কিন্তু এবারের পহেলা বৈশাখে সেই ‘মধুর’ পান্তা-ইলিশ খাওয়া হচ্ছে না তার। মে মাসে দ. আফ্রিকায় সিরিজ।
বাংলানিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই আক্ষেপের কথাই জানালেন রুমানা। জানিয়েছেন মাশরাফি, সাকিবদের সাথে তাদের বেতন-ভাতার বৈষম্যের হতাশার কথাও। নারী ক্রিকেটের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন।
পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সময়টা কেমন যাচ্ছে?
আমাদের ব্যস্ত শিডিউল। এবছরের শুরুতেই আমরা ‘এ’ দলের সাথে ভারত সফর গিয়েছি। এরপর সিলেটে জাতীয় লিগ খেললাম। ভাল ছিল ওটা। এখন আবার দ. আফ্রিকা সিরিজের ব্যস্ততা শুরু হতে যাচ্ছে। মানে ব্যস্ত শিডিউলে আছি।
সামনে আপনাদের কী কী আন্তর্জাতিক সিরিজ আছে?
এমাসের শেষে আমরা দ. আফ্রিকা যাচ্ছি। এরপর ওখান থেকে এসে হয়তোবা আয়ারল্যান্ড যেতে হতে পারে। না হলে মালয়েশিয়াতে এশিয়া কাপ আছে।
লম্বা একটা সময় পর আপনারা আন্তর্জাতিক কোনো সিরিজ খেলতে যাচ্ছেন। এই বিরতিটা নারী ক্রিকেট দলের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর?
আসলে এখন আমরা লাভ-ক্ষতির দিকে তাকাচ্ছি না। সামনের দিকে তাকানোর সময় এসেছে। ঘরোয়া ক্রিকেট লিগটা আমাদের যেহেতু সফল হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী। কারণ আমাদের পারফরম্যান্স বাড়াতে পেরেছি। তার সাথে আমি বলবো যেহেতু আমাদের সামনের লক্ষ্য দ. আফ্রিকা, তাই ওটাকে ঘিরে আমরা অনুশীলন শুরু করতে চাচ্ছি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ৫টি ওয়ানডে ও ৩টি টোয়েন্টি সিরিজের ম্যাচ আছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য কী?
ওখানে আমরা ২০১৩ সালে গিয়েছিলাম। জাতীয় লিগে দেখেছি আমাদের ব্যাটসম্যান ও বোলাররা উন্নতি করেছে। তবে এখানে আমরা ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে থাকবো যে ওরা ভাল স্কোর করবে। আর ওদের উইকেট ভিন্ন টাইপের। তবে আমরা বোলাররা ভাল করবো আশা করি।
বিগ ব্যাশ খেলে এলেন। অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিলো?
পুরোপুরি ভিন্ন। আমাদের দেশের সাথে মিলবে না। ওদের ক্রিকেট কালচার আলাদা। ওদের যেটা দেখলাম বিগব্যাশ খেলাটা একই দিন একই মাঠে একই জায়গায় হচ্ছে। ওদের নারী-পুরুষের সামঞ্জস্য খুবই ভাল লাগলো। ওরা সব একসাথেই করে। একই মাঠে খেলা হচ্ছে। ওদের অনুশীলন সুবিধাদিও খুব ভাল লেগেছে। সেই তুলনায় আমরা যে খুব পিছিয়ে আছি, তেমন নয়। আমরা আগে পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু দিন দিন উন্নত হচ্ছে।
ক্রিকেটার হিসেবে কী শিখলেন?
ওদের পাওয়ার ক্রিকেট দেখলাম। এটা আমার খুবই ভাল লেগেছে। এটা আমি আমার টিমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ওদের মধ্যে যে আচরণ, প্লেয়ারদের যে ইতিবাচকতা, এখান থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের স্বপ্ল বেতন-ভাতা বেশ আলোচ্য একটি বিষয়। ছেলে ক্রিকেটারদের সাথে আপনাদের বেতন-ভাতার আকাশ পাতাল ফারাক। বিষয়টি আপনাদের জন্য কতোটা হতাশার?
এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। কারণ আমরাও ২২ গজে খেলছি। এটা সবাই জানে। আমাদের খেলার মান হয়তো ওদের মতো হয়নি। এটাও ঠিক, আমরা ওদের মতো এতো বেশি ক্রিকেট খেলিনি। আমরা ২০১১ সালে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর মাত্র ৩০ টি ওয়ানডে খেলেছি। আমরা বেতন-ভাতার দিকে তাকাচ্ছি না। ম্যাচের দিকে ফোকাস করছি; ম্যাচ হলে আমাদের বেতন বাড়বে। আমরা নিজেদের দেখাতে পারবো। আমরা আশা করবো ক্রিকেট বোর্ড আমাদের বেতন বাড়াবে।
এই ক্ষেত্রে বিসিবির করণীয় কী?
এটা নিয়ে অতীতে আমরা অনেক ক্ষোভ দেখিয়েছি। তাই আমাদের এই মুহুর্তে কিছুই বলার নেই। তবে আমাদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড পরিচালক ও নারী দলের চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন। ওটা বাস্তবায়ন না হলে আমরা কিছু বলতে পারতাম। যেহেতু উনি আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের বেতনসহ ম্যাচ ফি অনেক বেশি হবে। আমরা আশাবদী।
একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের নারী দলের পারফরম্যান্স নেই। সেই দলের অধিনায়ক হিসেবে আপনার কেমন লাগে?
আমরা কিন্তু দেশের বাইরে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি। আমরা যদি প্রস্তুতিটা আগে থেকে নিই। যেহেতু বড় একটি দল। ওই মানের প্রস্তুতি না হলে খেলাটা জমে না। আমাদের আগে থেকে প্রস্তুত হওয়া উচিত। হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে বা আরো নানাভাবে প্রস্তুত হওয়া যায়। অতীতে আমরা এই ভুলগুলো করেছি। শুধু গুরুত্বপূর্ণ ট্যুর, যেমন বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের মুল দুর্বলতাটা কোথায়?
অস্ট্রেলিয়ায় আমি দেখেছি ওদের প্লেয়াররা ১০০ ভাগ ফিট। ওদের প্লেয়ারদের দেখলে বোঝা যায় সত্যি ওরা প্লেয়ার। এটা আমাদের দেশে কম। আমাদের ফিটনেস বাড়াতে হবে; এটা আমরা চেষ্টা করলেই পারি। এখানে বোর্ডেরও সহযোগিতা লাগবে। কারণ আমাদের সবার সব জায়গায় ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সুযোগ নেই। আমাদের ক্যাম্পগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে নেয়া যায় তাহলে আমাদের প্লেয়াররা ফিট হতে পারবে। আর ছেলেদের মতো আমাদের আলাদা স্পেশালিস্ট ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, ট্রেনার, ফিল্ডিং কোচ নেই। হেড কোচই সব কিছু দেখেন। এদিকটায় আরো নজর দিলে আমাদের ভালো হয়। এরই মধ্যে অবশ্য নতুন সহকারি কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ক্রিকেটার নয় একজন বাঙালী নারী হিসেবে পহেলা বৈশাখকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এটা বাংলাদেশের বড় একটি উৎসব। আপনি দেখেন পহেলা জানুয়ারি সারাবিশ্বে পালিত হয়। আর পহেলা বৈশাখকে জাতীয়ভাবে উদযাপন শুধু আমরাই করি। দিনটি আমার কাছে ভীষণ আনন্দের। শুধু আমার কাছে না, সবার জন্যই আনন্দের। তবে এবার আমরা এই আনন্দটা মিস করবো। ক্যাম্পে দৌড়াতে দৌড়াতে দিন যাবে।
দিনটি আপনার কাছে কেন আনন্দের?
ভাললাগে এই জন্যই; এদিন মেয়েরা শাড়ি-চুড়ি পরে, বাঙালির বেশভুষা ধারণ করে। ঘরে সবারই পান্তা-ইলিশ খাওয়া হয়। একজন বাঙালি হিসেবে আমিও ওই দিন শাড়ী পরে এদিক ওদিক ঘোড়াঘুড়ি করি। আমাদের দেশে পহেলা বৈশাখ এখন ঈদের থেকেও বেশি ঘটা করে উদযাপিত হয়।
পান্তা-ইলিশ পছন্দ করেন?
ভীষণ। পরিবারের সবার সঙ্গে সকালবেলা রমনায় গিয়ে পান্তা-ইলিশ আমার কী মধুর লাগে! কিন্তু এবার খুব মিস করবো। আমার পরিবারকেও মিস করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৮
জেএম