ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টেস্টে পেসারদের ভালো করতে হলে নিয়মানুবর্তিতা জরুরি

 রিফাত আনজুম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
টেস্টে পেসারদের ভালো করতে হলে নিয়মানুবর্তিতা জরুরি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত

আগামী বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ক্যারীবিয়দের বিপক্ষে দুটি টেস্ট রয়েছে এই সিরিজে।

তবে সাদা পোশাকে জিততে হলে মানসিকভাবে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

স্পিন এবং পেস বোলিং বিভাগকে একসঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে। তবে টাইগারদের টেস্ট পরিসংখ্যানটা ঘাটলে দেখা যাবে পেসারদের চেয়ে স্পিনাররাই এগিয়ে আছে। আর টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের ব্যর্থতার গল্পই বেশি চোখে পড়ে।

একটি পরিসংখ্যান ঘাটলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। টেস্টে বাংলাদেশের পেস বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন। মাশরাফি মৌখিকভাবে না বললেও টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগেই। ২০০৯ সালে শেষ টেস্ট খেলেছেন। অর্থাৎ এই ১১ বছরে কোনো পেসারই মাশরাফিকে টপকাতে পারেনি। টেস্টে পেসাররা ধারাবাহিক হতে পারেনি। ফলে স্পিনারদের ওপরই আস্থা রাখতে হয়েছে।

বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি টেস্ট জিতেছে তাতে স্পিনারদের অবদান বেশি। টেস্টে যে কয়েকবার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন বোলরাররা তাতে মাত্র তিনজন পেসারের নাম রয়েছে। শাহাদাত হোসেন, রুবেল হোসেন ও রবিউল ইসলাম, এই তিনজন পেসারের রয়েছে পাঁচ উইকেট। তাও রবিউল সেই সাত বছর আগে ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষবার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন। এই পরিসংখ্যানগুলোই বলে দেয় টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের করুণ অবস্থা।

টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের এমন অবস্থা কেন ? দীর্ঘ পরিসরের এই ক্রিকেটে পেসারদের কোনো ভবিষ্যৎ আছে কিনা সেটাও যেন অদৃশ্য। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত মনে করেন অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। পাশাপাশি বেশি বেশি ম্যাচ না খেলা আর টেস্ট খেলার মতো ফিটনেস না থাকার কারণে টেস্টে পেসাররা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে না। বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি একথা জানিয়েছেন।

শান্ত বলেন, 'সবচেয়ে বড় জিনিস হল টেস্টের জন্য অভিজ্ঞতা লাগে, ৫ দিন খেলার জন্য যে ফিটনেসটা দরকার সেই ফিটনেস লাগবে। আর সেটার জন্য আমাদের আসলে আগে বেশি বেশি ক্রিকেট খেলতে হবে। তাহলে একটা পেস বোলার বুঝতে পারবে যে টেস্টে কি ধরনের বোলিং করতে হয়। কোন সময় কোন বল করা দরকার। তখন বোঝা যায় যে আসলে একটা বোলারের কতদূর তার সামর্থ্য আছে বোলিং করার। আমার মনে হয় টেস্টে ভালো করতে হলে লংগার ভার্সনে ক্রিকেটগুলো আরো বেশি করে খেলতে হবে। '

আমাদের দেশের পেসারদের টেস্ট খেলার মতো ফিটনেস নেই বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার। যার ফলে টেস্ট উপযোগী বোলার পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ ভালো করতে পারছে। যারাও বা আসছে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যাচ্ছে কিংবা পারফম্যান্স ধরে রাখতে পারছে না। তাই টেস্ট ম্যাচের ফিটনেস ধরে রাখতে হলে পেস বোলারদের নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর এই বিষয়টা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই করতে হবে। বোর্ড কখনোই একা এটা পারবে না।

তিনি বলেন, 'পেস বোলারদের যে ধরনের ফিটনেস দরকার বা যে ধরনের ডায়েট দরকার সেটা আমরা (পেসাররা) সঠিকভাবে করি না। যার জন্য আমাদের পেস বোলাররা আসছে ভালো করছে, কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারছে না। হয় ইনজুরিতে পড়ে যাচ্ছে, না হয় পারফর্ম খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এর একটাই কারণ আমাদের পেস বোলারদের অবশ্যই ডিসিপ্লিন লাইফ লিড করতে হবে এবং ফিট থাকতে হবে। এ জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো করতে হবে। এটা যদি তারা করতে পারে লংগার ভার্সনে ক্রিকেটটা যদি বেশি খেলতে পারে তাহলে অবশ্যই পেস বোলারদের মান বাড়বে এবং ভালো বোলিং করতে পারবে। '

অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে বলেই পেসাররা টেস্ট কিভাবে বল করতে হয় সেই বিষয়টা বুঝতেই পারেনি। যার ফলে টেস্টে পেস বোলারদের সাফল্য নেই। তবে দেশের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে পেস বোলারদের বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, তাই পেসারদের মানসিকভাবে শক্ত হওয়া প্রয়োজন।

শান্ত বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় টেস্টের জন্য আমরা সেভাবে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। পেস বোলিং কিভাবে করতে হবে সেটা এখনো ধরতে পারিনি। আর একটা ভালো জিনিস হল যে পেস বোলার ভালো বল করছে। পেস বোলারদের মানসিকভাবে আরো শক্ত হতে হবে। অবশ্যই ডিসিপ্লিন লাইফ লিড করতে হবে তাদের ফিটনেসটা সঠিকভাবে ধরে রাখতে হবে। অনেক কিছু সেক্রিফাইস করতে হবে আমাদের পেস বোলারদের। '

করোনা দীর্ঘ বিরতির পর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ আয়োজন করেছিল বোর্ড। দুটি টুর্নামেন্টই দেশিয় ক্রিকেটার খেলেছেন। জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার মনে করেন এই ধরনের টুর্নামেন্ট বেশি বেশি আয়োজন করলে শুধু ভালো বোলাররা না ব্যাটসম্যান, স্পিনারও বের হয়ে আসবে। তবে বোলারদের ভালো করা ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।

শান্ত বলেন, 'এটা বাংলাদেশ টিমের জন্য ভালো। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো। এছাড়া বোলাররা ভালো করছে এটা দেখে তরুণ পেসাররা উৎসাহিত হবে। সবচেয়ে বড় জিনিস হল এরকম টুর্নামেন্ট যদি আরো কয়েকটা হয় শুধু বোলার না, ব্যাটসম্যান, স্পিনার বের হয়ে আসবে। তবে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বোলাররা ভালো করেছে। সুবিধাটা বেশি কাজে লাগিয়েছে, এটা একটা ভালো সাইন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটা বিশাল কাজে দেবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। '

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
আরএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।