ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

জয়ের জন্য মাঠে নামবো

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৮
জয়ের জন্য মাঠে নামবো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম/ছবি: শোয়েব মিথুন

ঢাকা: স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নিতে শনিবার দিবাগত রাত পৌনে দু’টায় দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। স্বাভাবিক ভাবেই সিরিজটিতে স্বাগতিক প্রোটিয়ারাই এগিয়ে থাকবে। কন্ডিশনতো বটেই মাঠের রণকৌশলেও তারা লাল-সবুজের দলের চাইতে যোজন-যোজন এগিয়ে।

অতীত জয়ের রেকর্ডও তাদের পক্ষেই কথা বলছে। ওয়ানডেতে দুই দলের ১২ বারের মোকাবেলায় ১০ বারই জিতেছে দ. আফ্রিকা।

টি-টোয়েন্টিতেও চিত্র অভিন্ন। ৬ ম্যাচের ১টিতে বাংলাদেশ ও বাকি ৫টিই নিজেদেরর করে নিয়েছে প্রোটিয়া নারী দল।  
 
কিন্তু তারপরেও আসন্ন এই সিরিজটি জয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশ সেরা পেসার জাহানারা আলম। কিন্তু কীভাবে? দ. আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়! সেতো চারটেখানি কথা নয়।  
 
সিলেট সদ্য সমাপ্ত অনুশীলন ক্যাম্পটি খুবই ভালো গেছে। তাই তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
 
প্রায় দেড় বছর বিরতির পর রুমানা-জাহানারারা কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলবেন। সবশেষ খেলেছিল গেল বছরের জানুয়ারিতে। সেখানেও প্রতিপক্ষ ছিল প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশে এসে চার ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে সিরিজটি জিতে নিয়েছিলেন ৪-১।
 
এতো লম্বা বিরিত পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে নামাটা যে কোনো দলের জন্যই দুর্ভাগ্যের। তার ওপরে আবার বাংলাদেশের মতো দাপুটে দেশের ক্রিকেটের নারী দল বলে কথা। কিন্তু জাহনারার সঙ্গে আলাপচারিতায় মনে হলো বিষয়টিকে তিনি সেভাবে ভাবছেন না। বরং লম্বা সময়ের বিরতির জন্য দায়ী করছেন নিজেদেরই।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম/ছবি: শোয়েব মিথুন 
তার মতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ নারী দল ভালো খেলছে না বলেই আইসিসি’র র‌্যাংকিং ৮ এ আসতে পারছেন না। ফলে আইসিসি’র এফটিপি অনুযায়ী ম্যাচগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বছরে নিয়মিত ম্যাচ পেতে নিজেদের বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্পই তার কাছে নেই।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে সেসব কথাই জানালেন জাহানারা আলম। জানিয়েছেন আসন্ন এই সিরিজে ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।   
বাংলানিউজ: দ. আফ্রিকা সিরিজকে সামনে রেখে সিলেটে ১২ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করে এলেন। কেমন হলো?
 
জাহানারা: সিরিজ সামনে রেখে আমরা যে ক্যাম্পটি করেছি অনেক ভাল ছিল। ওখানে আমরা কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি। বরাবর যে ভুল ত্রুটিগুলো হয় ওগুলো নিয়ে কাজ করেছি। যতটুকু সম্ভব সেগুলো শোধরাতে চেষ্টা করেছি। আশা করি ভালো কিছু হবে।
 
বাংলানিউজ: ফিটনেস ও স্কিল ট্রেনিংয়ের (ব্যাটিং, বোলি, ফিল্ডিং) বাইরে আর কী করেছেন?

জাহানারা: আমাদের ২টি প্রস্তুতি ওয়ানডে ম্যাচ ছিলো। তিনটা টি-টোয়েন্টি ছিল। এর মধ্যে দুটি টি-টোয়েন্টি ছেলেদের সঙ্গে খেলেছি। সিলেটের অনুর্ধ্ব ১৭, ১৮ ও ১৯ দলের প্লেয়ারদের নিয়ে দলটি করা হয়েছিল। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের অনুশীলন খুবই ভালো হয়েছে।
 
বাংলানিউজ: অনুশীলনতো ভালো হলো, সিরিজটা কেমন হবে?

জাহানারা: আপনারা জানেন দ. আফ্রিকার কন্ডিশন আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওদের হোম গ্রাউন্ডে ওরা খেলবে। এদিক থেকে ওরা এগিয়ে থাকবে। কন্ডিশনের পাশাপাশি দলগতভাবেও ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে। কারণ ওরা প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। ওদের মধ্যে ৫জন প্লেয়ার আছে যারা বিগব্যাশ খেলে। বিগব্যাশ অনেক হাই কোয়ালিটি একটা টুর্নামেন্ট। সেখানে অনেক ভালো ভালো ব্যাটসম্যান খেলে থাকে। প্রচুর হিট করে। আমাদের তিনটা টি-টোয়েন্টি আছে, ওডিআই আছে। সবদিক থেকেই ওরা এগিয়ে। তারপরেও আমারা আশাবাদী। মাঠে নামবো জয়ের জন্য।
 
বাংলানিউজ: বলছিলেন ওরা প্রচুর ম্যাচ খেলে, আপনারা পারেন না। কতখানি কষ্টের?

জাহানারা: ঠিক কষ্ট কথাটা বলবো না। ওরা ম্যাচ খেলে এজন্য যে ওরা আইসিসির সিডিউলের মধ্যে আছে। র‌্যাংকিংয়ে আটে। আমরা আটের বাইরে। আটের বাইরে যারা তারা আইসিসি শিডিউলেরও বাইরে। তাই কষ্ট পাই না। তবে আমোদের আরও ভাল খেলতে হবে। তাহলে র‌্যাংকিংয়ে আটের মধ্যে আসতে পারবো। তখন আমাদের সিরিজ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আবার বিশ্বকাপ নিয়ে চিন্তাও করতে হবে না যে বাছাইপর্ব খেলে যেতে হবে।

বাংলানিউজ: আপনি দেশের সেরা পেসার। সেই বিবেচনায় সাত বছরের ক্যারিয়ারে দেশকে কতুটুক দিতে পেরেছেন?

জাহানারা: প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিজের দেশের মধ্যে করা উচিত বলে আমি মনে করি না। আমি কতটুকু দিতে পেরেছি বা আমি সেরা পেসার এভাবে  কখনও ভাবি না। আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিজের সঙ্গে করি। আমি সবসময় ভাবি, দেশকে কিছু দিতে পেরেছি কী না। দ্বিতীয়ত, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বাইরেরে যেসব পেসাররা আছে তাদের টপকে আমি র‌্যাংকিংয়ের মধ্যে আসতে চাই। যদি বলেন দেশকে কতটুকু দিতে পেরেছি? আমি জানি দেশকে আমি অতটা দিতে পারিনি। আপনারা দেখেছেন যে ওভারঅল টিম পারফরম্যান্সে আমরা অনেক পিছিয়ে। তো দেখা যায় দু’একজন পারফর্ম করলেও দলের জয় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপরেও আমি কিছুটা হলেও খুশি এইজন্য যে এই পর্যন্ত দেশের বাইরে আমরা যতগুলো ম্যাচ জিতেছি তার ৯০ ভাগ ম্যাচেই  বোলিংয়ে আমি পারফর্ম করেছি। আমি মনে করি বোলিংয়ে শুরুটা যদি ভালো করি তাহলে দলের ম্যাচ জেতা সহজ হয়ে যায়। তাই আমি মনে করি শুরুতে আমার ভূমিকাটা বেশি এবং আমাকে ভাল করতে হবে।
 
বাংলানিউজ: আপনারা সবশেষ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছি গেল বছরের জানুয়ারিতে এই দ. আফ্রিকার বিপক্ষে। প্রায়  দেড় বছরের বিরিততে আবার খেলছেন  সেই দ. আফ্রিকার বিপক্ষে। এতো বড় গ্যাপ দেশের ক্রিকেটের জন্য কতুটুক ক্ষতি?
 
জাহানারা: ক্ষতি বলবো না। কারণ আমাদের কিছু করার নেই। আমরা প্রকৃতির কাছে বাধা। চাইলেও খেলতে পারছি না।
 
বাংলানিউজ: প্রকৃতির কাছে নাকি বোর্ডের কাছে বাধা?

জাহানারা: বোর্ড অনেক চেষ্টা করে। একটু ভালো করে খোঁজ নিলে দেখবেন বোর্ড প্রচুর চেষ্টা করে। যতই চেষ্টা করুক এর ফলাফলতো আসতে হবে। কারণ যে বোর্ডের সঙ্গে আমাদের বোর্ড সিরিজ আয়োজনের চেষ্টা করছে তারা নিশ্চয়ই অন্য কোনো দলের সঙ্গে সিরিজ খেলতে ব্যস্ত। একারণেই আমরা এগিয়ে যেতে পারি না।      
 
বাংলানিউজ: অধিনায়কত্ব মিস করেন?

জাহানারা: ওভাবে মিস করি না। কারণ একজন অধিনায়ক একটা দলকে যেভাবে প্রতিনিধিত্ব করে একজন প্লেয়ার হিসেবে আমিও করি। তাই মিস করার কোনো কারণ নেই।
 
বাংলানিউজ: যদি আবার অধিনায়ক করা হয় খুশি হবেন নিশ্চয়ই?

জাহানারা: লিডারশিপ অনেক বড় বিষয়। বোর্ড যখন আমাকে সেটা দিয়েছিল খুশি হয়েছিলাম। অনেক আনন্দিত ছিলাম। আবার যদি পাই অবশ্যই আনন্দিত হবো।
 
বাংলানিউজ: বলছিলেন আপনারা ভাল পারফর্ম করতে পারছেন না। কী করলে পারবেন?
 
জাহানারা: আমার মনে হয় আমাদের সাহসের অভাব আছে। এই সাহস জিনিসটা নিয়ে আসতে হবে। আমাদের ছেলে ক্রিকেটাদের কথাই যদি ধরেন ওরা আগে রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলতো। কিন্তু তারা এখন আক্রমণাত্মক খেলে। বিগত ৩-৪ বছর ধরে তারা এতো ভালো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে যে ধারাবাহিকভাবে আমরা সিরিজ জিতে আসছি এবং ভালো ভালো দলের সঙ্গে। সেই তুলনায় মেয়েদের ক্রিকেট অনেক পিছিয়ে। কারণ এখানে প্রয়োগের অভাব। আমরা আমাদের ম্যাচ পরিকল্পনা মাঠে প্রয়োগ করতে পারি না। মূল বিষয় হলো সাহস। আমরা সাহস দেখাতে পারি না আমাদের আক্রমণাত্মক হতে হবে।
 
বাংলানিউজ: সিরিজে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী থাকেবে?

জাহানারা: অবশ্যই সিরিজ সেরা বোলার।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৮
এইচএল/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।