ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

লিটনের সেঞ্চুরির পর সাকিবের ৫ উইকেট, বাংলাদেশের বিশাল জয়

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২১
লিটনের সেঞ্চুরির পর সাকিবের ৫ উইকেট, বাংলাদেশের বিশাল জয়

লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে বিশাল সংগ্রহ পাওয়ার পর বল হাতে ঘূর্ণিঝড় তুললেন সাকিব আল হাসান। এই দুই টাইগারের ঝলকে জিম্বাবুয়েকে বিশাল ব্যবধানে হারালো বাংলাদেশ।

শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৫৫ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।

শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে ১২১ থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস।

রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনে বিপদে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪ রানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ফিরে যান মারুমা (০)। ১৩ রানে ওয়েসলি মাধভেরেকে (৯) ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর আর অভিষিক্ত ডিওন মেয়ার্স হাল ধরার চেষ্টা করেন। তবে ১৮ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে ৩৬ রানেই জুটির অবসান ঘটান শরিফুল।  

ব্যাট হাতে ব্যর্থ সাকিব জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক তথা সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টেইলরকে (২৪) তাসকিনের তালুবন্দি করেন। এর মাধ্যমে তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হয়ে যান। এছাড়া রায়ান বার্লকেও (৬) আফিফের তালুবন্দি করেছেন সাকিব। ১০৫ রানে জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেটের পতন হয়। বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়া লুক জঙওয়ে (০) রান-আউট হয়ে যান। এরপর মুজরাবানিকে (২) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় শিকার ধরেন সাকিব।

দ্রুত উইকেট পতনের মাঝেই ৪৭ বলে ঝড়ো ফিফটি তুলে নেন চাকাভা। সেই চাকাভাকে ৫৪ রানে ফিরিয়ে চার নম্বর শিকার ধরেন সাকিব। তার পঞ্চম শিকার রিচার্ড এনগ্রাভা (০)। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়েছিলেন টিমিসেন মারুমা। তাঁর পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব হয়নি। তাই ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানে থামে জিম্বাবুয়ে।  

বল হাতে ৯.৫ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব। এটা তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ৫ উইকেট।

এর আগে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে কোনো রানই করতে পারেননি দুই ওপেনার তামিম ও লিটন। এরপর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই জিম্বাবুয়ের পেসার মুজারাবানির বলে কাট করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক চাকাভার গ্লাভসে জমা হয়। ৭ বল খেলে কোনো রান করার আগেই বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশি ওপেনারকে।

এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মোট ৩৪ বার শূন্য রানে বিদায় নিলেন তামিম। যা বাংলাদেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ। তার পরেই অবস্থান মাশরাফির (৩৩)। এতদিন মাশরাফির সঙ্গে রেকর্ডটি ভাগাভাগি করেছিলেন তামিম।  

তামিম ও মাশরাফির পরে অর্থাৎ তালিকার তৃতীয় স্থানে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের জার্সিতে মোট ৩১ বার শূন্য রানেই বিদায় নিয়েছেন। এরপর আছেন যথাক্রমে মুশফিকুর রহিম (২৬) ও হাবিবুল বাশার (২৫)।

তামিম বিদায় নেওয়ার পর তিনে নামা সাকিব ক্রিজে এসেই ব্রাউন্ডারি হাঁকান। রানের চাকা সচল রাখার দিকেও দৃষ্টি দেন তিনি। অন্যদিকে লিটন তখনও ধীরেসুস্থে খেলার দিকেই মনোযোগী। কিন্তু মুজারাবানির করা নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে অফসাইডের বাইরের শর্ট বলে কাট করতে গিয়ে বার্লের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় এই বাঁহাতির ২৫ বলে ৩ চারে সাজানো ১৯ রানের ইনিংস।

সাকিব বিদায় নেওয়ার পর মিঠুন আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেন। দলের রানও ৫০ ছাড়ায়। কিন্তু তিনিও কাট করতে গিয়েই ১৯ বলে ৪ চারে ১৯ রানের ইনিংস খেলে চাতারার শিকার হন। চাতারার লেন্থ বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চাকাভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন।

৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের রানের চাকা সচল থাকে লিটন ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে ২৫ রান করে বাদ পড়েছিলেন লিটন। দীর্ঘদিন পর ওপেনিংয়ে ফিরেই ধীরেসুস্থে খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন লিটন, খেলেন ৭৮ বল।

লিটনের সঙ্গে ৯৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ঘুরের দাঁড়ানোর পথ দেখাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ছুটছিলেন ফিফটির পথেও। কিন্তু লুক জঙওয়ের লাফিয়ে ওঠা স্লোয়ারে পুল শট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চাকাভার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৫২ বলে ৩৩ রান।

অন্যদিকে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর ইনিংসটাকে আর লম্বা করতে পারেননি লিটন। রিচার্ড এনগাভারার বলে পুল শট খেলেছিলেন খেলতে গিয়ে ডিপ-ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে থাকা ওয়েলিংটন মাসাকাদজার হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ১০২ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ১১০ বলে ৮ চারে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটা তার তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি।

লিটন ফিরে গেলে মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ মিলে ৫৮ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। দুজনে মিলে রানও তুলছিলেন দ্রুতই। কিন্তু জঙওয়ের করা ৪৯তম ওভারে পর পর দুই বলে বিদায় নেন মিরাজ (২৬) ও আফিফ (৪৫)। এরপরের বলে তাসকিন আহমেদ (১) রান আউট হলে হ্যাটট্রিকবঞ্চিত হন জঙওয়ে। শেষ ওভারের সবগুলো বল একাই খেলেন সাইফউদ্দিন। এক ওয়াইড ছাড়া বাকি ৮ রান আসে সাইফের ব্যাট থেকেই।

ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন লিটন দাস।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২১
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।