দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিলেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস। আরও কিছুদিন খেলতে পারলে ক্যারিয়ার হয়তো আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো।
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার সংলগ্ন ১নং প্লাজায় 'পিচ ফাউন্ডেশন' এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেন আব্দুর রাজ্জাক ও নাফিস। তবে এখান থেকে শুরু হচ্ছে তাদের নতুন পথচলা। রাজ্জাক যোগ দিচ্ছেন জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে। আর নাফিস যুক্ত হচ্ছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, এমপি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রীড়া সংগঠক। অনুষ্ঠানে সদ্য সাবেক দুই ক্রিকেটারকা বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বিদায় বলার পর 'সাবেক' হয়ে যাওয়ার অনুভূতি নিয়ে নাফিস বলেন, '(অনুভূতি প্রকাশ করা) একটু কঠিন। গতকাল থেকেই চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। আমি খেলব না, এটা ভেবে খুব কষ্ট লাগছে না, তবে অনুভূতিটা অদ্ভুত। আমি একটা স্কুলে পড়লাম, স্কুল ছেড়ে দিচ্ছি- ওরকম অনুভূতি। খুবই অদ্ভুত। '
সিদ্ধান্তটা যে হুট করে নেননি তা-ও জানালেন নাফিস, 'আমি সবসময় সব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিয়েছি, পরিস্কার করে। আমি চিন্তা করেছি যখন একজন খেলোয়াড় হিসেবে আর অবদান রাখতে পারব না, তবে সবসময় বলেছি আমি ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকব। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময়। কারণ খেলে যতটুকু অবদান রাখতে পারব তারচেয়ে বেশি এখন পারব। এজন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়নি। '
ক্যারিয়ার আরেকটু দীর্ঘ হলো না বলে কোনো অতৃপ্তি নেই নাফিসের। বললেন, 'অহংকার করে বলছি না, আমি ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমান। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি আমার সেরা যেটা ছিল আল্লাহ তাই দিয়েছেন। তাই আমার কোনো অতৃপ্তি নেই। '
জাতীয় দলে খেলেছেন এমন অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলার সুযোগ পাননি। কিন্তু নিজে সেই সুযোগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়লো নাফিসের মুখ থেকে, 'আমাদের চেয়েও বড় অনেক ক্রিকেটারের এই সৌভাগ্য হয়নি। বিসিবি ও কোয়াবকে ধন্যবাদ এরকম একটা আয়োজনের জন্য। যদি করোনা না থাকত আমরা খেলে বিদায় নিতে পারতাম। তারপরও আমাদের জন্য যতটুক করেছে যতটুকু করেছে আমরা কৃতজ্ঞ। '
ক্যারিয়ারের সারমর্ম নিয়ে নাফিস বলেন, 'ক্যারিয়ারের সারমর্ম আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা। আমি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরেকটু বেশি খেলতাম হয়ত পরিসংখ্যান আরও ভালো হতো। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তৃপ্তি বিচার করি না। বাংলাদেশ মানুষ ও মিডিয়ার যে ভালোবাসা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য সম্ভব না। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অতৃপ্তি নেই। '
বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং নতুন ভূমিকা নিয়ে নাফিস বলেন, 'বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যুক্ত হতে চলেছি ইনশাআল্লাহ। যোগ দেওয়ার পর কাজের পরিধি, কতটুকু করতে পারব বা পারব না সেটা তখন বুঝব। এখন এ ব্যাপারে মন্তব্য করার সঠিক সময় নয়। '
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছেন নাফিস। এসব সাফল্যের জন্য পরিবারের বড় ভূমিকা আছে বলে জানালেন তিনি, 'আমার বয়স যখন ১০, আমি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি এবং আমার আব্বা-আম্মা আমাকে সাপোর্ট করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এটা তো শুরু... কিন্তু পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে সবচেয়ে বড় অবদান আমার স্ত্রীর। কারণ আমি খুব অল্প বয়সে বিয়ে করে ফেলি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে করেছিলাম। এরপর অনেক উত্থান-পতন ছিল। খেলোয়াড়দের সফলতা অনেকে দেখে, ব্যর্থতা দেখে। কিন্তু পরিবারের কষ্টটা কেউ দেখে না। কত কষ্ট করতে হয়, কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিশটা বছর খেলেছি, এই বিশ বছরে একবারও টানা বিশদিন বাসায় সময় দিতে পারিনি। পরিবারের অবদানেই এতদূর আসা সম্ভব। '
জাতীয় দলের জার্সিতে ২৪ টেস্ট খেলে ১২৬৭ রান করেছেন নাফিস। এই ফরম্যাটে একটি সেঞ্চুরিও আছে তার। ৭৫ ওয়ানডে খেলে তিনি করেছেন ২২০১ রান, এই ফরম্যাটে ৪টি সেঞ্চুরি আছে তার। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডেতে এক হাজারের বেশি রানের কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ৮ হাজারের বেশি এবং লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি রান করেছেন তিনি। ৬০টি ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি খেলে প্রায় ১২শ রানও করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
এমএইচএম/ইউবি