অথচ ম্যাচ শুরুর আগে দলে কোনো পেসার না থাকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেই যে এমন ঘটনা প্রথম ঘটল।
কিন্তু স্পিনারদের হাত ধরে এমন অবিশ্বাস্য জয়ের পর সেসব ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেছে। পুরো সিরিজেই স্পিনাররাই ছিলেন জয়ের মূল উৎস। চট্টগ্রামের স্পিন বান্ধব পিচে তাইজুল ইসলাম একাই তুলে নেন ৭ উইকেট। ওই টেস্টে অভিষেক হওয়া নাঈম ইসলাম প্রথম ইনিংসে পান রেকর্ড ৫ উইকেট। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেটের দেখা পানিনি। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তুলে নেন মোট ৫ উইকেট। আরেক স্পিনার মেজেদি হাসান মিরাজ পান ৩ উইকেট।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মেহেদি হাসান মিরাজ একাই ১১৭ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ১২ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ার সেরা অর্জন। সাকিব নেন ৪ উইকেট। উইন্ডিজদের প্রথম ইনিংসে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পান ৩ উইকেট ও নাঈম পান একটি উইকেট।
এমন স্পিন দাপটে পেসারদের হাতে ছিল অখণ্ড অবসর। সেই সঙ্গে কাজের চাপ ছিল না পেস বোলিং কোচেরও। দলের ম্যাচে দর্শক হিসেবে থাকা ছাড়া পেসারদের নিয়ে অনুশীলন করেই সময় কেটেছে তার। তবে এতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। তার কাছে ফলটাই বড়।
আজ সোমবার (৩ ডিসেম্বর) সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তেমনটাই জানালেন এই ক্যারিবীয় কিংবদন্তি।
'আমরা এখানে জিততেই এসেছি। পিচ যেমন, জেতার জন্য তেমন কম্বিনেশন সাজিয়েই খেলতে হবে আমাদের। আমি সবসময় এটা নিয়ে খুশি। '
চার স্পিনার নিয়ে খেলানোর সমালোচনার জবাবে ক্যারিবিয়ানদের সোনালী সময়ের উদাহরণ টেনে ওয়ালশ বলেন, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন রাজত্ব করত, তাদের দলে চার পেসার থাকতো। এখন বাংলাদেশ চার স্পিনার নিয়ে খেলে রাজত্ব করছে, এটাই স্বাভাবিক ধারা। তাছাড়া পিচ মোটেও স্পিন বান্ধব ছিল না। আমাদের মনে হয়েছে স্পিনাররাই এখানে বড় ভূমিকা রাখবে এবং সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। '
কিন্তু এই যে স্পিন নির্ভর দল গড়া হচ্ছে, আখেরে দলের পেসারদের এতে ক্ষতি হচ্ছে কিংবা পেসাররা এতে অসহায় হয়ে পড়ছে কিনা, এমন মন্তব্যের সঙ্গে মোটেই একমত নন ওয়ালশ।
'মোটেই না। ট্যাকটিক্যালি আমরা চেয়েছিলাম ম্যাচ ও সিরিজ জিততে বেশি স্পিনার খেলাতে। সেটি অর্জিত হয়েছে। মূল লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ছেলেরা ভালো খেলেছে। জয়টা হয়তো খুব সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দুটি দিন ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দারুণ খেলেই জিতেছে। '
সামনেই নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে টাইগাররা। সেখানে পেস বান্ধব পিচ থাকবে। ফলে কিউই সফরে পেসারদের সামনে সুযোগ থাকবে নিজেদের প্রমাণ করার, এমনটাই মনে করেন এই ক্যারিবীয় গ্রেট।
'আমি মনে করি এই টেস্ট সিরিজ দেখিয়ে দিয়েছে, যখনই সুযোগ আসবে ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। আশা করি আমরা যখন নিউজিল্যান্ড সফরে যাব, সিমাররা ভালো সুযোগ পাবে। সেখানে আমরা ভিন্ন উইকেট পাব এবং তারা (পেসাররা) সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। '
'আমরা কোনো বিদেশ সফরে সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি, এটা বড় চিন্তার বিষয়। কেউ তার হাত তুলে বলেনি যে, ঠিক আছে, আমি হয়তো বাংলাদেশে খেলার সুযোগ পাইনি কিন্তু যখন আমি বাইরে খেলতে যাচ্ছি, আমি নিজেকে খেলোয়াড় তালিকার শীর্ষে দেখতে চাই। '
খেলার সুযোগ না পেয়ে পেসাররা নিশ্চয়ই কিছুটা হতাশ। তবে নিজের শিষ্যদের সান্ত্বনা দিতে ওয়ালশ বলছেন, 'এটা শুধুই একটা টেস্ট ম্যাচ যেখানে কোনো ফাস্ট বোলার খেলেনি। একটা টেস্টে মোস্তাফিজ খেলেছে, আরেকটা খালেদ আর ফিজ একসঙ্গে খেলেছে। এটা টেস্ট জেতার চেষ্টা থেকেই করা হয়েছে। ট্যাকটিক্যালি আমরা বুঝতে পারছিলাম যে, ফাস্ট বোলার ছাড়াই ম্যাচ জেতার ভালো সুযোগ আছে। শেষ পর্যন্ত ফলটাই আসল। '
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
এমএইচএম