গত কয়েক বছর ধরেই আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। এমনকি খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতাও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বোর্ড।
করোনাকালের প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ার পর মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) নিজ দেশের ক্রিকেটের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন হোল্ডার। একইসঙ্গে নিজেদের আর্থিক সঙ্কটের আপাত সমাধানের জন্য ইংল্যান্ডকে ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার অনুরোধ জানান এই অলরাউন্ডার।
ক্যারিবীয় ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে হোল্ডার জানান, ক্রিকেটে ব্যয় করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বিশেষ করে ‘এ’ দলের সফর এবং ক্রিকেটের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম থমকে আছে। এমনকি সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সফরে আসার আগেই হোল্ডারদের বেতন ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সফরের আগেই ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কাছ থেকে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধারও নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট।
ইংল্যান্ড সফর শেষে এবার ওয়েস্ট ফিরে যাচ্ছে হোল্ডারবাহিনী। সেখানে তারা আসন্ন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) অংশ নেবেন। কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক সূচি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। হোল্ডার জানালেন, তারা শুধু ইংল্যান্ড এবইং ভারতকে ঘরের মাটিতে আতিথ্য দিয়ে অর্থ কামাতে পারেন। এজন্যই ইংল্যান্ড দলকে ক্যারিবিয়ান সফরে যাওয়ার অনুরোধ তার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে হোল্ডার বলেন, ‘আমি আমাদের (বোর্ডের) প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভের সঙ্গে কথা বলছিলাম, যিনি নিজেই জানালেন যে আমরা শুধু ইংল্যান্ড এবং ভারতকে আতিথ্য দিয়েই অর্থ আয় করতে পারি। হয়তো অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানকে আতিথ্য দিয়েও কিছুটা আয় হয়। কিন্তু অন্যদের আতিথ্য দিয়ে উল্টো লোকসান গুনতে হয়। ’
আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার আরও বলেন, ‘আমরা জানি না এই সিরিজের পর আমাদের আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের কী হবে, কিন্তু যদি ইংল্যান্ড দল এই বছর শেষের আগেই ক্যারিবিয়ান সফরে যেতে পারে তাহলে বড় একটা উপহার হবে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে। এজন্য আমাদের বেতনও কাটা হয়েছে। ’
ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর সব ক্রিকেটীয় দেশ আইসিসি’র বর্তমান রাজস্ব নীতির কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন হোল্ডার। তার মতে, ক্রিকেটবিশ্বের শীর্ষ তিন ধনী দেশকে আইসিসি’র রাজস্ব ভাগাভাগিতে বাড়তি সুবিধা দেওয়া বন্ধ না করলে খুব শিগগিরই এমন দিন আসবে যখন ছোট ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা অনেক কমে যাবে।
হোল্ডার বলেন, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অর্থ ব্যবস্থাপনার পার্থক্য অনেক বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইংল্যান্ড (আইসিসির রাজস্বের) বড় একটা ভাগ পায়, অস্ট্রেলিয়াও তাই এবং ভারত তো পাওয়ার হাউজ। শীর্ষ তিনের বাইরে, বাকিরা ভুগছে। আমরা আমাদের ক্রিকেটে বিনিয়োগ করতে হিমশিম খাচ্ছি। অবশ্যই (রাজস্ব বণ্টন) এমন একটা বিষয় যেটার দিকে ক্ষমতাবানদের নজর দিতে হবে। যদি শিগগিরই কিছু না করা যায়, তাহলে আমাদের মতো কথিত ছোট দেশগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা কঠিন হয়ে যাবে। ’
২০১৪ সালে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই), ইসিবি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) মিলে আইসিসি’র রাজস্ব বণ্টন ব্যবস্থায় ‘তিন মোড়ল’ প্রথা চালু করে। ২০১৭ সালে খোদ আইসিসি এই প্রথার ইতি টানার পরিকল্পনা হাতে নেয়। কিন্তু এখনও সেই মডেল চালু আছে, যাতে ২০১৬-২০২৩ বর্ষচক্রের মধ্যে আইসিসি’র মোট রাজস্বের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে বিসিসিআই, ইসিবি নেবে ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ ৬টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ মিলিয়ে এর চেয়েও কম অর্থ পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
এমএইচএম