ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

তোর চেয়ে তো আমি বেশি রান করলাম…

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
তোর চেয়ে তো আমি বেশি রান করলাম… নাসির-মুমিনুল । ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: আকাশ থেকে তখন বৃষ্টি ঝরছে গুড়ি-গুড়ি। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে দাঁড়িয়ে সাক্ষাতকার দেওয়া তখন প্রায় অসম্ভব। কি আর করা সদ্য মাঠ ফেরত নাসির হোসাইন তাই রেকর্ডার-বুম-ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন ড্রেসিংরুমের সামনেই।

কয়েক মিনিটের সাক্ষাতকারটা খুব রাঙিয়েই দিচ্ছিলেন। স্বভাবজাত হাসির ছটাও বের হচ্ছিল তার মুখ থেকে।

সাক্ষাতকার পর্ব একেবারে শেষের দিকে তখন। পাশ দিয়ে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে মুমিনুল হক ছুটছিলেন টিম বাস ধরার জন্য।

এমন সময় নাসিরকে সাক্ষাতকার দিতে দেখে মুখে হাসি নিয়ে মুমিনুলের হাঁক, ‘কিরে তোর (নাসির) চেয়ে তো আমি রান বেশি করলাম। তুই কেনো কথা বলিস?’

মুমিনুলের হাসির সেই রেশ আশেপাশে সংক্রমিত হতে বেশি দেরি হলো না। নাসির হোসাইনও হাসতে হাসতে যোগ দিলেন মুমিনুলের সঙ্গে।

দুজনেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) একই ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ছোটকাল থেকেই তাই বেড়ে ওঠার বয়সটা বাড়ছে একসঙ্গেই। তার উপর দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে করতে সেই সম্পর্ক হয়েছে আরও পাকাপোক্ত। দুজনের গাঢ় বন্ধুত্বের অনেক নজিরের কথা দৃশ্য প্রায় সময় শোনা-দেখা যায়।

দুই বন্ধুই সংগ্রাম করছেন জাতীয় দলে টিকে থাকার। একটা সময় নাসির হোসাইনকে ছাড়া বাংলাদেশ দলের যেকোন ফরম্যাটের একাদশ ভাবা যেত না। দিনের পর দিন বাংলাদেশ দলকে জিতিয়ে নাম হয়ে জুটেছিল ‘দ্যা ফিনিশার’। সেই নাসির হোসাইন এখন কোনো ফরম্যাটের দলেই নেই দীর্ঘদিন।

অন্যদিকে ওয়ানডে-টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিয়মিত বিবেচনায় না থাকলেও বাংলাদেশের টেস্ট মানেই তিন নম্বরে যথারীতি মুমিনুল হক। পারফরম্যান্সের কল্যাণে বিশ্ব ক্রিকেটে বিস্ময় জাগানিয়া এই ক্রিকেটারের অনেকেই নাম দিয়েছিলেন ‘পকেট ডায়নামো’ কেউবা ‘লিটল মাস্টার’। কিন্তু এখন সেই মুমিনুল হকেরও সুদিন নেই। বাদ পড়তে হয়েছে সর্বশেষ বাংলাদেশের খেলা শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টে।

ফলে দুজনের ক্রিকেট জীবন ভালো যাচ্ছে না-তা একেবারেই স্পষ্ট। সামনে আসছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। সেই সিরিজে সুযোগ পেতে হলে তার আগেই প্রমাণের দরকার ছিল দুজনের। নাসির-মুমিনুল (ফাইল ফটো)

দুজন সেটি পেরেছেন। নিজেদের মধ্যে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলমান প্রস্তুতি ম্যাচে তামিম একাদশের হয়ে খেলা এ দুজন পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। মুমিনুল হক থেমেছেন ৭৩ রানে। নাসির হোসাইন করেছেন ৬২। তার চেয়ে বড় কথা দুজনেই যে পারফরম্যান্সের সঙ্গে সংগ্রাম করছেন তা তাদের ব্যাটিং দেখে মোটেও বুঝা যায়নি। মুমিনুল যথারীতি করেছেন সলিড ব্যাটিং। উইকেটের চারপাশে খেলেছেন বেশ সাবলিলভাবে। অন্যদিকে নাসির হোসাইন ছিলেন আক্রমণাত্বক। ওয়ানডে মেজাজে খেলা নাসির তাইজুলের এক ওভারেই মেরেছেন দুটি বিশাল ছক্কা।

দীর্ঘদিন পর দুজনের ব্যাট একসঙ্গে হাসলো। তাও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের দল ঘোষণার আগে। জাতীয় দলের অন্যরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে এমন ব্যাটিংয়ের পর দুজনের মনেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে তা তো স্বাভাবিকই।

দিনশেষের ওই খুনসুঁটিটাই যেন তাদের মনের অবস্থার আসল ‘এক্সরে রিপোর্ট!’

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।