কিন্তু একজন ততোটা বিস্মিত হননি। তিনি মাহবুবুল আলম-নাঈম হাসানের গর্বিত পিতা।
এই অফ স্পিনার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে এখন রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে। শুক্রবারই (২৬ জানুয়ারি) শেষ হয়ে গেছে ছোটদের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দৌড়। তাই দলের সঙ্গে শনিবারই দেশে ফেরার কথা রয়েছে নাঈমের।
হয়তো আগেভাগেই বার্তা চলে গিয়েছিল নাঈম হাসানের কাছে। প্রস্তুত থাকতেও হয়তো বলা হয়েছিল তাকে। তার বাবার কথাতে অন্তত তাই মনে হবে।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল-এমন প্রশ্নে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘না, আজ কথা হয়নি। কারণ তার খেলা ছিল। তবে বৃহস্পতিবার কথা হয়েছিল। সে তখন বলেছিলো বাবা তোমাকে শুক্রবার একটা সুসংবাদ দেব, তবে এখন বলবো না। আমার মনে হচ্ছে সে এই সুসংবাদই দিতে চাচ্ছিল আমাকে। ’
ছেলের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটি পরিবারের সদস্যরা প্রথম দেখেন গণমাধ্যমে। এরপরেই তা ছড়িয়ে পড়ে নাঈম হাসানের ঘরের চৌহদ্দি থেকে পাড়া-মহল্লায়।
বাবা মাহবুবুল আলম রাজনীতি করেন। ছিলেন সিটি করপোরেশনের চান্দগাঁও ওয়ার্ডের দুই বারের কাউন্সিলর। এরসঙ্গে খেলাধূলাটাও তার নেশা। জড়িত আছেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সঙ্গে। বর্তমানে সেই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি।
তাই বলা যায় খেলার গন্ধটা ঘর থেকেই পেয়েছিলেন নাঈম।
তবে বাবা জানালেন অন্য তথ্য। বাড়ির বড় ছেলে কামরুল আলমকেই ‘বড়’ ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নে বিভোর বাবা মাহবুবুল আলম ভর্তি করিয়েছিলেন ক্রিকেট ক্লাবে। কিন্তু সেই ছেলের ক্রিকেটদৌড় বেশিদূর এগোয়নি। অগোচরে মেজো ছেলে নাঈম হাসানই পড়ে ছিলেন ক্রিকেট মাঠে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে মা মমতাজ বেগমের দেওয়া টাকা নিয়ে নাঈম ছুটে গেছে মাঠ থেকে মাঠে। সঙ্গী বলতে ওই দুটো জিনিসই ব্যাট-বল।
বয়স এখনও মাত্রই ১৭। কিন্তু এর মধ্যেই বয়সভিত্তিক প্রায় দলে খেলা হয়ে গেছে নাঈমের। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তো ছিলই, নাঈম ছিল বিসিবির হাইপারফরম্যান্স (এইচপি), ইমার্জিং দলেও। শেষ বিপিএলে দুই ম্যাচে মাঠে নেমেছেন চিটাগং ভাইকিংসের হয়েও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই অফ স্পিনারকে দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের আরও একজন অফ স্পিনার দরকার ছিল। নাঈম প্রতিভাবান, জাতীয় দলে আশা করি ভালো করতে পারবে। ’
চান্দগাঁওয়ের ফরিদার পাড়ার ধূলো-মাটিতে খেলে খেলে বড় হওয়া ছোট্ট কিশোর জাতীয় একাদশে সুযোগ পাবে, ভালো করবে-এটাই এখন চাওয়া চট্টগ্রামবাসীরও।
নাঈমের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবর যখন প্রথম বের হয়, তখন বাবা মাহবুবুল আলম বাসে। মিরসরাইয়ের পথে। দীর্ঘদিন ধরে মেয়ে শ্বশুর অসুস্থ। তাই মনটা ভার হয়ে আছে সবার। ঘণিষ্ট আত্মীয়ের অসুস্থতার এই মন খারাপের দিনগুলোতে নাঈম হাসানের জাতীয় দলে অন্তভূক্তি যেন বড় সুখবরই নিয়ে এলো পরিবারটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
টিএইচ/টিসি