হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার আফগানিস্তানে একটি প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়। গত আগস্টের মাঝামাঝিতে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এটাই দেশটিতে প্রথম কোনো বড় ক্রিকেটীয় আয়োজন।
প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন শীর্ষ আফগান ক্রিকেট তারকারা। এসময় ম্যাচের ভেন্যু কাবুল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্টেডিয়ামের অদূরে অবস্থিত কাবুল বিমানবন্দর, যেখানে গত সপ্তাহে দেশত্যাগের জন্য মরিয়া হাজারো মানুষের ওপর এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১০০-এর বেশি মৃত্যু ও শত শত মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তালেবানের অধীনে আয়োজিত ‘ইন্ডিপিন্ডেন্স ট্রফি’ নামক ওই ম্যাচে খেলেছেন গুলবাদিন নাঈম, রহমত শাত এবং হাসমতুল্লাহ শহীদির মতো তারকা ক্রিকেটাররা। ম্যাচ চলাকালীন পুরো সময়জুড়ে স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডে আফগানিস্তান ও তালেবানের পতাকা পাশাপাশি উড়তে দেখা গেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই আয়োজনকে তালেবান নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার কাজে ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আফগান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) বারবার দাবি করেছে, তালেবান ক্রিকেট খেলার পক্ষে। সম্প্রতি দেশটির জাতীয় দল ও বয়সভিত্তিক দলগুলোকে খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দিয়েছে তালেবান। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের শেষদিকে বাংলাদেশ সফরে আসছে আফগান অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
তবে প্রদর্শনী ম্যাচে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে তালেবানি যোদ্ধাদের বন্দুক হাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে দেখা গেছে। আর মাঠে মুখোমুখি হয়েছে ‘পিস ডিফেন্ডার’ এবং ‘পিস হিরোস’ নামে দুই দল। এই বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে এসিবির প্রধান নির্বাহী হামিদ শিনওয়ারি বলেন, ‘(দলের) নামগুলো দেখলেই বোঝা যায়, ম্যাচটা শান্তি স্থাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ চায় দেশে শান্তিতে বসবাস করতে এবং এমন সুযোগ উপভোগ করতে। ’
ক্রিকেট নিয়ে এখনও বড় স্বপ্ন দেখছে এসিবি। হামিদ যেমন বললেন, ‘খেলাটা দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং আনন্দ বয়ে আনতে পারে। এটা দেশের অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ আয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাহলে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগ নয় কেন? আমাদের বিশাল এক তরুণ প্রজন্ম আছে। তরুণদের ওপর বিনিয়োগ মানে দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। ’
গত কয়েক বছরে যুদ্ধ-বিশ্বস্ত আফগানিস্তানে ক্রিকেট অল্পকিছু আনন্দদায়ী উপলক্ষের একটি। নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে থাকা আফগান শরণার্থীদের মাধ্যমে দেশটির প্রথম ক্রিকেট দল গঠিত হয়েছিল। পরে তা মূল দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তালেবানের প্রথম শাসনামলে ১৯৯৭ সালে আফগান ক্রিকেট ফেডারশন (বর্তমান এসিবি) গঠিত হয়। পরে তারা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সদস্যও হয়।
গত এক যুগে আফগান ক্রিকেটের অভূতপূর্ব উত্থান ঘটে। দেশটি আইসিসির পূর্ণ সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাসও পেয়ে যায়। আর এখন তারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির শীর্ষ দশ দলের তালিকায় অবস্থান করছে। তাদের উন্নতি কত দ্রুত হয়েছে, তা আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের সরাসরি সুযোগ পাওয়া দেখলেই যায়। র্যাংকিংয়ের শীর্ষ আটে আছে তারা, ফলে বাছাইপর্বে খেলতে হবে না তাদের। অথচ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ কিংবা আয়ারল্যান্ডের মতো পুরনো ও অভিজ্ঞ দলগুলোও সরাসরি খেলার সুযোগ পায়নি। শুধু কি তাই, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি এবং মুজিব উর রহমানরা তো বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর জন্য রীতিমত ‘হটকেক। ’
এসিবির প্রধান নির্বাহী হামিদ শিনওয়ারি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, তালেবান ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা করবে। এমনকি তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার আগে নিজ দেশের জনগণের জন্য বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাওয়া রশিদ খানের ব্যাপারেও নাকি তারা ইতিবাচক এবং তালেবানের নেতারা নাকি রশিদ-নবীদের ভক্ত।
তবে ছেলেদের ক্রিকেট নিয়ে তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে যতটা স্বস্তির খবর শোনা যাচ্ছে, নারী ক্রিকেট নিয়ে ঠিক ততটাই অনিশ্চয়তা ভর করেছে। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগান নারী ক্রিকেটারদের অনেকে হয় দেশ ছেড়েছেন, অথবা নিজেদের ক্রিকেট সরঞ্জাম লুকিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলেছেন।
এএফপির এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কাবুলের ওই প্রদর্শনী ম্যাচে কোনো নারী দর্শকের উপস্থিতি ছিল না। তবে শিনওয়ারি দাবি করেছেন, নারীদের নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তবে দেশটির নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করলেন, ‘আমাদের উত্তরসূরিরা হয়তো আমার চেয়ে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। বর্তমানে, নারী ক্রিকেটার ও স্টাফরা বিপদে আছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এমএইচএম