ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ক্রিকেট ঈশ্বর শচীনের জন্মদিন

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
ক্রিকেট ঈশ্বর শচীনের জন্মদিন

ক্রিকেট ইতিহাসে শচীন টেন্ডুলকারের মতো জনপ্রিয়তা আর কোনো ক্রিকেটার যে পাননি, এতে অন্তত কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। অজস্র রেকর্ড আর অবিশ্বাস্য সব কীর্তি তাকে বানিয়েছে সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা।

তার ক্রিকেটীয় জাদুর আবেশে পুরো একটা প্রজন্ম মুগ্ধ হয়েছে। সেই মুগ্ধতা এতটাই যে, তাকে ক্রিকেট ভক্তরা নাম দিয়েছেন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’।  

আজ এই জীবন্ত কিংবদন্তির ৪৯তম জন্মদিন। ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) মহারাষ্ট্রে বিখ্যাত টেন্ডুলকার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ‘আধুনিক ক্রিকেটের ডন’।

শচীন ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত খেলেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২০০টি টেস্ট ও ৪৬৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ (ওডিআই) রয়েছে তার ঝুঁলিতে। ২৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছেন টি-টোয়েন্টিও। তবে, জাতীয় দলের জার্সিতে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেছেন।  

ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৩০ হাজারের বেশি রান এবং ২০০ এর বেশি উইকেট রয়েছে তার ঝুঁলিতে। ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর করাচীতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব।  

টেস্টে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৯২১ রান, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ রান, সর্বোচ্চ ২০০ টেস্ট ও ৪৬৩ ওয়ানডে ম্যাচের রেকর্ড, টেস্টে সর্বোচ্চ ৫১ সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরি, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৩৫৭ রান, শচীনের এ রেকর্ডগুলো অমর হয়ে থাকবে বলে মত ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।

জন্মদিনে শচীনের জীবনের জানা-অজানা কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

০১। ‘লিটল মাস্টার’র পিতা রমেশ টেন্ডুলকার ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণের ভক্ত ছিলেন। তাই ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল জন্মের পর নাম রাখা শচীন টেন্ডুলকার।

০২। শচীন শুরুতে ফাস্ট বোলার হতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি ১৯৮৭ সালে অজি ফাস্ট বোলিং গ্রেট ডেনিস লিলি’র এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে  পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। কিন্তু লিলি তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এই কাজ করে ক্রিকেটের ‘উপকার’ করেছেন বলে দাবি করেন লিলি। পরে অবশ্য টেস্টে ৪৬ এবং ওয়ানডেতে ১৫৪ উইকেটের মালিক হন শচীন। তবে ফাস্ট বোলার হিসেবে নয় অবশ্যই।

০৩। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে বল বয় ছিলেন শচীন।

০৪। নিজের প্রথম দুই ওয়ানডে ম্যাচেই শূন্য রানে বিদায় নেন শচীন। মজার ব্যাপার হলো, দু’বারই মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই।

০৫। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের ভারত সফরের এক ম্যাচে মধ্যাহ্নের সময় মাঠ ছাড়েন জাভেদ মিঁয়াদাদ ও আব্দুল কাদের। এরপর বদলি হিসেবে পাকিস্তান দলের হয়ে ফিল্ডিংয়ে নামেন শচীন। নিজের আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং মাই ওয়ে’তে শচীন লিখেছেন, ‘আমি জানি না ইমরান খান (সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) মনে করতে পারবেন কি না কিংবা তার কোনো ধারণা আছে কি না যে আমি একবার পাকিস্তানের হয়ে ফিল্ডিং করেছিলাম। ’ 

০৬। থার্ড আম্পায়ার কর্তৃক রান আউট ঘোষিত হওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক ব্যাটসম্যান শচীন। ১৯৯২ সালে এক টেস্ট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস রান আউটের আবেদন করলে থার্ড আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন।

০৭। মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘সেরা জুনিয়র ক্রিকেটার’ নির্বাচিত না হওয়ায় বিমর্ষ শচীনকে নিজের প্যাড জোড়া উপহার দিয়েছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর করাচিতে নিজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে এই প্যাডজোড়া পরেই মাঠে নেমেছিলেন তিনি।

০৮। রঞ্জি টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও নিজের পড়াশোনার ক্ষতি হতে দেননি শচীন। রঞ্জি দলের সফরের সময় তার ব্যাগে সবসময় পাঠ্য বই থাকত। এমনকি এসএসসি বোর্ড পরীক্ষা আর রঞ্জি একসঙ্গে ম্যানেজ করেছেন তিনি।

০৯। ১৯৯০ সালে তরুণ শচীন প্রথম বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়ারের সঙ্গে চুক্তি করেন।  

১০। শচীন কিন্তু জন্মগতভাবে বাঁহাতি। কিন্তু ব্যাটিং-বোলিং দুটোই ডান হাতে করতেন তিনি। যদিও লেখালেখি তিনি বাঁহাতেই করেন।

১১। ১৯৯৭ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন শচীন। শুধু তাই না, প্রথম ভারতীয় হিসেবে উইজডেনের সর্বকালের সেরা একাদশেও স্থান করে নেন তিনি।

১২। শচীনের ক্যারিয়ারের অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায় ছিল ১৯৯৭ সাহারা কাপ। ওই টুর্নামেন্টে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে তার ব্যাটে ভর করে জয় পায় ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ফাইনাল এবং এটাই অধিনায়ক শচীনের প্রথম শিরোপা জয়। এজন্য তিনি নিজের কন্যার নাম রাখেন ‘সারা’।

১৩। ক্যারিয়ারে ১০০ সেঞ্চুরির মালিক শচীনকে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেতে অপেক্ষায় থাকতে হয় ৭৯তম ম্যাচ পর্যন্ত। কলম্বোয় সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজের ওই ম্যাচে তার ১৩০ বলে ১১০ রানের ইনিংসে ভর করে ৩১ রানে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।

১৪। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগেভাগে আউট হওয়ার হতাশায় বাকি সময়ের খেলা দেখেননি শচীন। মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে দ্বিতীয় ওয়ানডে শিরোপা পাইয়ে দিলেন ওই মুহূর্তে শচীন ও বীরেন্দ্র শেবাগ দলের ফিজিও’র সঙ্গে বসে ছিলেন।

১৫। ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের সহ-অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক রাহুল দ্রাবিড় পরবর্তীতে একটি গোপন তথ্য সবার সঙ্গে শেয়ার করেন, যা সবাইকে রীতিমত চমকে দেয়। কারণ, ওই বিশ্বকাপে রেকর্ড ৬৭৩ রান করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হওয়া শচীন নাকি নেটে একটা বলেরও মুখোমুখি হননি!

১৬। শচীনকে রেকর্ড ১৪বার আউট করেন সাবেক অজি ফাস্ট বোলার ব্রেট লি। যেকোনো বোলারের ক্ষেত্রেই এটাই সর্বোচ্চ।

১৭। ২০১৩ সালে অবসর নেওয়ার পর শচীনের বিখ্যাত ১০ নাম্বার জার্সি পরবর্তী ৫ বছর কেউ পরার সাহস করেনি। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে এই জার্সি নাম্বার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন শার্দুল ঠাকুর। তবে এজন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। পরে এমন কিছু যেন আর না ঘটে এজন্য শচীনের জার্সি নাম্বারকে আন-অফিসিয়ালি অবসরে পাঠিয়ে দেয় বিসিসিআই।

১৮। ২০১০ সালে শচীনকে একটি অ্যালকোহল ব্র্যান্ড তাদের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার জন্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি রুপির প্রস্তাব দেয়। শচীন সরাসরি না করে দেন। কারণ ১৬ বছর বয়সে তার বাবার কাছে তিনি এমন কিছু না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

১৯। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে শচীনকে আউট করেছিলেন অজি স্পিনার ব্র্যাড হগ। ম্যাচ শেষে ওই মুহূর্তের একটি ছবিতে শচীনের অটোগ্রাফ চান হগ। শচীন অটোগ্রাফ দেন এবং তাতে লিখে দেন, 'নেভার এগেইন (আর কখনোই নয়) হগি। ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরপর আর কখনোই আন্তর্জাতিক ম্যাচে শচীনকে আউট করতে পারেননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।