সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে দুয়োধ্বনি উঠতো, কথার বান ছুঁড়ে মোস্তাফিজ, তাসকিন, রুবেলদের পিঠের চামরা তুলে নেয়া হতো!
তাদের অপরাধ? এই তিনজনই আরেকটু হলে বল হাতে রানের হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন। যা লঙ্কানদের দলীয় সংগ্রহের ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করতো এবং টাইগারদের জয়ের কাজটি আরও কঠিন হয়ে যেত।
বাংলাদেশের ‘গতি দানব’ তাসকিন আহমেদ তিন ওভার বল করে দিয়েছেন ৪০ রান। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৪৮। আর রুবেল হোসেন ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৫ রান। এই তিনজনের ভেতর রুবেল ও মোস্তাফিজকে ক্ষমা করা গেলেও তাসকিনকে অনেকেই ক্ষমা করতে পারছেন না। কারণ তিনি জোরে বল করেন ঠিকই কিন্তু তার লেন্থ ঠিক নেই। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় তিনি বল ফেলতে অপারগ!
যা হোক, ওইদিন অন্যায়টি তিনজন মিলেই করেছেন। বলা বাহুল্য তাদের এমন ব্যয়বহুল এক একটি ওভারেই ২১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে হাথুরুসিংহে ও তার দল।
তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, পেসারদের এমন ব্যয়বহুল বোলিংকেও স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ মুমিনুল হক। তার ভাষ্যমতে, প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের এমন ফ্ল্যাট উইকেটে এর চাইতে ভালো বোলিং সম্ভব না। বরং বাংলাদেশর বোলাররা ১০ রান কম দিয়েছে।
মুমিনুলের কথায়, ‘খুবই ভালো বোলিং করেছে ওরা। আমার তো মনে হয় ১০ রান কম হয়েছে। যেদিক দিয়েই ব্যাটসম্যানরা মেরেছে সেদিক দিয়েই রান এসেছে। এমন ফ্ল্যাট উইকেটে এর চাইতে ভালো বোলিং সম্ভব না এই উইকেটে। ২১৫-২২০ অনায়াসে হয়। অনেক ভালো ছিল উইকেট। ’
নিজ দলের বোলারদের কৃতিত্ব দিতে গিয়ে মুমিনুল উদাহারণ টানলেন শ্রীলঙ্কার বোলারদের দিয়ে, ‘ধরে নিলাম আমাদের বোলিং খারাপ ছিল। ওদের বোলিং দেখেন আপনি। ওদের কিন্তু ভালো ভালো বোলার আছে। থিসারা পেরেরা টি-টোয়েন্টিতে খুবই ভালো বোলার। সেও কিন্তু মার খেয়েছে। ’
অযৌক্তিক বলেননি মোটেও ‘প্রিন্স অব কক্সবাজার’। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার দুশমান্থা চামিরা ৪ ওভারে ৪৪, সমান সংখ্যক ওভারে নুয়ান প্রদীপ ৩৭, স্পিনার আকিলা ধনাঞ্জয়য় ৩ ওভারে ৩৬। আর থিসারা পেরেরা ৩.৪ ওভার বল করে দিয়েছেন ৩৬ রান।
তবে বোলারদের এই ভালোকেই শেষ ভালো বলে আখ্যা দিতে রাজী নন এই টাইগার লিটল মাস্টার। উইকেট ফ্ল্যাট থাকায় এই যাত্রায় দল বেঁচে গেছে। তাই সামনের ম্যাচগুলোতে বোলারদের আরও নিখুঁত লাইন, লেংথে বল ছোঁড়ার পরামর্শ দিলেন, ‘তবে এটা ঠিক আমাদের বোলিংটা আরও ইমপ্রুভ করতে হবে। রান কীভাবে কম হয় সে ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। ’
আগামী ১৪ মার্চ নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ। এই সেই ভারত যার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছিল লাল-সবুজের দল। তাই এই ম্যাচে সতর্ক হয়ে খেলার পরামর্শ দিলেন মুমিনুল।
‘একটা ম্যাচ জিতেছি মানে অনেক কিছু করে ফেলেছি বা টি-টোয়েন্টির জন্য খুব ভালো দল হয়ে গেছি বিষয়টি এমন না। বোলিং, ব্যাটিং দুটোই ইমপ্রুভ করতে হবে। ’
ইমপ্রুভমেন্ট বা উন্নতি; যাই বলেন না কেন সবই নিজের কাছে। তাসকিন আহমেদ গতিময় বলের কারণেই আজও দলে জায়গা পাচ্ছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, তিনি আজও পর্যন্ত সঠিক লেংথটি খুঁজে পেলেন না। যদি তার এই গতিময় বলের সাথে একটু সুইং থাকতো! প্রতি ওভারেই একটি দুটি করে ইয়র্কার দিতে পারতেন!
হলফ করে বলতে পারি পুরো ক্রিকেট বিশ্বই তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। এমন দিন কোনোদিন আসবে তো?
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ১১ মার্চ, ২০১৮
এইচএল/এমআরএম