১৪৫ টেস্ট ম্যাচ খেলে অবিশ্বাস্য এক ক্যারিয়ার কাটানো ওয়ার্নের ঝুলিতে আছে ৭০৮ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৩৭ বার, আর ১০ উইকেট নিয়েছেন ১০ বার।
টেস্ট ক্রিকেটে ৬শ’ আর ৭শ’ উইকেট পাওয়া প্রথম বোলার ওয়ার্ন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ১০০০ উইকেটের স্বাদ পাওয়া প্রথম বোলারও তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৯৩ উইকেট নেওয়া ওয়ার্ন ব্যাট হাতেও ১০১৮ রান আর টেস্টে ৩১৫৪ রান করেছেন। টেস্টে লোয়ার অর্ডারে ১৯৯ ইনিংসে ব্যাট করে করেছেন ১২টি হাফ সেঞ্চুরি।
টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সাহায্য ছাড়াই তিন হাজারের বেশি রানের মালিক তিনি। যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ রানের একটি ইনিংসও আছে তার।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সেমিফাইনাল ও ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন। সেই থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ক্রিকেটবিশ্বে অজিদের একক পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকার পেছনেও অন্যতম নিয়ামক ছিলেন এই জেনুইন লেগ স্পিনার।
লেগ স্পিনার হিসেবে তার অসংখ্য কীর্তির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে তার ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’। ১৯৯৩ সালে মাইক গ্যাটিংকে আউট করা বলটি আজও বিস্ময় জাগায়। গত শতাব্দীর সেরা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড দলেও আছেন তিনি।
ক্যারিয়ারে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন শেন ওয়ার্ন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের আগে ডোপ টেস্টে ফল পজিটিভ হয়ে ক্রিকেট থেকেই নিষিদ্ধ হন।
এছাড়া তার ক্যারিয়ারে নারী সংক্রান্ত বিতর্ক ছিল নিত্যসঙ্গী। ২০০৪ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেটে ফেরেন, তবে ওয়ানডে না খেলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলে যান।
জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আর ভারতের আইপিএলে খেলা চালিয়ে যান ওয়ার্ন। আইপিএলের প্রথম আসরেই রাজস্তান রয়্যালসের নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জিতে নেন।
‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’
১৯৯৩ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে স্পিন বিশেষজ্ঞ ইংলিশ ব্যাটসম্যান মাইক গ্যাটিংকে যখন বোল্ড করে দিলেন শেন ওয়ার্ন, তখন তার ঝুলিতে ছিল মাত্র ১১ টেস্ট ম্যাচের অভিজ্ঞতা। ওই বলের ভিডিও আজও বিস্ময় জাগায়। অবিশ্বাস্য লেগব্রেক, হুট করেই লেগ স্ট্যাম্প থেকে বল অসম্ভব বাঁক নিয়ে মাইক গ্যাটিংকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে অফ স্ট্যাম্পের বেল ফেলে দিলে মাঠে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যান।
বেচারা গ্যাটিং তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কি করে এটা হলো। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন লেগ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের একটা বল ছেড়ে দেওয়াই স্বাভাবিক খেলা। কিন্তু তরুণ এক লেগ স্পিনারের কীর্তি তার স্বাভাবিক খেলাকেও পরাস্ত করে দিলো। ওই একটা বলই সারাবিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় করে তোলে ওয়ার্নকে। ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের স্বর্ণযুগে স্পিন আধিপত্যের প্রথম উদ্যোক্তা বলা হয় তাকেই। তার এক বলেই ক্রিকেটের ইতিহাসের পাতা উল্টে যায়।
এবার শেন ওয়ার্ন সম্পর্কে সাতটি অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
১. শেন ওয়ার্ন যখন প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামেন তখন তার ওজন ছিল ৯৭ কেজি!
২. তার একটা চোখ সবুজ, একটা চোখ নীল। এমনটা হওয়ার কারণ ‘হেটেরোক্রমিয়া’ নামক একটি রোগ।
৩. সাবেক স্ত্রী সিমোনে কালাহানের ঘরে তার তিন সন্তান- ব্রুক, সামার ও জ্যাকসন।
৪. অবসর নেওয়ার পর অসুস্থ ও অবহেলিত শিশুদের জন্য সেবামূলক কাজে যুক্ত হন তিনি।
৫. অভিনেত্রী এলিজাবেথ হার্লির সঙ্গে ২০১১ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই লেগ স্পিনার। কিন্তু ২০১৩ সালেই তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
৬. ১৯৯৫ সালে এক জুয়াড়ির কাছে পিচের তথ্য প্রকাশ করায় বোর্ড কর্তৃক জরিমানার মুখে পড়েন তিনি।
৭. ধূমপান ছাড়ার জন্য অজি ক্রিকেট বোর্ড তাকে একবার আলাদা খরচ দিয়েছিল। একসময় সিগারেট ছাড়া থাকতেই পারতেন না ওয়ার্ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
এমএইচএম/আরআর