লিগ শেষে ক্লাব মালিকরা কথা দিয়েছিলেন রোজার ঈদের আগেই সবার পাওনা পরিশোধ করে দেয়া হবে। কিন্তু কিসের কী? রোজার ঈদ গিয়ে কোরবানির ঈদও এল, তবুও পাওনা পেতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দ্বারে দ্ধারে ঘুরতে হচ্ছে জুনায়েদ সিদ্দিকী, অলোক কাপালি, খালেদ মাহমুদ, কাজী অনীকের মতো দুর্ভাগা ক্রিকেটারদের।
প্লেয়ারস বাই চয়েস পদ্ধতিতে সিসিডিএম’র নির্দেশনামতে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ড্রাফটে থাকা প্লেয়ারদের মোট পারিশ্রমিকের ৫০ ভাগ, টুর্নামেন্ট চলাকালীন ২৫ ভাগ এবং টুর্নামেন্ট শেষের এক মাসের মধ্যেই বাকি ২৫ ভাগ পাওনা পরিশোধ করে দিতে হবে। অথচ ব্রাদার্স ইউনিয়ন দেয়নি।
তাই রোববার (১৯ আগস্ট) বিসিবি সিইও নিজাম উদ্দীন চৌধুরী সুজনের কাছে তারা ফরিয়াদ নিয়ে এসেছিলেন। হয়তো তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। তাই অভিযোগ করেছেন ক্রিকেটারদের ভাল-মন্দ দেখার প্রতিষ্ঠান ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) কাছে। তারা নাকি আশ্বাস দিয়েছেন সেপ্টেম্বরেই ক্লাবটি তাদের বকেয়া বুঝিয়ে দেবে।
বিসিবি কর্তার কাছে ফের অভিযোগ পত্র দাখিল করে সংবাদ মাধ্যমকে সেকথাই জানালে বঞ্চিতদের প্রতিনিধি ও লাল সবুজের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার অলোক কাপালি।
‘সাধারণত লিগ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে আমাদের সেলারি দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সেভাবেই যোগাযোগ করেছি ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাথে, শেষে বলেছিল রোজার ঈদের আগে দেবে। এরপরে ঈদ শেষ হয়ে গেল। এরপরে আর তারিখ দেয়নি কেউ। তারপরে আবার ওরা বলেছে কোরবানি ঈদের আগে সেলারি দেবে। কিন্তু আজকে শেষ কর্মদিবস। আজকেও ওদের কোন খোঁজ নেই। তারপর বাধ্য হয়ে আমরা কোয়াবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এখন ওরা বলছে সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের সেলারি দেবে। ’
‘ব্রাদার্স ইউনিয়নের এই ইস্যু নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছি। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে এবং সিসিডিএমের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট বোর্ডকে দুটো চিঠি দেওয়া হয়েছে। একমাস আগে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তার আগে আরেকটি। কিন্তু এখনো ওদের পেমেন্ট ক্লিয়ার হয়নি, এই বিষয়টি দুঃখজনক। ’ যোগ করেন অলোক কাপালি।
কাপালি অভিযোগ করলেন লিগে প্লেয়ার বাছাইয়ের পদ্ধতি প্লেয়ার্স বাই চয়েস নিয়েও। তার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে প্লেয়ারর্স বাই চয়েস পদ্ধতি চালু করাতেই পাওনা নিয়ে তাদের এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে, ‘প্লেয়ার বাই চয়েস আমাদের জন্য ভালো হচ্ছে কিনা সেটাও আরেকবার দেখা উচিৎ। কেননা আগে আমরা এমনিতেই চুক্তি করে খেলতাম। তখন এসব সমস্যা হত না। সবাই তো আর বিপিএল খেলে না। প্রিমিয়ার লিগ, এনসিএল, বিসিএলে খেলে; এমনকি বিসিএলেও সবাই খেলে না। তাই এই প্রিমিয়ার লিগ কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সব কিছু মেনেও সময়মতো সেলারি না পাওয়া দুঃখজনক। ’
বিষয়টি কতখানি দুঃখজনক এবং আদৌ ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটা উচিৎ কী না কিংবা প্লেয়ারর্স বাই চয়েস ক্রিকেটারদের জন্য আদৌ আশীর্বাদ কী না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ‘কোয়াব’ জেনারেল সেক্রেটারি দেবব্রত পালের কাছে। তিনি জানালেন, অলক কাপালি একজন টেস্ট ক্রিকেটার। সে যখন ঈদের আগে এসে মিডিয়ার সামনে এসব নিয়ে কথা বলে সেটা অবশ্যই সবার জন্য হতাশা জনক। শুধুমাত্র কোয়াবের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আমার জন্য না, পুরো কোয়াব কমিটির জন্যই বিষয়টি হতাশাজনক।
‘প্লেয়ার বাই চয়েস নিয়ে প্লেয়ারদের মধ্যেও কনফিউশন আছে। তারপরেও এই নিয়মটি যেহেতু করা হয়েছে, এটাই কিভাবে শতভাগ কাজে লাগানো যায় ক্রিকেটারদের রাইটস অক্ষুণ্ণ রেখে এটাই দেখা উচিৎ এখন। ’
‘আমরা কিন্তু শুরুতেই প্লেয়ার বাই চয়েসের পক্ষে ছিলাম না। এই ক্রিকেটাররা মিলেই কিন্তু বলেছিল এর বিপক্ষে। কিন্তু বিসিবির সামনে কয়েকজন ক্রিকেটার মিলেই ঠিক করেছিল এই নিয়ম। ক্রিকেটাররা যদি সংঘবদ্ধ হয় তাহলে কিন্তু বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। তারাও আমাদের খুব কাছের, এদের সঙ্গে বোঝাপড়াও ভালো। এখন বিষয়টি নিয়ে যদি তারা সহযোগিতা করে তাহলে সমাধান আসবে। ’-যোগ করেন দেবব্রত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ১৯ আগস্ট, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস