আট বছর ধরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বিরাট কোহলি। কিন্তু একবারও দলকে ট্রফি জেতাতে পারেননি।
এবারের আইপিএলে ১৫ ম্যাচ খেলে ৪৬৬ রান করেছেন কোহলি। কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট (১২১.৩৫) ব্যাঙ্গালুরুর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে ব্যাটিংয়ের চেয়ে তার নেতৃত্ব নিয়েই বেশি সমালোচনা হয়েছে। যে দল কিনা প্রথম ১০ ম্যাচের ৭টিতেই জয় পেয়েছিল, সেই দল আবার সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই হার দেখেছে, যার শেষটি তাদের প্লে-অফ থেকে বিদায় করে দিয়েছে।
কোহলির নেতৃত্বে এই নিয়ে তিনবার প্লে-অফে খেলার সুযোগ পেয়েছিল ব্যাঙ্গালুরু। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন কোহলিরা। এর মধ্যে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে তার দল ছিল পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। ২০১৮ সালে ষষ্ঠ। স্বাভাবিকভাবেই কোহলির নেতৃত্বের সামর্থ্য এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে।
শুক্রবার হায়দ্রাবাদের কাছে ৬ উইকেটে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু। ওপেনিংয়ে নেমে ৭ বলে ৬ রান করেছেন কোহলি। অ্যারন ফিঞ্চ (৩২) ও এবি ডি ভিলিয়ার্স (৫৬) ছাড়া দলটির আর কেউই বলার মতো রান পাননি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যাঙ্গালুরুর খেলোয়াড়দের স্ট্রাইক রেট। ডি ভিলিয়ার্স (১৩০.২৩) ছাড়া বাকিদের স্ট্রাইক রেট মোটেও টি-টোয়েন্টিসুলভ ছিল না। পুরো ইনিংসে এসেছে মাত্র এক ছক্কা।
দলকে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ কোহলিকে সরিয়ে ব্যাঙ্গালুরুকে নতুন অধিনায়ক নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেই। এর মধ্যে জাতীয় দলে তার একসময়ের সতীর্থ গৌতম গম্ভীর তো রীতিমতো তুলোধুনা করেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে দু'বার আইপিএলের শিরোপা জেতা গম্ভীর বলেন, 'আট বছর অনেক দীর্ঘ সময়। দেখুন অশ্বিনের (রবীচন্দ্রন) ক্ষেত্রে কি হয়েছে। দুই বছর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের নেতৃত্ব দিয়ে সফল না হওয়ায় সরিয়ে দেওয়া হলো তাকে। '
গম্ভীরের মতে, দলের পরাজয়ের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত কোহলির। এজন্য এমনকি এমএস ধোনি এবং রোহিত শর্মার উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, 'ধোনি এবং রোহিত শর্মার দিকেই দেখুন। ধোনি ৩টি (আইপিএল) শিরোপা জিতেছে, রোহিত জিতেছে ৪টি। এজন্যই তারা এত দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমি নিশ্চিত রোহিত যদি ৮ বছর শিরোপাশূন্য থাকতো, তাহলে তাকেও সরিয়ে দিত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। নিয়ম সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত। '
গম্ভীর আরও বলেন, 'দায় নেওয়ার প্রবণতা ওপর থেকেই নেওয়া উচিত। নেতার কাছ থেকেই আসা উচিত, স্টাফ কিংবা কর্মকর্তাদের দিক থেকে নয়। তুমি নেতা, তুমি অধিনায়ক। সাফল্যের কৃতিত্ব যেমন তোমার, ব্যর্থতার দায়ও তোমাকেই নিতে হবে। আট বছর অনেক লম্বা সময়। কোহলি তো অনভিজ্ঞ নয়। সে ভারতের অধিনায়ক, সে দলেই খেলে সেই দলেরই অধিনায়ক হয়। কিন্তু তোমাকে ফলাফল দেখাতে হবে। খেলার সর্বশেষ কথা সাফল্য। '
গম্ভীরের মতে, এবারের মৌসুমে প্লে-অফে খেলার যোগ্যতাও ছিল না ব্যাঙ্গালুরুর। বরং ভাগ্যগুণে সুযোগ পেয়েছে আরসিবি। নেট রান রেটের ব্যবধানের কারণে কলকাতাকে পেছনে ফেলে প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছিল দলটি। সেদিক থেকে বলতে গেলে গম্ভীর ভুল কিছু বলেননি।
এদিকে কোহলির নেতৃত্বের সমালোচনা করে তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি বদলাতে হলে অধিনায়ক বদলাতে হবে। কিন্তু কোহলি নিজে থেকেই সরে দাঁড়াবে এমনটা আমি আশা করি না। কাজটা মালিকপক্ষকেই করতে হবে। '
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস