হারলেই বিদায় নিতে হবে টুর্নামেন্ট থেকে। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে ব্যাটে-বলে সুনীল নারাইনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভর করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে হারিয়ে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার রাতে এলিমিনেটর ম্যাচে কোহলিবাহিনীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কলকাতা। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কলকাতার প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটালস।
মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ফিল্ডিংয়ে নামে কলকাতা। সাকিবের আঁটসাঁট বোলিং আর সুনীল নারাইনের ঘূর্ণিতে ব্যাঙ্গালুরু নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৮ রানের বেশি করতে পারেনি। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ২ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় মরগ্যানবাহিনী।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে কলকাতার উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪১ রান। ওপেনার শুভমান গিল করেন ১৮ বলে ২৯ রান। তিনে নামা রাহুল ত্রিপাঠী মাত্র ৬ রান করে বিদায় নেন। আরেক ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ার ধীরেসুস্থে খেলার পথ বেছে নিলেও ৩০ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে ড্রেসিং রুমে ফেরেন। দলীয় ৭৯ রানে ৩ উইকেট হারালেও কলকাতা ততক্ষণে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে।
বল হাতে ঘূর্ণি জাদু দেখানোর পরে ব্যাট হাতেও ঝড় তোলেন নারাইন। ড্যান ক্রিস্টিয়ানের ওভারে মুখোমুখি হওয়া প্রথম ৩ বলেই (মাঝে একটি ওয়াইড) বিশাল ৩টি ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের মোড় পুরোপুরি কলকাতার দিকে ঘুরিয়ে দেন তিনি। বলের বিপরীতে লক্ষ্য তখন অনেকটাই কমে আসে।
একসময় ৪২ বলে মাত্র ৩২ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় কলকাতার সামনে। এদিকে নারাইনকে রেখে নীতিশ রানা (২৩) বিদায় নিলে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় ব্যাঙ্গালুরু। শেষ ৫ ওভারে কলকাতার দরকার ছিল ২৭ রান। রানা বিদায় নিলে সাকিবকে না নামিয়ে দীনেশ কার্তিককে পাঠায় কলকাতা। ১৭তম ওভারে ব্যাঙ্গালুরুর পেসার হার্শাল প্যাটেলের বলে ক্যাচ তুলে দেন নারাইন। কিন্তু সহজ ক্যাচ মিস করেন দেবদূত পাড়িক্কাল।
শেষ ৩ ওভারে কলকাতার লক্ষ্য ছিল ১৫ রান। কিন্তু এমন সময় বড় ধাক্কা খায় কলকাতা। মোহাম্মদ সিরাজের করা ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা নারাইন। বিদায়ের আগে ১৫ বলে ৩ ছক্কায় ২৬ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। একই ওভারে কার্তিককেও (১০) বিদায় করেন সিরাজ। ফলে ক্রিজে আসেন সাকিব। সিরাজের শেষ ওভারে আসে মাত্র ৩ রান। ফলে শেষ ১২ বলে ১২ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় কলকাতার সামনে।
জর্জ গার্টনের করা ১৯তম ওভারে আসে মাত্র ৫ রান। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই স্কুপ শটে শর্ট ফাইন লেগে ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক বদলান তিনি। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্কোর সমান করেন মরগ্যান। চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব। ৬ বলে ৯ রানে সাকিব এবং ৫ রানে অপরাজিত থাকেন মরগ্যান।
বল হাতে ব্যাঙ্গালুরুর স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল মাত্র ১৬ রান খরচে নেন ২ উইকেট। হার্শাল প্যাটেল ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচে নেন ২ উইকেট। পেসার সিরাজও নিয়েছেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিয়ে সিরাজ আইপিএলে নিজের ৫০তম উইকেটেরও দেখা পেয়েছেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ব্যাঙ্গালুরুর শুরুটা দারুণ হয়েছিল। ওপেনিং জুটিতে আসে ৪৯ রান। সাকিবকে দিয়েই বোলিং ওপেন করান নাইট অধিনায়ক ইয়ান মরগ্যান। প্রথম ওভারে রান দেন মাত্র ৭। পাওয়ার প্লের পর আবার বোলিংয়ে এসে দুই ওভারে ৪ রান করে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে নিজের কোটার শেষ ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বাউন্ডারি হজম করে দেন ৯ রান। ৪ ওভারে সাকিব ২৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।
তবে বল হাতে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠেন ক্যারিবীয় স্পিন তারকা নারাইন। ১০ম ওভারে বোলিংয়ে এসে চতুর্থ বলে তিনি ফিরিয়ে দেন কে এস ভরতকে (৯)। এরপর একে একে তুলে নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৫), এবি ডি ভিলিয়ার্স (১১) এবং ৩৩ বলে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৯ রান করা ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। এক কোহলি ছাড়া আর কেউ ত্রিশের ঘরেই যেতে পারেননি।
৪ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে নারাইনের শিকার ৪ উইকেট। ৩০ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন কিউই পেসার লোকি ফার্গুসন।
আগামী বুধবার (১৩ অক্টোবর) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দিল্লির মুখোমুখি হবে কলকাতা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২১
এমএইচএম