ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বাবার কথা মনে পড়ছিলো: পাইলট

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
বাবার কথা মনে পড়ছিলো: পাইলট খালেদ মাসুদ পাইলট-ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ক্রীড়ায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গেল ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের মোট ৩২ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে পুরষ্কৃত করেছেন। দেশের ডাকসাইটে এই ক্রীড়াবিদদের ভীড়ে যে নামটি নির্বাচকেরা এড়িয়ে যাননি সেটি হলো খালেদ মাসুদ পাইলট।

পাইলটকে মূলত পুরষ্কৃত করা হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের জন্য। তিনি ছিলেন ২০১১ সালের মনোনয়নে। কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার রীতিমত আনন্দের ঢেউ তুলেছে দেশের সাবেক এই টাইগার উইকেটরক্ষকের মানষপটে। ‘আমি খুবই আনন্দিত। কেননা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ক্রীড়ার সর্বোচ্চ পুরষ্কারটি পেয়োছি। আমাকে যারা এজন্য যোগ্য বিবেচনা করে মনোনিত করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’
 
খালেদ মাসুদ পাইলট বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। লাল-সবুজের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যন হিসেবে তার জুরি মেলা ভার। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচাইতে সফলতম উইকেটরক্ষক তিনি। শুধু উইকেটরক্ষকই নয় ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবেও টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন পাইলট।
 
এর বাইরেও যে বিষয়টি পাইলটকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার হতে সাহায্য করেছে সেটি হলো ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তার সেই দায়িত্বশীল ঝড়ো ব্যাটিং।
 
পাইলটের সেই বীরোচিত ব্যাটিংয়েই প্রথমবারের মত ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। আর ওই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দিলেন নান্নু-পাইলটরা। যা পরবর্তীতে দেশটিকে আইসিসি’র টেস্ট মর্যাদা পেতেও রেখেছে অগ্রনী ভূমিকা।
 
তারমানে হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের স্বর্নালী অধ্যায়ের অন্যতম রুপকার এই খালেদ মাসুদ পাইলট। জাতীয় পুরষ্কারতো তাকেই মানায়।
 
আজকের যে পাইলটকে সবাই চেনে তার পেছনে কার অবদান সবচে বেশি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, ‘সবচাইতে বেশি অবদান আমার পরিবারের। তারা ক্রীড়া বান্ধব না হলে আমার পক্ষে এতকিছু অর্জন করা সম্ভব হতো না। বিশেষ করে আমার বাবার কথা বলবো। খেলার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক থাকায় প্রায়ই আমি স্কুল পালিয়ে খেলতে যেতাম কিন্তু বাবা আমাকে এজন্য কোনোদিন একটি বকা দেনিনি। ’
 
পাইলটের বাবা শামসুল ইসলাম ছিলেন দেশের খ্যাতনামা ফুটবলার। ফুটবল পাড়ায় শামসু নামে সবাই তাকে চিনতো। ২০ বছর ঢাকা লিগে খেলা শামসু ছিলেন তদানিন্তন পাকিস্তান ফুটবল দলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সুযোগ পাওয়ো দ্বিতীয় খেলোয়াড়।
 
খেলোয়াড়ি জীবনে দারুণ সফল ছিলেন পাইলটের বাবা শামসুল ইসলাম। কিন্তু কখনও জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত হননি। তাই তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরষ্কার গ্রহন করছিলেন তখন নাকি বারবার বাবার কথাই মনে পড়ছিল। ‘পুরষ্কারের খবরটি শোনার পর প্রথমেই আমার বাবার কথা মনে পড়েছে। কারণ উনি ছিলেন গ্রেট প্লেয়ার। তাই পুরষ্কারটা আমি না পেয়ে আমার বাবা পেলে আমি খুশি হতাম। আমি যখন রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসি তখন আমাকে সবাই বাবার পরিচয়েই চিনতো। ’
 
১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা পাইলট ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে ১৯৮৯ সালে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসেন। ওয়ারী ক্লাব দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে খেলেছেন কলাবাগান, মোহামেডান, আবাহনী ও সূর্যতরুণে।
 
১৯৯৫ সালে শারজায় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম অভিষেক হয় ওয়ানডে দিয়ে। আর টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মত নাম লেখান ২০০০ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঢাকায়।
 
খালেদ মাসুদ পাইলট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৪৪টি টেস্টে ১৪০৯ এবং ১২৬টি ওয়ানডে থেকে সংগ্রহ করেছেন ১৮১৮ রান।    

 

শুধু সফল ক্রিকেটারই নয় কোচ হিসেবেও সফল পাইলট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের (বিপিএল) ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ তিনি। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো প্রথমবার বিপিএলে অংশ নিয়েই শিরোপা জয়ের শেষ হাসি হেসেছে পাইলটের শিষ্যরা।
 
আসছে ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএল’র চতুর্থ আসর। তৃতীয় আসরের ধারাবাহিকতায় এই আসরেও নিজ দলকে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা পাইয়ে দিতে ইতোমধ্যেই নাকি ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কারজয়ী এই সাবেক টাইগার অধিনায়ক।      
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।