টেলিভিশনে খেলা দেখে বিশ্বের অন্তত ১৫ ক্রিকেটারের বোলিং রপ্ত করেছে শিশুটি। মারুফের বোলিংয়ের মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়ে ক্লাব পর্যায়ের খেলোয়াড়দেরও।
সিলেট নগরের উপকণ্ঠ সদরন উপজেলার টুলটিককর ইউনিয়নের উত্তর বালুচরের বাসিন্দা কাজল মিয়ার ছেলে মারুফ আহমদ রাসেল (১০)। নিতান্তই দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা পেশায় দিনমজুর। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। জীবন-জীবিকার তাগিদে সেখান থেকে এসে নগরের উপকন্ঠ বালুচরে একটি কলোনীতে পরিবার নিয়ে থাকেন কাজল মিয়া। আর তার ঘরেই প্রতিভার আলো এই মারুফ।
বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিন বিকেলে মারুফ ক্রিকেট খেলে সময় কাটায় সিলেট কৃষি ইউনিভার্সিটির পেছনের টিলায়। টিলার ভাজে কেটে তৈরী ক্রিকেট পিচে ক্ষুদে এই ক্রিকেটারকে আবিস্কার করে বাংলানিউজ।
ক্ষণিক সময়ে মারুফের মাঝে ফুটে উঠেছে বিশ্বের তারকা ক্রিকেটারদের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইডল মাশরাফি বিন মর্তুজা, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, আফগান অফ-ব্রেক বোলার মুজিবুর রহমান, ভারতীয় ধীর গতির চায়নাম্যান খ্যাত কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল, ভারতীয় দলের ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার জসপ্রিত বুমরাহ, ক্যারিবিয়ান অফ স্পিনার সুনীল নারাইন ও ফাস্ট বোলার আন্দ্রে রাসেল, পাকিস্তান দলের অলরাউন্ডার শাহিদ আফ্রিদি-সহ অন্তত ১৫ ক্রিকেটারের অনুকরণে বল করতে পারে শিশু মারুফ।
তার এই অর্জন কারও শিখিয়ে দেওয়া নয়। কেবল টেলিভিশন সেটের সামনে বসে বিপিএল-সহ বিভিন্ন ক্রিকেট ম্যাচ দেখে বোলারদের অনুকরণ করা, এরপর মাঠে এসে তা রপ্ত করেছে মারুফ। তবে পড়ালেখায় মনোনিবেশে পরিবার থেকে বাধে এলেও লুকিয়ে এসে মাঠে বল হাতে নিয়মিত অনুশীলনে বাদ পড়ে না তার। যে কারণে এই বয়সেও স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবে যুক্ত করা হয়েছে মারুফের নাম।
চঞ্চল প্রকৃতির বাচন-ভঙ্গিতে চটফটে মারুফ বাংলানিউজকে জানায়, ‘যখন নার্সারি টু’তে উঠেছি, সেই সময় থেকে ক্রিকেট খেলা মাঝেমধ্যে দেখে এরপর বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে আসতাম। এক বছর পর সব বোলারের আদলে বল করে দেখতাম, আমার সব বল অবিকল হয়ে যাচ্ছে। ’
মারুফ ইচ্ছা পোষণ করে বড় হয়ে একজন ভাল ক্রিকেটার ও লেগ স্পিনার হওয়ার। সে জানায়, মহল্লার ওই মাঠে অনুশীলনের জন্য কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা নেই। মাঝে মধ্যে বন্ধুদের নিয়ে কাঠের বল দিয়ে খেলি। বড় ক্রিকেটার হতে সবার দোয়া চেয়েছে সে।
মারুফের এই প্রতিভার বিষয়ে দক্ষিণ বালুচরের কাওসার আহমদ বলেন, আমরা তার খেলার ধরণ দেখে আশ্চর্য হয়েছি। কয়েক ধরণের বল করতে পারে সে। প্রত্যেক বোলার যে কন্ডিশন বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বল করেন, সে অনুরূপ তাকে কপি করে বল করতে পারে। মাশরাফি যেভাবে রানআপ করেন, সে ঠিক একইভাবে রানআপ করে থাকে। যেমন, বুমরাহ ইন-সুইং আউট সুইং বল করেন, আফ্রিদি আউট সুইং বল করে থাকেন, মারুফও ঠিক সেভাবে বল করে।
তিনি বলেন, এই বয়সে সে কাঠের বল দিয়ে অনুশীলন করে। ওটা কিন্তু টেনিস বল না। আমার নিজেরও তার বল মোকাবেলা করতে কষ্ট হয়। প্যাড পরা নয়, এ অবস্থায় ব্যাট কবতে গিয়ে তার ইনসুইং করা বল পায়ে আঘাত করে। তাকে যত্ন নিলে এবং সহযোগিতা পেলে সে ভবিষ্যতে দেশের বড় একজন ক্রিকেট তারকা হয়ে উঠবে।
স্থানীয় বালুচর সানরাইজ ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. কবির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এই টিলার অন্য পাশে সানরাইজ ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যরা বিকেলবেলা অনুশীলন করেন। কিছুদিন আগে এই রাসেলের আবির্ভাব। তখন সে বললো, আমি রশিদ খান, শাহিদ আফ্রিদি, মোস্তাফিজসহ সব বোলারের বল করতে পারি। আমরা তার বল করা দেখলাম, প্রত্যেকটা বোলারের আলাদা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বল করতে পারে সে। এরপর থেকে ক্লাবের সদস্যরা প্রতিদিন তার খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়। ক্লাবের বর্তমান সদস্যরা তাকে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘন্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
এনইউ/ইউবি