ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বেগম মুশতারী শফী মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
বেগম মুশতারী শফী মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি

চট্টগ্রাম: একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক কবি আবুল মোমেন বলেছেন, বেগম মুশতারী শফী মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অবিচল থেকেছেন।

তিনি যেমনি নিজেকে যেমন সমাজের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, তেমনি যারা মানবমুক্তির জন্য কাজ করেছে তাদের আপন করে নিয়েছেন। তিনি নিজেকে একটি আদর্শের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের ফুলকি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদজায়া, নারীনেত্রী ও উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের প্রয়াত সভাপতি বেগম মুশতারী শফীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জীবনের শত প্রতিকূলতার মাঝে নিজের সংগ্রাম ও আদর্শ থেকে তিনি বিচ্যুত হননি উল্লেখ করে কবি আবুল মোমেন বলেন, বেগম মুশতারী শফী সর্বস্তরের মানুষের জন্য লড়াই করে গেছেন। এটা একটি আদর্শিক চেতনার বন্ধন। একটি সক্রিয় চেতনার সম্পর্ক। তিনি একটি আদর্শকে লালন করতেন। সে আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। কঠিন জীবন সংগ্রামের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি তার স্বামী ও ভাইকে হারিয়েছেন, তবুও দমে যাননি। ছয় সন্তান নিয়ে গহিন অরণ্য ভেদ করে ওপার বাংলায় গেছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ক্যাম্পে আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্বাধীন দেশে ফিরে এসে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, সমাজের জন্য যুদ্ধ করেছেন, পরিবারের জন্য যুদ্ধ করেছেন। জীবনের শত প্রতিকূলতার মাঝে নিজের সংগ্রাম ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।  

অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম বলেন, বেগম মুশতারী শফী একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক বা রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হননি যা রাষ্ট্রের জন্য অপমানজনক। মুক্তিযুদ্ধে নারীরা রণাঙ্গনে যেভাবে যুদ্ধে করেছেন সেটা তিনি তাঁর কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভবিষ্যতে আর কেউ বেগম মুশতারী শফী হতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। যেখানেই অন্যায়, রাষ্ট্রবিরোধী কর্ম হয়েছে সেখানেই তিনি ছুটে গেছেন। এ মহীয়সী নারীর জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। রাষ্ট্র যা করতে পারেনি  আমাদের সেটা করতে হবে।  

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেছেন, এ পৃথিবীতে আসা-যাওয়ার মধ্যে কিছু মানুষ থাকে যারা মৃত্যুর পরেও বহমান থাকেন। তারা কালজয়ী। বেগম মুশতারী শফী এমন একজন মানুষ যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কোনায় তিনি আশ্রয় নিয়ে ফেলেছেন। যা কখনো মোছা যাবে না।  তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন।  ভালোবাসতেন বলেই মানুষের অধিকারের লড়াই-সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কলম দিয়ে মানুষের সুখ দুঃখের কথা লিখেছেন। সত্য তুলে ধরেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।  শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকলেও চলে আসতেন শোষিতের পক্ষের হয়ে কথা বলতে। উনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন ঠিক তবে দিয়ে গেছেন বিরাট দায়িত্ব।

উদীচী, চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তের সঞ্চালনায় ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সভাপতি শৈবাল চৌধুরী, পরিবারের পক্ষে বেগম মুশতারী শফীর জামাতা আবদুল্লাহ জাফর।

স্মরণসভায় বেগম মুশতারী শফীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক সংগীত পরিবেশন করেন রক্তকরবী ও উদীচীর শিল্পীরা এবং শহীদজননীর সন্তান রুমানা শফী।

আলোচনা পর্ব শেষে বেগম মুশতারী শফীর জীবন ও কর্ম নিয়ে শৈবাল চৌধুরীর পরিচালনায় 'বিস্মৃত অধ্যায়’ তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।