সেসময় শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল, বারবার সময় নিয়েও বেতন না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ফার্মের দুই শতাধিক শ্রমিক। এ সময় বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।
সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের শ্রমিক মনোয়ারা সেসময় বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য এই কাঁকড়ার ফার্মে কাজ করি। কিন্তু গত চার মাস বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে খাবার না থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম ফার্ম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। যদিও সাকিব আল হাসানের এই প্রজেক্টের দ্বিতীয় কর্ণধার সগীর হোসেন পাভেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে নিয়ে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দেন সাকিব। যেখানে পুরো বিষয় নিয়ে বলেন তিনি। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:
দেরিতে সাড়া দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত তবে আপনাদের কাছে সত্যটা তুলে ধরার জন্য আমি সমস্ত তথ্য এক করার চেষ্টায় ছিলাম। আর আমার নামের সঙ্গে এই অ্যাগ্রো ফার্মের সরাসরি নামকরণ হওয়া মূলত প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু প্রচুর ব্যস্ততার কারণে আমার অন্য কোম্পানিগুলোর মতো এখানেও আমার সহমালিক বা পার্টনাররা দেখভাল করছেন। এ কারণে নিয়মিত আমার খোঁজ নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। আপনারা সবাই জানেন আমার বছরের বেশি সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়, এছাড়া আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে ফলে অ্যাগ্রো ফার্মের সব খবর আমি নিতে পারিনি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমি শ্রমিকদের এই বিষয়টা জেনেছি। তবে আমার পার্টনাররা আমাকে পুরো বিষয়টি জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। শ্রমিকদের আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই সব পাওয়া দেওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। যদিও সবার কাজ জানুয়ারিতেই শেষ হয়েছিল। কিন্তু ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাওনা পাওয়ার ব্যাপারটি জানলেও হঠাৎই তারা রাস্তার নেমে এসে বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টি করল। নিচু মানসিকতার কিছু মানুষের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই সম্ভবত এমনটা করা হয়েছে।
যাই হোক, এমন বিষয় জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি সমাধানের উদ্যেগ নিয়েছি । আমার নিজের আয় থেকে তাদের বেতন পরিশোধ করে দেব। কোন কোম্পানির বা আমার অংশীদারদের থেকে নিয়ে নয়। আসলে আমি মনে করি এটা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ একটা বিষয় যা অভ্যন্তরীণই থাকাই উচিৎ ছিল। আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি তাদেরকে মাস শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না দেখে। যেহেতু তারা নিজেরাই এই বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। আরও অনেকের মতোই আমিও অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছি, তাই অবাক হচ্ছি যে, মানুষ এটা কিভাবে ভাবল এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে আমি বঞ্চিত করব, যাদেরকে গত ৩ বছর ধরে নিয়মিত বেতন দিয়ে আসা হচ্ছে।
দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে মিডিয়ার ভুল তথ্যের কারণে এটা এমন আকার ধারণ করেছে। এটা ভালো হত যদি তারা রঙ ছড়ানো হেডলাইন না করে আসল সত্যটা সামনে আনতো। যেটা আংশিক মিথ্যে ও বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।
আমার মনে হয় মিডিয়ার একটা শক্তিশালী ভূমিকা আছে সত্য যাচাই করার এবং সঠিক তথ্যের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করার। তা না হলে হয়তো তারা আরও অনেককেই আমার মতো আঘাত করবে কোন কারণ ছাড়া। তারা পুরো বিষয়টায় ভালোভাবে নজর দিয়ে বাকি অংশীদারদের নামেও দায় আনতে পারত শুধুমাত্র আমার নামটা তুলে ধরার বদলে। আমি আশা করি, মিডিয়া এবং সাংবাদিকরা প্রতিবেদন করার বেলায় আরও যত্নবান হবেন।
একটা জাতি হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে মনযোগ দেয়ার এবং আমাদের উচিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং কঠোর হওয়া। আমার মনে হয় আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।
সবাই নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২০
এমএমএস