বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়ে অধিনায়কত্বের ইতি টানেন মাশরাফি।
ব্যাটিংয়ে নেমে বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ পায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তোপে ৩৭.৩ ওভারে ২১৮ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
স্মরণীয় এই ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় মোহাম্মদ নাঈম ও আফিফ হোসেনের।
ম্যাচে তামিম-লিটন ভেঙেছেন দীর্ঘদিনের একটি রেকর্ড। ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ওপেনিং জুটিতে ১৭০ রান করেছিল শাহরিয়ার-মেহরাব জুটি। এবার ২১ বছর পর সেই রেকর্ড নিজেদের নামের পাশে লিখিয়ে নিলেন তামিম-লিটন। ভেন্যু ভিন্ন হলেও একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ওপেনিং জুটিতে এই রেকর্ড গড়েন তারা।
ওপেনিং জুটিতে তামিম-লিটন আজ যে রান তুলেছেন তা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে যেকোনো জুটিতে সর্বোচ্চ। এর আগের রেকর্ডটি ছিল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর। ২০১৭ সালে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ম উইকেটে ২২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। আজ ২৯২ রানের জুটিতে সে রেকর্ড ভাঙলেন তামিম-লিটন।
কেবল তাই নয়, ক্রিকেট দুনিয়ারও তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছেন তামিম-লিটন। উইন্ডিজের ক্যাম্বেল ও শাই হোপ উদ্বোধনী জুটিতে ২০১৯ সালের ৫ মে আয়ারল্যাণ্ডের বিপক্ষে ডাবলিনে করেছিল ৩৬৫ রান। তাদেরটি রয়েছে বিশ্ব রেকর্ডের প্রথম স্থানে।
উদ্বোধনী জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই করেছিলেন পাকিস্তানের ফখর জামান ও ইমামুল হক। ২০১৮ সালের ২০ জুলাই জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে করেছিল ৩০৪ রানের জুটি। এর পরেই আছে তামিম-লিটনের এ জুটিটি।
বৃষ্টির কারণে ডাক ওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জিম্বাবুয়ের সামনে ২০ রান বেড়ে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪২।
কিন্তু শুরুতে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দীনের তোপে ২ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউইকে (৪) সাজঘরে ফেরান অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ খেলতে নামা ‘ম্যাশ’। সাইফউদ্দীন তুলে নেন ব্র্যান্ডন টেইলরকে (১৪)।
এরপর অবশ্য প্রতিরোধের চেষ্টা করেন ওপেনার রেগিস চাকাবা ও অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। তবে তাদের এ জুটি ভাঙেন অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নাম আফিফ হোসেন। উইলিয়ামস ফেরেন ব্যাক্তিগত ৩০ রানে। এরপর চাকাবাকে (৩৪) বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। ওয়েসলি মেধেভেরেকে (৪২) নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান সাইফউদ্দীন। রান আউট হয়ে ফেরেন উইকেটরক্ষক রিচমন্ড (০)।
শেষ দিকে সিকান্দার রাজার ৫০ বলে ৬১ রানের ইনিংস শুধু ব্যবধানই কমায়। তাকে তুলে নেন সাইফউদ্দীন। ডোনাল্ড ট্রিপানোকে ব্যক্তিগত ১৫ রানে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। আর চার্লটন শুমা শূন্যরানে বোল্ড হন সাইফউদ্দীনের বলে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট তুলে নেন সাইফ। দুই উইকেট পান তাইজুল। এছাড়া একটি করে উইকেট পান মাশরাফি, মিরাজ ও মোস্তাফিজ।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ৩৩.২ ওভারে বৃষ্টি হানা দেয়। যখন বিনা উইকেটে ১৮২ করে তামিম-লিটন জুটি। তবে বৃষ্টির পর ৯.৪ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে স্কোরবোর্ডে আরও ১৪০ রান যোগ করে টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে এসেও পেলেন অপরাজিত সেঞ্চুরি। কিন্তু তার ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরিকেও ম্লান করে দিয়েছেন লিটন দাশ।
তামিমের রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি পাওয়া এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। কার্ল মাম্বার বলে সিকান্দার রাজার হাতে বন্দী হওয়ার আগে ১৪৩ বলে ১৬ চার ও ৮ ছক্কায় ১৭৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন লিটন।
সিলেটের বৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও ঝড় তুলেন তামিম-লিটন। ৪০.৫ ওভারে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ওপেনিং জুটিতে দুজনে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ২৯২ রান। যা বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি।
লিটন ফিরলেও অবশ্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন তামিম। তার ১০৯ বলে ১২৮ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭ চার ও ৬ ছ্ক্কায়। বাংলাদেশের হয়ে মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানের পরে ওয়ানডেতে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি পেলেন তামিম। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব অবশ্য এই মাইলফলকে পা রেখেছিলেন দু’টি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বকাপে।
শেষদিকে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে মাহমুদউল্লাহ ৩ এবং অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা আফিফ হোসেন ৭ রান যোগ করেন।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে লিটন দাশের হাতে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২০
এমএমএস