ঘরের মাটিতে কখনোই ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা দু’টির বেশি টিম নিয়ে কোনো টুর্নামেন্ট জেতা হয়নি টাইগারদের। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনটি ফাইনালেই সঙ্গী হয়েছে হতাশা।
ছন্দে ফেরা লঙ্কানদের হারিয়ে ট্রফি হাতে নেওয়ার লক্ষ্য পূরণে সিনিয়রদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাশরাফিরা জ্বলে উঠলেই জোরালো গর্জন উঠবে গ্যালারিতে।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ফাইনালের মহরায় বড় এক ধাক্কাই খেয়েছে স্বাগতিক শিবির। এটিই সমর্থকদের মনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’দিন আগের ম্যাচটিতে মাত্র ৮২ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ। ১০ উইকেটের দাপুটে জয়ে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা নির্ধারণীতে পা রাখে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় জিম্বাবুয়ে।
দুঃস্মৃতি ভুলে সামনে তাকাচ্ছে টিম বাংলাদেশ। শিরোপা ভিন্ন কিছুই ভাবছে না মাশরাফি বাহিনী। মধুর প্রতিশোধ নিতে ফাইনালের চেয়ে আর ভালো মঞ্চ আর কি হতে পারে। প্রথম মুখোমুখি লড়াইয়ে সাবেক কোচ হাথুরুর শ্রীলঙ্কাকে স্রেফ উড়িয়ে দেয় মাশরাফির দল। ১৯ জানুয়ারির ম্যাচটিতে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের (১৬৩) জয় উদযাপন করে বাংলাদেশ। ব্যাক-টু-ব্যাক বোনাস পয়েন্টসহ জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত হয় ফাইনাল।
টানা তিন ম্যাচে দাপুটে জয়ের পর হঠাৎই যেন ছন্দপতন! আগের ম্যাচের ভুলে থাকার মতো পারফরম্যান্স পেছনে রেখে ফাইনালে শিরোপা লড়াইয়ে প্রস্তুত টাইগাররা। কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের অপেক্ষায় স্বাগতিক ক্রিকেটপ্রেমীরা। ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হতে মুখিয়ে আছেন দর্শকরা। বছরের শুরুতে ভক্ত-সমর্থকদের এমন একটি উপহার দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।
মাঠের খেলায় প্রথম তিন ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হলেই এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। ফাইনালের মঞ্চে সিনিয়ররা জ্বলে উঠলে দলীয় পারফরম্যান্সটাও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ওপেনার তামিম ইকবাল ফর্মের তুঙ্গে। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভরসার প্রতীক সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার আরেক নাম মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তো আছেনই। বোলিংয়ে রুবেল-মোস্তাফিজদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ঘরের মাটিতে নিজেদের সাবলীল কাজটা করতে পারলেই আর কিছু লাগবে না।
৪ ম্যাচ শেষে সর্বোচ্চ রানস্কোরার তামিম। তিন ফিফটিতে (৮৪ অপ., ৮৪, ৭৬) তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৪৯। দু’টি অর্ধশতকের সাহায্যে সাকিব করেছেন ১৬৩। মুশফিকের নামের পাশে ১২০। হাফসেঞ্চুরি একটি। এখনো সেঞ্চুরি দেখা পাননি কেউই। তিনবার সম্ভানা জাগিয়েও পারেননি তামিম। ফাইনালে নিশ্চয়ই আক্ষেপটা মেটাতে চাইবেন।
বোলিংয়ে নিজের স্পিন কারিশমার জানান দিয়েছেন সাকিব। চার ম্যাচে পেয়েছেন ৯টি উইকেট। সর্বোচ্চ ১১টি উইকেট শিকার করেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা। ৫টি করে নিয়েছেন মাশরাফি, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
শের-ই-বাংলায় আগের তিনটি ফাইনালের (২০০৯ ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১২ এশিয়া কাপ, ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-২০) দু’টিতে শিরোপা খুব কাছে গিয়েও হতাশা সঙ্গী হয়েছিল। হোম গ্রাউন্ডে কখনোই ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা দু’টির বেশি টিম নিয়ে কেনো টুর্নামেন্ট জেতা হয়নি। এবার সেই অতৃপ্তি ঘোঁচাতে মরিয়া বাংলাদেশ দল।
৯ বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই শ্বাসরুদ্ধকর ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ২ উইকেটে হার মানতে হয়েছিল। আরেকটি ফাইনাল মহারণে ফের প্রতিপক্ষ হয়ে সামনে লঙ্কানরা। মিরপুরে শিরোপা জেতার লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জে শেষ হাসি কারা হাসবে কয়েক ঘণ্টা পরেই তা জানা যাবে!
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮
এমআরএম