।

তবে বাঘ হয়ে গত দু’বছর ধরে মাঠে গেলেও মারুফ একটু প্রচারণার বাইরে। তাকে নিয়ে আলোচনাটা যেন একদমই হয়নি।

তবে এ নিয়ে কষ্ট নেই এই তরুণের। বলেন, পরিচিতি পেলে ভালো লাগত। তবে আমি এভাবে মাঠে আসি বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে। বাংলাদেশ জিতলেই আমি খুশি।

মারুফের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। তবে বড় হয়েছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বের হালিশহর এলাকায়। তাই ক্রিকেট বিষয়টা কাউকে হাতেকলমে শিখিয়ে দিতে হয়নি।

পড়ালেখাটাও কিন্তু সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাশেষ হলে আবারও বাঘের খোলশ ছেড়ে সাদা-কালো ইউনিফর্মে মারুফ। ছুটতে হবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। ওখানেই যে পড়েন মারুফ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।